ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

দুই গ্রামে ১৫ কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪  

দুই গ্রামে ১৫ কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রি

দুই গ্রামে ১৫ কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রি

যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রামে শীতকালীন সবজির চারা বিক্রির ধুম পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্তের কৃষকেরা এখান থেকে চারা কিনতে আসছেন। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে সবজির চারা নিয়ে রমরমা বাণিজ্য চলে।

কৃষি বিভাগ বলছে, গ্রাম দুটিতে ৪০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ফুলকপিসহ ১২ কোটি বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। এখানকার উৎপাদিত চারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

জানা যায়, সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করেন। ৪০ বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ কোটি চারা উৎপাদন করা হয়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন সবজির বীজ বপন শুরু হয়। প্রায় দেড় মাস পর চারা বিক্রির উপযোগী হয়। প্রথম ধাপে প্রতি হাজার চারা দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে চারার দাম কমতে থাকে। বীজতলায় চার থেকে পাঁচটি ধাপে সবমিলিয়ে ১২ কোটি চারা বিক্রি করতে পারেন কৃষক। সেই হিসাবে এখানে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চারা বেচাকেনা হয়।

আব্দুলপুর গ্রামের রাস্তার দু’পাশে তাকালেই দেখা যাবে শতশত পলিথিনে ঢাকা রয়েছে সবজির বীজতলা। মূলত কুয়াশা থেকে সবজির চারা রক্ষার্থে এই পলিশেড তৈরি করেছেন কৃষকেরা। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি হাজার ফুলকপির চারা ৮শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৫শ’ থেকে ১১শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভালো দামে চারা বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা।

এ বিষয়ে আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন করেছেন। এই জমিতে ছয় মাসে চারা উৎপাদন খরচ হয় ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। যেখানে উৎপাদন হয় প্রায় ১৫ লাখ চারা।

তিনি আরো জানান, যশোরের ঝিকরগাছা, গদখালী, নাভারণ, চৌগাছা, মণিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, নড়াইল, লোহাগড়া, সাতক্ষীরা জেলার কৃষক ও সবজি চারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এখানকার উৎপাদিত চারা।

এই গ্রামের প্রথম চারা উৎপাদনকারী আরশাদ আলী মোড়ল বলেন, ৪০ বছর আগে আমিই প্রথম এই গ্রামে সবজির চারা উৎপাদন শুরু করি। আমার ভালো লাভ হওয়াতে অন্য চাষিরাও এই চারা উৎপাদন শুরু করেন। এখন অনেকেই ভালো চারা উৎপাদন করেন; ভালো চারা পায় বলে দূর-দূরান্ত থেকে চাষি ও পাইকাররা আমাদের এখানে চারা কিনতে আসে।

আব্দুলপুরের কৃষকদের উৎপাদিত এসব চারার মান ভালো অন্যদিকে দামও কম বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ মহেশপুর থেকে আসা নজরুল ইসলাম নামে এক পাইকার। তিনি বলেন, এখানে যাচাইবাছাই করে চারা কেনা যায়। এখানকার চারার মানও ভালো। কোনো চারাতেই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ফলন বাদ যায় না।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, সবজির চারা উৎপাদন করে প্রতি ছয় মাসে কৃষকরা লাভ করতে পারেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টদের সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে এই লাভের অংক দ্বিগুণ হতে পারে বলছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, মানসম্মত কপির চারা উৎপাদনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বাইরে চারা বিক্রির যে সংযোগটা সেটাও কৃষি বিভাগ করছে। এই দুটি গ্রাম থেকে আট মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চারা বেচাকেনা হয়।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়