ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আর মাত্র ৪৭ দিন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ২০ নভেম্বর ২০২৩  

আর মাত্র ৪৭ দিন

আর মাত্র ৪৭ দিন

আর মাত্র ৪৭ দিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশব্যাপী নির্বাচনের আমেজ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরুর পর তা আরও জোরালো হয়েছে। নির্বাচন হবে কি হবে না এক সময় কারও কারও মধ্যে এমন আশঙ্কা থাকলেও এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বলা চলে সারাদেশই নির্বাচনমুখী।

বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল এখনো রাজপথে আন্দোলনে থাকলেও আওয়ামী লীগসহ অর্ধশতাধিক দল নির্বাচনের মাঠে সক্রিয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সারাদেশ থেকে দলে দলে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আবার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন। এ কারণে বিএনপির নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এখন অনেকটাই ম্লান।

ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন দেশের কয়েকজন নামকরা ক্রীড়াবিদ, চলচ্চিত্র শিল্পী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। শুধু আওয়ামী লীগ থেকেই দুইদিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রায় দুই হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যান্য দল থেকেও অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। এ কারণে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিও তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে এ নির্বাচন নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আরও বেশি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং নির্বাচন হবে উৎসবমুখর পরিবেশে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপির আন্দোলন এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশী-বিদেশী মহলের চাপের কারণে একটি গুমোট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করায় ও তফসিল ঘোষণাকালে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থার আশ্বাসে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পাল্টে যায়। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা মানুষের মধ্যে অনেকেই ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে। আর আওয়ামী লীগসহ অনেক দল পুরোদমে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় হওয়ায় দ্রুত দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী চিন্তাভাবনা শুরু করে।নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মাঠে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল। এই দলগুলোর প্রার্থীসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী এখন এলাকায় গণসংযোগসহ বিভিন্নভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। তাদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরাও নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। আর যারা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে তাদের স্বজনদের মধ্যে যারা প্রবাসে অবস্থান করছেন তারাও এখন বিভিন্নভাবে নির্বাচনী প্রচারে শরিক হয়েছেন। প্রবাসীদের মধ্যে অনেকে ছুটি নিয়ে দেশে চলে আসছেন। আর যারা দেশে আসতে পারছেন না তারা বিদেশে বসেই পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। কেউ কেউ প্রার্থীদের জন্য আর্থিক সাপোর্টও দিচ্ছেন বলে জানা যায়।

দুই দিন আগে দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেছে আওয়ামী লীগসহ বেশ ক’টি দল। রবিবার পর্যন্ত দুই দিনে শুধু আওয়ামী লীগ থেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে প্রায় ২ হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তহবিলে জমা হয়েছে ১০ কেটির টাকারও বেশি। যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ। এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল মনোনয়নপত্র বিক্রি করে এত টাকা পায়নি।

বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করলেও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়নি। দলের পক্ষ থেকে তফসিল স্থগিত করার দাবি জানানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের শেষ চেষ্টায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা কিংবা অন্য কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল মনে করলে বিএনপি তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। সে ক্ষেত্রে তারা ৭ জানুয়ারির পরিবর্তে নির্বাচনের সময় বাড়িয়ে পুনরায় তফসিলের দাবি জানাতে পারবে। এমন পরিস্থিতিতে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিতে পারবে।

রাজপথে আন্দোলনে থাকা বিএনপি এখন পর্যন্ত নির্বাচনে আসার পক্ষে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দেশের রাজনীতিতে নতুন কোনো মোড় নিলে যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, সে জন্য দলের প্রস্তুতি রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। আগে থেকেই প্রতি আসনে ৩ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করে একটি তালিকা লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জমা দেওয়া হয়। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ওই তালিকা থেকে দ্রুত একটি তালিকা চূড়ান্ত করতে পারবে বিএনপি।

এদিকে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে তারাসহ ১২৫ জন নেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে ঘোষণা দেন। তারা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচন করতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন। আর তৃণমূল বিএনপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা অনেক আগেই দিয়েছে। বিএনপির দলছুট নেতা ছাড়াও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না পাওয়া বেশ কটি ছোট রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির হয়ে নির্বাচন করবে। এ জন্য বিভিন্ন দলের অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী এবার তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার ও নির্বাহী চেয়ারম্যান অন্তরা হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

আগের ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের অধীন নির্বাচন করা জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি তারা এককভাবে না জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। তবে ৩০০ আসন থেকেই এ দলের মনোনয়ন পেতে অনেক নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে আর চেয়ারম্যান জিএম কাদের চাচ্ছেন এককভাবে নির্বাচন করতে। তবে আওয়ামী লীগ কি চায় তার ওপর নির্ভর করবে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত কি করবে। কারণ, বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগ জোটে ১৪ দল ছাড়া আর কাউকে নিতে চাচ্ছে না। আর বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টিসহ মহাজোট করে নির্বাচন করতে পারে আওয়ামী লীগ।

রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও দিলীপ বড়–য়ার সাম্যবাদী দল, অধ্যাপক বি চৌধুরীর বিকল্প ধারা ও নজিবুল বশর মাইজভা-ারির তরিকত ফেডারেশনসহ বেশ কটি দল নিজেদের প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুরোদমে। এ কারণে, সারাদেশে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দেওয়ায় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। আর নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হচ্ছে ৮৫২ জন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য আলাদা আলাদা ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছে ইসি। এই তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি সংসদীয় আসনের ভোটগ্রহণ করা হবে।

এবার ৩০০টি সংসদীয় আসনে ভোটকেন্দ্র থাকছে ৪২ হাজার ৩৮০টি। আর ভোটকক্ষ থাকছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৬৬৮টি। প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একটি করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স রাখা হবে। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে একটি করে অতিরিক্ত ব্যালট বাক্স দেওয়া হবে। সে হিসেবে সংসদ নির্বাচনে তিন লাখের বেশি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হবে। ভোটগ্রহণের জন্য এবার দশ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলেও সকল দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করার জন্য দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ রবিবারও কমনওয়েলথের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি জেনে সন্তুষ্ট হয়েছে বলে ইসি সূত্র জানায়।

এবারের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে এ বিষয়টি। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে কিভাবে আসবে এটিও এখন আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। ইসি সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পরিবর্তন করার বিষয়টি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচন করার জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে নির্বাচনের তারিখ আরও ১১ দিন পিছিয়ে ২৯ ডিসেম্বর করতে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রয়োজন হলে এবারও সেভাবে করা যাবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়