ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে জেনেরাখুন বন্যার সময় করণীয় কিছু বিষয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ২১ জুন ২০২২  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

বন্যা আমাদের দেশের একটি অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ। প্রতি বছর আমাদের দেশে বন্যা হয় এবং এতে নানা ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হয়। মানুষ, গবাদী পশু, ফসল, অবকাঠামোসহ নানা ধরনের ক্ষতি সাধিত হয়। বন্যায় ঘর-বাড়ি ডুবে গেলে মানুষের কষ্টের  সীমা থাকে না। আবার বন্যা সম্পর্কে মানুষের অসচেতনতার  কারণেও বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা আরো বেশি হয়। একটু সচেতন হলে আমরা অনেক ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। তাই জেনে রাখা উচিৎ বন্যার সময় করণীয় কিছু বিষয়।


১. বাড়িতে শুকনো খাবার যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রাখুন। যেমন-চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, নাডু, খৈ, ইত্যাদি। যেসব খাবার রান্নার প্রয়োজন হয় না এবং যেসব খাবার অনেক দিন রাখা যায় সেগুলো মজুদ করুন। সাথে গুড়, চিনি রাখা যেতে পারে। গবাদী পশু-পাখির জন্য শুকনো খড়, ভূষি, ও অন্যান্য দানাদার খাবার সংগ্রহ করে রাখুন। সাধারণত ২/৩ সপ্তাহের জন্য মজুদ রাখা যেতে পারে। তবে ১ মাস হলে ভালো হয়।


২. বন্যার পানি বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে কিংবা সাথে সাথে ছোট ছেলে-মেয়েদের, বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা, প্রতিবন্ধীদের আগেই বন্যামুক্ত নিরাপদ স্থানে বা আত্নীয়-স্বজনদের বাড়িতে রেখে আসুন। এছাড়া গবাদী পশু-পাখি থাকলে তা আগেই নিরাপদ স্থানে রেখে আসুন।


৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন-দলিল, সনদপত্র, লাইসেন্স ইত্যাদি একাধিক পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিকটবর্তী বন্যামুক্ত এলাকায় কোনো আত্নীয়-স্বজন কিংবা পরিচিত ব্যাক্তির বাড়িতে রাখতে পারেন। বাড়িতে উঁচু স্থানে রাখা নিরাপদ নয়। কারণ বন্যা কখন বড় আকার ধারণ করতে পারে তা বলা যায় না। অনেক সময় তা সরিয়ে রাখতে ভুলেও যেতে পারেন।
৪. বাড়িতে উঁচু স্থান থাকলে সেখানে প্রয়োজনীয়, দামী এবং নষ্ট হতে পারে এমন জিনিসপত্র দ্রুত সরিয়ে রাখুন। বাড়িতে উঁচু স্থান না থাকলে একটি উঁচু মাচা তৈরী করতে পারেন কিংবা নিকটবর্তী বন্যামুক্ত এলাকায় সরিয়ে নিতে পারেন।


৫. বন্যার সময় পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েলের পানি ব্যবহারের চেষ্টা করুন। বন্যা কবলিত এলাকার টিউবওয়েল হলে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে হবে। বন্যায় জ্বালানীর যেহেতু সমস্যা থাকে সেহেতু এক সঙ্গে বেশি পরিমান পানি ফুটিয়ে রাখুন। টিউবওয়েলের পানি না পেলে নদীর পানি ভালোভাবে ছেঁকে এবং ফুটিয়ে খেতে হবে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য “পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট” ব্যবহার করুন। অবশ্য বোতলকৃত পানি বাজার থেকে কিনে রাখতে পারেন। যদিও এটি ব্যয় সাপেক্ষ।


৬. বন্যা শুরুর সাথে সাথে বাড়িতে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট রাখুন। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্যাভলন ও ব্যান্ডেজ রাখতে পারেন।


৭. বাড়িতে বন্যা প্রবেশের সাথে সাথে বিদ্যুতের সকল সুইচ, মেন সুইচ বন্ধ করে রাখুন।


৮. রাতের জন্য জরুরী যন্ত্রপাতির মধ্যে দেশলাই, মোমবাতি, হারিকেন, টর্চ লাইট রাখুন। বন্যা কবলিত এলাকায় রাতে মশারী ছাড়া ঘুমানো ঠিক নয়। কারণ বিভিন্ন বিষাক্ত পোকা-মাকড় কামড় দিতে পারে।


৯. রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানী, শুকনো খড়, খড়ি, কেরোসিন ও আনুসঙ্গিক জিনিষপত্র মজুদ করে রাখুন। চুলা হিসেবে কেরোসিনের স্টোভ, মাটির বহনযোগ্য চুলা ইত্যাদি ব্যবহার করুন।


১০. বৃষ্টির জন্য কিংবা কোথাও সাময়িক আশ্রয়ের জন্য পলিথিন, টিন সংগ্রহ করে রাখুন।


১১. গভীর জলস্রোত থেকে সকলকে দূরে রাখুন। কলার গাছ দিয়ে ভেলা কিংবা বাস-ট্রাকের রাবারের টায়ার টিউব দিয়ে ছোট নৌকা/ভেলা বানিয়ে রাখতে পারেন।

বন্যার সময় আপনি কি করবেন তা মূলত নির্ভর করবে আপনার এলাকার বন্যার ধরণ, মাত্রা, কতো দ্রুত বন্যা বাড়ছে, আপনার বাড়ির ধরণ কেমন, কতো দূরে বা কাছে নিরাপদ আশ্রয় আছে ইত্যাদির উপর। যেমন-চরাঞ্চলে, নদীর পাড়ে যাদের বাড়ি, তাদের বন্যার পানি বাড়িতে প্রবেশের পূর্বেই নিরাপদ স্থানে যাওয়া উচিৎ। কিংবা যাদের বাড়িতে কংক্রিটের ছাদ আছে তারা প্রাথমিক অবস্থায় ছাদে আশ্রয় নিতে পারে। তাই আবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিলে অনেক ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়