ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

একদিনেই ঘুরে আসুন ঝরঝরি ঝরনায়

ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২২, ৪ জুলাই ২০২২  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

ঝরঝরি ঝরনা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার পন্থিছিলা বাজারের পাহাড়ে অবস্থিত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়ি রেঞ্জের এক গহীন পাহাড়ি ট্রেইলের নাম হলো ঝরঝরি। ট্রেইল বলতে মূলত পাহাড়ি যে কোনো পথকে বোঝানো হয়।

ঝরঝরি ট্রেইল যেন স্রষ্টার নিজের হাতে সাজানো সবুজে মোড়ানো এক অমায়িক ঝরনার ট্রেইল। এই ট্রেইলে মোট ৫টি ঝরনা আছে। ঝরঝরি, স্বর্গের সিঁড়ি, ডেভিল ফলস বা মূর্তি ঝরনা তার উপরে লিমন ঝরনা ও সবার শেষে এক্সট্রিম লেভেলে মইনের মার খুম।

আজ শুধু প্রথম ঝরঝরি ট্রেইলের প্রথম ঝরনা ঝরঝরি সম্পর্কে খুটিনাটি জেনে নিব। পাহাড়ে ঘেরা সবুজে মোড়ানো ঝরঝরি ট্রেইল শুরুর আগে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পন্থিছিলা বাজার থেকে। বাজারের ভেতর দিয়ে আপনাকে চলে আসতে হবে পূর্বদিকে রেললাইন পর্যন্ত।

সেখান থেকেই শুরু হবে পাহাড়ের দিকে পায়ে হেঁটে যাত্রা। রেল লাইন ছেড়ে পাহাড়ে নামতেই চোখে পরবে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ সবজির বাগান, পাহাড়ি বন আর সবুজে ঘেরা পাহাড়। গন্তব্য তখন মাঠ পেড়িয়ে পাহাড়ি ঝিরিপথ।

আপনি হেঁটে চলেছেন, পাহাড়গুলোও যেন আপনাকে টানছে। সমতল শেষ এবার শুরু ঝিরিপথের। সূর্যের উত্তাপে উত্তপ্ত পৃথিবী যেন মুহুর্তেই শীতল হয়ে উঠলো এই ঝিরির বুকে। কোলাহলময় যান্ত্রিক পৃথিবীর শব্দ দূষণ যেন হেরে গেল বয়ে চলা জলের কলকলানি আর ঘন জঙ্গলের মৃদু হাওয়ার শব্দের কাছে।

এখানে যেন মুহুর্তেই সব রূপ পাল্টে ফেলেছে চির চেনা পৃথিবী। এবার শুরু ঝিরিপথে পা ভিজিয়ে ভিজিয়ে হেঁটে চলা। ঝরঝরি মূলত ঝিরির গোলকধাঁধা। প্রথমবার গেলে অবশ্যই সঙ্গে গাইড নিতে হবে। পাহাড়ি ঝিরির ছড়াছড়ি সেখানে।

ঝিরির সবুজে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর মূল ঝিরি ছেড়ে এবার ধরতে হবে বাঁ দিকের ছোট্ট ছরা। এ পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলবে পাথরের মাঝে খাঁজ কেটে উপরের দিকে চলে যাওয়া একটা পাহাড়ি পথের।

পথটি নতুনদের জন্য একটু কষ্টসাধ্য। তবে জীবন মায়া ত্যাগ করার মতো কোনো ভয় নেই। এ পথ পারি দিতে প্রয়োজন একটু সতর্কতার আর খানিক পরিশ্রমের।

পাহাড়ি এই পথটার প্রায় শেষ প্রান্তে এসে দেখা মিলবে একটা খোলা পাহাড় চূড়ার মতো স্থান। সেখানে দাঁড়িয়ে আপনি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ভ্যালি আর উঁচু চন্দ্রনাথ পাহাড়ের রেঞ্জটা পুরোটাই দেখতে পাবেন।

পাশাপাশি ধকল নেয়া শরীরটাকে প্রকৃতির সবুজ মায়া দুই নয়ন ভরে দেখতে দেখতে একটু বিশ্রাম দিবেন। জানেন তো সবুজ প্রকৃতির এই দৃশ্য চোখ ও মন দুটোর জন্যই ভালো। আর এই অমায়িক দৃশ্য আপনার পাহাড় চড়ার ক্লান্তি কিছুটা হলেও হ্রাস করবে।

এবার পাহাড় থেকে সামনের দিকে যাওয়ার পালা। চূড়ার মতো জায়গাটি থেকে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই পাহাড় থেকে আবার নেমে যাওয়ার পথের দেখা মিলবে। এ পথ ধরে নামতেই দেখা মিলবে এই পুরো ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর ঝিরির।

হাতের বাম পাশে পাথরের খাঁজ কাটা দেয়ালে ঘেরা এক নীল জলের খুম আর সামনের ঝিরির বুকে ঘন পাহাড়ি জঙ্গলের বুক চিড়ে ঝরে পরা আলো ছায়া। সেখানে গিয়ে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন। এতো সুন্দর ঝিরি, খুম আর সবুজের বুক চেড়া আলো ছায়ার সমন্বয় খুব কমই পাওয়া যায়।

কষ্ট করে এই খাড়া পাহাড় পারি দিয়ে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের উপহার হিসেবে স্রষ্টা যেন নিজ হাতে সাজিয়েছেন এই ঝিরিটুকু। এখান থেকে আবার হাঁটা শুরু। ঝিরির জলের কলকলানি, অজানা পাখির কিচির-মিচির, পাহাড়ি বনের নীরবতা ভেদ করে বেড়িয়ে আশা অচেনা জন্তুর ডাক এসব শুনতে শুনতে আপনি হঠাৎ পেয়ে যাবেন প্রথম ঝরনা ঝরঝরি।

জ্বি এই ঝরনার নামেই ট্রেইলের নাম হয়েছে ঝরঝরি ট্রেইল। অপার্থিব সুন্দর প্রসস্থ এই ঝরঝরি ঝরনা পেছনে ফেলে আসা লম্বা ট্রেইলের ক্লান্তি আপনাকে ভুলিয়ে দেবে। অগভীর খুম পারি দিয়ে এই ঝরনার কোলে শরীর ভেজালে, মিলবে এক অমায়িক প্রশান্তি।

এই বুঝি ঝরনার সৌন্দর্য। ক্লান্তি তৃষ্ণা সব নিমিশে দূর করে ফেলে। ঝরঝরি ঝরনা অব্দি দেখে ফিরে আসতে চাইলে যে পথে গিয়েছেন সে পথেই ফিরে আসবেন।

অন্যদিকে ঝরঝরির আপার স্ট্রিমে বা উপরের দিকে আছে ডেভিল ফলস বা মূর্তি ঝরনা। আছে স্বর্গের সিঁড়ি আর সবার শেষে মানে একদম এক্সট্রিম লেভেলে লিমন ঝরনা ও মইনের মার খুম।

কীভাবে যাবেন ঝরঝরি ঝরনায়?

ঝরঝরিতে যেতে হলে আপনাকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার পন্থিছিলা বাজারে আসতে হবে। সেখান থেকে অটোটে, রিকশায় কিংবা পায়ে হেঁটে রেল লাইন অব্দি গিয়ে তারপর মাটির রাস্তা ধরে ঝিরি অব্দি আসতে হবে।

আগেই বলেছি ঝরঝরি ট্রেইলে অনেকগুলো ঝিরি, যেন গোলকধাঁধা। তাই আগে না গিয়ে থাকলে গাইড নিয়ে যাওয়া ভালো। স্থানীয় গাইড দামাদামি করে ২০০-৩০০ টাকার মাঝে পেয়ে যাবেন। ননএসি বাসে আসা যাওয়া থেকে শুরু করে ১৬০০-১৭০০ টাকার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুরে আসতে পারবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়