ঢাকা, রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জে বছরে ৫০ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১২ জুন ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ১০টি গ্রাম। গ্রামগুলোর বেশির ভাগ পরিবার এখন সবজী চাষের সাথে যুক্ত। এতে হতদ্ররিদ্র গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। অনেক যুবকের বেকারত্ব ঘুচেছে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে গ্রামগুলোর সবজী যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

নানাজাত এবং স্বাদের সবজী চাষে নিরব বিপ্লব ঘটেছে। উপজেলায় সদর ইউনিয়নের কালাগুজা, কাশীপুর, সংবাদপুর, লালপুর, চানপুর, আবুর হাটি, ফেনারবাক ইউনিয়নে রামপুর, জামলাবাজ, সুজাতপুর, শরিফপুর, ভুতিয়ারপুর গ্রাম। বছরে ৫০ কোটি টাকার সবজী উৎপাদন হয় এই গ্রামগুলোতে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় এই গ্রামগুলোর সারা বছর সবজী উৎপাদন হয়ে থাকে শিম, গোল আলু করলা, লতা শিম, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব সবজী সদর ইউনিয়ন মন্নান ঘাট, সংবাদপুর বাজার ও সাচনা, জামালগঞ্জ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ভৈরব, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ঢাকা ও সিলেট পাঠানো হয়। বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজী উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে।

গ্রামগুলো গিয়ে দেখা যায়, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, করলা, বেগুন, কাকরুলসহ বিভিন্ন সবজী চাষ হয়েছে। কাশিপুর গ্রামের কৃষক ইয়ার আলী বলেন কয়েক বছর আগে এই এলাকায় মানুষ ধানের চাষ করতেন। বছরে বছরে পাহাড়ী ঢলে পলি পড়ে জমি উচু হয়ে যাওয়ায় সাড়া বছরেই আমরা সবজী চাষ করে থাকি। প্রতিটি কৃষকেই যার যতটুকু জমি আছে বিশেষ করে উচু জমিতে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজী চাষ করে থাকে। এই এলাকা টমেটোর জন্য প্রসিদ্ধ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন মিনি ট্রাক, ট্রলার ও লঞ্চে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকরা এসে নিয়ে যায়। বছরে প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার টমেটো বেচা-কেনা হয় মন্নান ঘাট বাজারে।

সংবাদপুর গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন ধান চাষের চেয়ে সবজী চাষ লাভ জনক। বছরে মৌসুমভিত্তিক নানা জাতের সবজী চাষ করে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। যারা টমেটো করেন তারা প্রতি বিঘায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ করেন।

রামপুর গ্রামের সাইকুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, রজব আলী জানান, তারা প্রতিজনই ৫ থেকে ১০ বিঘা জমি টমেটোসহ অন্যান্য সবজী চাষ করেন। টমেটো বিক্রি করে বিঘা করে বিঘা প্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করেন। এছাড়াও অন্যান্য সবজী করে আরো প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন তারা।

তারা আরো জানান, এলাকায় ১ দশক আগে শুধু বোরো ধান ছাড়া আর কিছুই হতো না। পাহাড়ী ঢলে প্রতি বছর পলি পরায় বছরে এখন তিন ফসল করা যায়। এতে করে ছাড়া বছরই প্রতিটি কৃষক বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা সবজী বিক্রি করে আয় করে থাকে। কালাগুজা গ্রামের সামছুল হক বলেন, আমার ৮বিঘা জমিতে টমেটো ও অন্যান্য সবজী চাষ করে প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা সবজী বিক্রি করি।

মান্নান ঘাট বাজারে সবজীর পাইকার আহমদ হোসেন বলেন, টমেটোর মৌসুমে এই এলাকায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করা হয়। বর্তমানে এই বাজার ও এলাকা থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার অন্যান্য সবজী প্রতিদিন বিক্রি হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে জমি থেকে সবজী কিনে নিয়ে মান্নান ঘাট বাজারে আরতে রেখে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়।

জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন বলেন, সারা উপজেলায় একশত পয়তাল্লিশ হেক্টর জমিতে এই বছর সবজী চাষ করা হয়েছে এর মধ্যে ১০টি গ্রামে প্রায় ৮০ ভাগ কৃষকেই সাড়া বছর সবজী চাষ করে থাকে। টমেটো, গোল আলুসহ বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপরে সবজী বিক্রি হয়। এই এলাকার কৃষকদের দাবী টমেটো ও আলুর জন্য মন্নান ঘাট অথবা আশপাশে একটি হিমাগার স্থাপন অতি প্রয়োজন। আমি কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করব এই এলাকায় যেন সরকারি ভাবে একটি হিমাগার তৈরি হয়।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়