শীতের শেষে শ্রীমঙ্গল
নিউজ ডেস্ক
শীতের শেষে শ্রীমঙ্গল
মাঘে দেশের অনেক অঞ্চলে শীত না থাকলেও, শ্রীমঙ্গল বেশ ব্যতিক্রম। সেখানকার দিন শুরু হয় গাঢ় কুয়াশায়, রোদ্র হাসে খানিকটা দেরি করে, মোটা কাপড় মুড়িয়ে বের হওয়া ছাড়া যেন উপায় নেই। গত একমাস ধরে দেশের অন্যতম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলেই। কখনো ৮, কখনো ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
শীতে এখন মাখামাখি আবহে ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চা বাগানের অপূর্ব দৃশ্য ছাড়াও রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাইক্কা বিল, মাধবপুর লেকসহ আরো বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। শ্রীমঙ্গলের আশেপাশেও ঘোরার জায়গা কম নয়। চলুন দেখে নেয়া যাক শ্রীমঙ্গল ও আশপাশের পাঁচটি গন্তব্য-
চা বাগান
বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত মানের চা শ্রীমঙ্গলেই উৎপন্ন হয়ে। শ্রীমঙ্গলের প্রবেশ পথে ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্য দৃষ্টি কেড়ে নেবে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের তৈরি এ ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে সাতগাঁও চা-বাগানের সহায়তায়। ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্যের সামনে থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে সাতগাঁও চা-বাগান। ইংরেজদের শাসনকালের স্মৃতি বহনকারী সিলেটের চা বাগানগুলোতে সেই সময়ের মতো কাঠের তৈরি সাদা রঙের ভবনে ম্যানেজারেরা বাস করেন। আর তাই চা বাগানের জীবন যাত্রাতেও ইংরেজ আমলের অনেক ছাপ লক্ষ করা যায়। সাধারণত চাপাতা সংগ্রহের কাজ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। এ সময়ে কর্মচঞ্চল চা বাগান সবুজে পরিপূর্ণ থাকে।
বাইক্কা বিল
একাধারে পাখি, মাছ ও গাছগাছালির অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল মূলত হাইল হাওরের অন্তর্ভুক্ত একটি অংশ। অগভীর এই হ্রদটিতে বিভিন্ন গাছপালার দেখা মেলে। সেইসঙ্গে রয়েছে স্থানীয় জলাভূমিও। এর অবস্থান শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের মাঝপথে। বিলের ঘেরাটোপে প্রবেশ করতেই পাখিদের মন মাতানো কলকাকলিতে মন ভরে উঠবে। যেহেতু বাইক্কা বিলে মাছ ধরা নিষেধ, বিলে থাকা মাছের ঝাঁক প্রতি বছরই পাখিদের আকর্ষণ করে। শীতকালে এখানে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে। তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা এই বিল। পাখি দেখতে আসেন অনেকে, গবেষকদেরও দেখা যায় দুরবিন নিয়ে বসে পড়তে। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় এখানে নৌভ্রমণের অনুমতি দেওয়া থাকে।
মাধবপুর লেক
শীতকালে মাধবপুর লেকের মোহনীয় চেহারা ধরা দেয় পর্যটকদের কাছে। এ সময়ে সাদা পেটের বগলা পাখিও দেখা যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই স্বপ্নালু এই হ্রদের দেখা মিলবে। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই লেকটি। জলপদ্মসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই স্থানটিতে বহু ধরনের পাখিদেরও আনাগোনা রয়েছে। একেক ঋতুতে মাধবপুর লেকের যেন একেক রূপ। কারও চোখে হয়তোবা তা ধরা দিতে পারে জল-উপকথার বিচিত্র প্রাণীর আকৃতিতে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
বছরের পর বছর যায়, তবু এ স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ে বৈ কমে না। সেই কবে 'অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইস' এর ফিলিয়াস ফগ এসে পৌঁছেছিলেন লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরের রেলপথে, আজও লোকে সেখানে বেড়াতে যায়। প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বিরল প্রজাতির পাখি, বাঁদর, হরিণ প্রভৃতি প্রাণীদের বাসস্থান এই উদ্যান। এদেরকে এক নজর দেখার পাশাপাশি হাইকিং ও ট্রেকিংয়ের জন্যও এ বন বেশ উপযোগী। তবে সেসময় স্থানীয় একজন গাইড সঙ্গে রাখলে ভালো হয়।
শীতকালে শিশিরের অন্য এক জাদু ছড়িয়ে পড়ে এই রেইনফরেস্টে। হালকা কাদামাখা পথ দিয়ে একা একা হেঁটে যেতেও মন ছুঁয়ে যাবে প্রশান্তি। নাগরিক কোলাহল এড়িয়ে কিছুক্ষণের এই নির্জনতা সঙ্গী হবে হয়তো কাছেই ডেকে ওঠা একটা পাখির। প্রকৃতি ধরা দেবে চোখের সীমানায়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে এখানে যাওয়া সম্ভব।
২৪৪ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য মণিপুরি ‘রাস উৎসব’
মণিপুরিদের প্রধান উৎসব রাসপূর্ণিমা বা রাস উৎসব। শরতের পূর্ণিমায় এই রাস উৎসব হয়। রাস উৎসবের দুটি পর্ব। দিনের বেলায় রাখালরাস এবং রাতে মহারাস। এটি মণিপুরীদের অনুষ্ঠান হলেও প্রতি বছর বর্ণিল এ উৎসবে শামিল হন দেশ-বিদেশের হাজারো দর্শনার্থী।
১৭৭৯ সালে মণিপুরের তৎকালীন মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতে মহারাস প্রথমবারের মতো লীলা উৎসব প্রবর্তন করেন। এরপর থেকে কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাস লীলা পালিত হয়ে আসছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরী অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এরই মধ্যে দেখা মিলছে এখন রাস উৎসবের রং। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে রং করানোর কাজ। এলাকার হাওয়ায় সুর বাজছে এই রাস উৎসবের। এ বছর আগামী ২৬ নভেম্বর রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সিলেটগামী যেকোনো বাস ও ট্রেনে চড়ে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাহাড়িকা, উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল আসতে পারবেন। শ্রেণিভেদে ট্রেনের টিকিটের ভাড়া লাগবে ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা। এছাড়া হানিফ, এনা, শ্যামলী এবং সিলেট এক্সপ্রেসসহ অসংখ্য বাস এই রুটে চলাচল করে।
থাকার জায়গা
রাত্রিযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন মানের অসংখ্য আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে নভেম ইকো রিসোর্ট, নিসর্গ ইকো কটেজ, শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, আমাজন ফরেস্ট রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, টিলাগাও ইকো ভিলেজ রিসোর্ট ও শান্তি বাড়ি উল্লেখযোগ্য।
- পৃথিবীর নজরকাড়া যে স্থাপত্য দেখলে চোখ হবে ছানাবড়া
- নৈসর্গিক এক জনপদের নাম নেত্রকোনা
- ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
- বাংলাদেশের ১৭টি পাঁচ তারকা হোটেল চিনে নিন
- টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন গেল পর্যটকবাহী দুই জাহাজ
- অল্প সময়েই পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পর্যটনখাত
- করোনার পর বাংলাদেশের ১০ ভ্রমণ গন্তব্য
- ভ্রমণ কাহিনি: কোরিয়ার জেজু দ্বীপ যেন স্বর্গরাজ্য
- ঈদের ছুটি কাটুক ঢাকার কাছাকাছি ৫ রিসোর্টে
- নিলাদ্রি লেক: এ যেন বাংলাদেশের ‘কাশ্মীর’