ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

লক্ষ্মীপুরে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে

লক্ষ্মীপুরে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে

বিগত ১৫ বছর যাবত লক্ষ্মীপুরের মানুষের তথা জনসাধরণের গায়ে সু-বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সব ধরণের উন্নয়নে ছোঁয়া লেগেছে জেলার সব খাতে। 

সরকারের নির্দেশনায় কৃষি অধিদফতরের সঠিক পরিচর্যায় কৃষি বিপ্লব থেকে শুরু করে উন্নতি ঘটেছে অবকাঠামোতে। লক্ষ্মীপুরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে জনশক্তি রফতানিতে, নদী ভাঙনরোধে, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে, যোগাযোগে, সরকারিভাবে দান-অনুদানে তথা ভাতা কার্যক্রমে এবং  জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক ভাষ্যে। সবমিলিয়ে ডিজিটালের ছোঁয়ার পাশাপশি স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর জেলা ও জেলার মানুষ। 

একসময় নাই, নাই, পাই নাই, খাই নাই, আহজারী মারামারি, খুন-খারাপি সবই হতো লক্ষ্মীপুরে। এখন সেই লক্ষ্মীপুরে সব দিকেই সফলতা বয়ে আনছে। লক্ষ্মীপুর সন্ত্রাস-খুনাখুনির জনপদ হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি থাকলেও সেই লক্ষ্মীপুরে এখন সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পিছিয়ে থাকা মেঘনাপারের এই জনপদে সরকার পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করছে। প্রায় ঘরে ঘরেই ভাতাসহ সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ পাওয়া সুফলভোগী রয়েছে। এতে জীবন মানের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষ অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধ হচ্ছে। কৃষি, নদী, জনশক্তি রফতানিএসব থেকে আসা আয়ে চলছে বেশির ভাগ মানুষ।

লক্ষ্মীপুরে কৃষি বিপ্লবের ক্ষেত্রে সরকার বিনা মূল্যে সার, বীজ, প্রশিক্ষণসহ কৃষি প্রণোদনা দেয়ায় সয়াবিন, নারকেল, সুপারি, ধান, পান চাষে প্রসার ঘটছে। শুধু মৌসুমে সয়াবিন উৎপাদনে তা বিক্রিতে লেনদেন হয় প্রায় ৫শ কোটি টাকা। যেটি দেশের মোট উৎপাদনের ৭০ শতাংশ সয়াবিন হয়। একই সঙ্গে শাক-সবজিও জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলায় মানুষের চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ আমন ও আউশ ধান উৎপাদন হয়। এক মৌসুমে সয়াবিন হয়। এছাড়া শিম, টমেটো, শসা, সহ শীতকালীন সবজি চাষে এগিয়ে লক্ষ্মীপুরের মানুষ। কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত কৃষকদের পরামর্শ প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও বিনামুল্যে বীজ এবং সার দিয়ে সহযোগিতা করার কারণে তারা আজ স্বাবলম্বী।

এক সময়ে ভয়ঙ্কর লক্ষ্মীপুর এখন ভীতিমুক্ত। রয়েছে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলা নামে-বেনামে ছোট-বড় অন্তত ২৫টি সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল। প্রতিটি বাহিনীর নিজস্ব বলয় থাকতো। দুইশ থেকে ৫শ জন সদস্য থাকতো। 

বিশেষ করে শামীম আনোয়ার বাহিনী, জিসান বাহিনী, নাসির বাহিনী, টাইগার ফারুক বাহিনী, লাদেন বাহিনী কাশে জিহাদী বাহিনী, কামরুল বাহিনী, হৃদয় পাটওয়ারী বাহিনী সহ অসংখ্য বাহিনী। এসব বাহিনীর সদস্যদের হাতে হাতে ছিল বিপুল পরিমাণ অগ্নেয়াস্ত্র। যেসব অস্ত্রের ছিলনা কোন বৈধতা। 

পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে কিংবা চোরাই পথে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা হতো এসব অস্ত্র। যদিও এসব অস্ত্র উদ্ধারে অনেকটাই সফল স্থানীয় প্রশাসন। তবে এখনো কিছু বাহিনী রয়েছে যারা অস্ত্র দিয়ে নয়, দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষদের মারধর হয়রানী করে যাচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে খুনাখুনিতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি, ধর্ষণ, লুটপাটে অবস্থান জানান দিতে গোলাগুলি করত তারা। 

আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে ২০১৪ সালে শুরু হয় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান ও তাদের বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।অনেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায়, অনেকে এলাকা ছাড়ে।সেই থেকে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে চন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকায় বেশ কিছু কিশোর রয়েছে যারা বাজার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের আতঙ্ক। 

হৃদয় পাটওয়ারী নামে একটি বাহিনীে এখনো দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। তার রয়েছে ৫০ থেকে শতাধিক সদস্য। যারা তার নেতৃত্বে বাজার ব্যবসায়ী, প্রবাসী, স্থানীয় সাধারণ মানুষকে মারধর সহ হয়রানী করে যাচ্ছে। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলছেনা। 

সাম্প্রতিক চন্দ্রগঞ্জ বাজার গ্রীনচিলি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায়। লোহার রড, লাঠিসোটা ও কোমরের বেল্ড দিয়ে মারধর করে দুই প্রতিষ্ঠানে দুইজনকে।যদিও স্থানীয় ভাবে প্রাথমিক মীমাংসা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের মানুষ প্রবাস যাত্রা সবেচেয়ে বেশি তাই জেলায় জনশক্তি রফতানিতে অনেক দূর এগিয়ে আছে। এখানকার বিপুল জনগোষ্ঠী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে নিজের এবং পরিবারের ভাগ্য বদলে কাজ করছেন। দেশে তাদের পাঠানো টাকাতেও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রয়েছে। 

প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠছে বহুতল দালান, আধুনিক বাড়িঘর। সন্তানরা হচ্ছে শিক্ষিত। বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। জেলার উপকুলীয় অঞ্চল রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর। এসব এলাকার নদীভাঙন সবচেয়ে বড় সমস্যা। তবে ভাঙ্গনরোধে সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে। লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের বরাদ্দ তিন হাজার ১০০ কোটি টাকার। প্রকল্পটির রামগতি ও কমলনগর উপজেলার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ চলমান। এর আগেও সরকার ১৯৮ কোটি টাকায় রামগতির আলেকজান্ডার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে সরকার। বর্তমানে কমলনগরে কাজ চলমান।

ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার দিক দিয়ে লক্ষ্মীপুরের মানুষ সবচেয়ে ধর্মভীরু। এসব জেলার মানুষ ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করে। সরকার সারাদেশের ন্যয় লক্ষ্মীপুর জেলা শহর ও পাঁচটি উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ বরাদ্দ দিয়েছে। সেগুলোর নির্মাণ কাচ চলমান রয়েছে।সদরের বটতলী মডেল মসজিদটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

শহরের সামাদ একাডেমি এলাকায়, রামগতি, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর উপজেলা জমি অধিগ্রহণসহ মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় অতুলনীয়। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।এর আগে চাঁদপুর-রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক, লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ সড়ক সংস্কার-প্রশস্ত করা হয়।লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার প্রায় সব রুটে সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে।

এছাড়া জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরে দেড় লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন ভাতা পাচ্ছেন। সরকার বছরে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, শিক্ষাসহ ১০ ধরনের ভাতা দিচ্ছে। এতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী সুফল পাচ্ছে।

উন্নয়নের ছোঁয়া শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুরে এসেছেন। তখন লক্ষ্মীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২৫০ শয্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবনসহ ১৭টি প্রকল্পের।

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন মূলক কাজ চলছে। জেলা পরিষদের মাধ্যমে গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত আছে। 

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে গত ১৫ বছর লক্ষ্মীপুরে যে পরিমাণ উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা জেলাবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত। চারদিকে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। রাস্তা-ঘাট, পুল কালভার্ট, স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ-মন্দির, হাট-বাজার, চিকিৎসাখাত ও উৎপাদন। সব কিছুতেই উন্নয়ন হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুক পিুঙ্কু বলেন, একসময় লক্ষ্মীপুর ছিল সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় ছিল। হত্যা, লুণ্ঠন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, চাঁদাবাজী ছিল লক্ষ্মীপুরের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিএনপি-জামায়াতের সময় মানুষ ঠিকমত ঘুমাতে পারতোনা। খেতে কষ্ট হতো, বিভিন্ন বাহিনী নিয়ে চাঁদাবাজী করতো বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা সরকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে, সন্ত্রাস নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে, মানুষ তিন বেলা ঠিক মতো খেতে পারে। জেলার উন্নয়নে সকল পেশার মানুষ খুশি।দলমত নির্বিশেষে লক্ষ্মীপুরে যে পরিমাণ উন্নয়ণ হয়েছে, তাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। আগামীতে মানুষের আস্থা ভালোবাসা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ঘটনা করা হবে এবং অবশিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করা হবে।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারই মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে। লক্ষ্মীপুরে অর্থনৈতিক জোন, নৌবন্দর, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর সড়ককে ফোর লেন করণের কার্যক্রম চলছে। সরকারি প্রতিটি দপ্তর থেকে জনগণ সুফল পাচ্ছে।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়