ঢাকা, রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

রাজশাহীতে সরকারি উদ্যোগে প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৪ জানুয়ারি ২০২৪  

রাজশাহীতে সরকারি উদ্যোগে প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে

রাজশাহীতে সরকারি উদ্যোগে প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে

সরকারের প্রয়োজন-ভিত্তিক ও সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে রাজশাহী বিভাগে গত প্রায় ১৫ বছরে প্রাণীজ প্রোটিন- বিশেষ করে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন হয়েছে ৪.৪৪ লাখ টন, মাংস ৩.৪১ লাখ টন ও ডিম ৮৫.০৯ কোটি। তবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এ উৎপাদন বেড়ে যথাক্রমে ২৯.৬৯ লাখ টন, ১৭.৫২ লাখ টন ও ৪৫০.৭৭ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের (ডিএলএস) বিভাগীয় পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন প্রাণীজ প্রোটিন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
একইসাথে, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিজ প্রোটিনের বিদ্যমান চাহিদা পূরণ করা ও প্রাণিজ প্রোটিনের গুণগত মান বৃদ্ধিও তাদের লক্ষ্য।
ডা. ইসলাম আরো বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর- সদর, উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া, বগুড়ার গাবতলী ও শেরপুর, রাজশাহীর পবা ও বোয়ালিয়া, জয়পুরহাটের পঞ্চবিবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও নাটোরের গুরুদাসপুরসহ অনেক উপজেলা দুধ উৎপাদনের অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া ও ঈশ্বরদী উপজেলা, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া, বগুড়ার শেরপুর, গাবতলী ও ধুনট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা মাংস উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। 
আটটি জেলা নিয়ে গঠিত এই বিভাগে ১৪৬টি মিল্ক চিলিং প্ল্যান্ট, ৮৯০টি দুধ প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট, ১৪টি দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ৩৯টি ফিড মিল কারখানা, ৫০টি ফিড প্রিমিক্স ও দুটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে।
এ ছাড়া ৭৭ লাখ ৯০ হাজার গবাদিপশু, ১ লাখ ২১ হাজার মহিষ, ৮০ লাখ ৫৫ হাজার ছাগল, ১২ লাখ ২০ হাজার ভেড়া, ৭ কোটি ২৫ লাখ মুরগি, ৯৪ লাখ ২২ হাজার হাঁস, ২৭ লাখ ৬২ হাজার কবুতর, ৪ লাখ ৩ হাজার কোয়েল ও ১ লাখ ২৯ লাখ টারকি রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রায় ১.৩৩ লাখ প্রান্তিক কৃষককে প্রায় ১৫১.৫৫ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
৬২,৮৬২ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ১৮,৬৬০ জনকে ভ্যাকসিন এবং ৪২,৮৯৬টি কৃমিনাশক ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।
১৫ বছর ধরে বিস্তীর্ণ বরেন্দ্রভূমিসহ এই অঞ্চলে ভেড়া পালনের মাধ্যমে অনেক প্রান্তিক পরিবার তাদের জীবন-জীবিকার অবস্থার উন্নতি করেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান (৫৩) ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি বলেন, ভেড়া পালন তার দারিদ্র্য দূর করেছে। তিনি নিয়মিত টাকা, মাংস ও দুধ পাচ্ছেন। ফলে এখন সমাজে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। 
গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীর কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী হাবিবা খাতুন ভেড়া পালনের ক্ষেত্রে এলাকায় আদর্শ হয়ে উঠেছেন। 
এখন তিনি তার পরিবারের সাথে খুব সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন। কারণ তিনি ভেড়া পালনের মাধ্যমে সফল ও স্বাবলম্বী হয়েছেন। 
হাবিবা সেই সব নারীদেরও সাহায্য করছেন- যারা তাদের ভেড়ার খামার আরো বড় করতে চান। 
গরুর মাংস মোটাতাজাকরণ ছাড়াও ছাগল মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ বরেন্দ্রভূমিসহ অনেক প্রান্তিক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে।
বাণিজ্যিক চাষাবাদ ছাড়াও গ্রামের অনেককে তাদের নিজস্ব উপায়ে বাড়িতে বা বসতবাড়িতে ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল পালন করতে দেখা যায়। 
সোহেল রানা ও তার স্ত্রী রিমা খাতুন বাগমারা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা। সরকারি চাকরি না পেয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ এই দম্পত্তি  প্রায় পাঁচ বছর আগে বাড়িতে ছাগল পালন শুরু করে। 
আরেকজন যুবক আশরাফুল ইসলাম গত কয়েক বছর ধরে হাঁস পালনের মাধ্যমে তার আত্মবিশ্বাসের মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে তার এলাকায় আদর্শে পরিণত হয়েছেন।
আশরাফুল জেলার বাগমারা উপজেলার বুজরুকুলা গ্রামের বাসিন্দা। তার খামারে প্রায় এক হাজার ডিম পাড়াসহ প্রায় দেড় হাজার হাঁস রয়েছে, বর্তমানে বছরে গড়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। 
আশরাফুল তার খামার থেকে প্রতি পিস ১০ টাকা ৫০ পয়সায় ডিম বিক্রি করছেন- উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে হাঁসের ডিমের চাহিদা অনেক বেড়েছে। পাইকারি বাজারে আকার অনুযায়ী প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১৪ টাকায়।
প্রাণিসম্পদ খাতের প্রসারের দিকগুলো তুলে ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জালাল উদ্দিন সরদার প্রাণিজ প্রোটিন বাড়ানোর জন্য তৃণমূল চাষীদের কাছে উৎপাদন, প্রাথমিক চিকিৎসা, কৃমিনাশক, টিকাদান এবং খামার ব্যবস্থাপনার প্রাণিসম্পদ সেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
অধ্যাপক জালাল সরদার খাদ্য নিরাপত্তা, আত্মকর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনের জন্য প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়