ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার ওসির চেষ্টায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারীর ঠিকানা মিললো

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৭ এপ্রিল ২০২৪  

ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার ওসির চেষ্টায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারীর ঠিকানা মিললো

ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার ওসির চেষ্টায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারীর ঠিকানা মিললো

আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতায় এক মানসিক প্রতীবন্ধী নারীর ঠিকানা খুঁজে বের করলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় (পিপিএম)।মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাত ১ টায় পরিবারের সদস্যদের হাতে সেই নারীকে তুলে দিলেন তিনি। এ ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছে গৌরীপুরের পুলিশ।

ওসি সুমন চন্দ্র রায় জানান, সোমবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে খরব আসে স্থানীয় শাহগঞ্জ বাজারে এক যুবতী ঘুরাফেরা করছে ও একদল বখাটে তাঁর পিছু নিয়েছে। পুলিশ গিয়ে দেখে মেয়েটির চেহারা ও পোশাক-আশাক সম্ভ্রান্ত পরিবারের, সচরাচর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানসিক প্রতিবন্ধীদের মতো নয়।

তাঁরা মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসে ও তাঁর কাছ থেকে ঠিকানা জানার চেষ্টা করে। প্রথমে মেয়েটি জানায়, তাঁকে বাসে জুসের সাথে মিশিয়ে কিছু খাওয়ানো হয়েছে, তারপর থেকে তাঁর ঘুম ঘুম লাগছে, মাথা ঘুরছে ও শরীর খারাপ লাগছে।

তিনি একেকবার একেক ঠিকানা বলতে থাকেন। মেয়েটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিটি থানায় যোগাযোগ করেন ওসি। সারারাত দেশের বিভিন্ন থানায় অনুসন্ধান করেও তাঁর পরিবারের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সন্ধান না পেয়ে ওসি গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে পরামর্শ করে মেয়েটিকে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে দেন।

গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. রাজেন্দ্র দেবনাথ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মেয়েটির মানসিক সমস্যা রয়েছে। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন ও সে সারাক্ষণ ঘুমের ঘোরে রয়েছে।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ওসি সুমন বলেন, মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ মনে হলো ফিঙ্গার প্রিন্টের সাহায্যে অনুসন্ধানের কথা। তিনি তাৎক্ষণিক ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পুলিশ সুপারকে বিষয়টি বিস্তারিত জানান ও পরিচয় পেতে সহযোগিতা চান। পুলিশ সুপার তাৎক্ষনিক পিবিআইয়ের একটি টিম গৌরীপুর থানায় পাঠিয়ে দেন।

মেয়েটির ফিঙ্গার প্রিন্টে বেরিয়ে আসে প্রকৃত পরিচয়। তিনি ঢাকা মোহাম্মদপুর থানার সম্ভ্রান্ত পরিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডভোকেট তৌফির উদ্দিন খান মজলিসের মেয়ে। তাঁর নাম নাদিয়া খান মজলিস ওরফে অন্তরা (২৯)। ঠিকানা পেয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করেন গৌরীপুর থানার ওসি সুমন চন্দ্র রায়।

মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টায় মেয়েটির ভগ্নিপতি মোঃ মারুফ হোসেন দুই প্রতিবেশিসহ অন্তরাকে নিতে আসেন গৌরীপুর থানায়। তিনি জানান- এক ভাই দুই বোনের মধ্যে অন্তরা সবার ছোট। ভাই প্রবাসী। অন্তরার বাবার মৃত্যুর পর করোনার সময় তাঁর মা মারা যান, এরপর থেকেই অন্তরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও মানসিক বিকারগস্ত হয়ে যায়। সে প্রায় সময়ই এভাবে হঠাৎ বাসা থেকে বের হয়ে উধাও যায়।

সর্বশেষ ঈদের পরদিন মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী চাচার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য সে বাসা থেকে বের হয়েছে, তারপর থেকে তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। অন্তরাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ঠিকানা খোঁজে বের করার জন্য তিনি গৌরীপুর থানার ওসি সুমন চন্দ্র রায়সহ যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানান।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিল আহমেদ জানান, গৌরীপুর থানার ওসি মেয়েটিকে উদ্ধারের কথা আমাকে জানান। পরে পুলিশের তত্ত্বাবধানে সমাজসেবার মাধ্যমে তাঁকে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

প্রথমে তাঁর পরিবারের সন্ধান না পাওয়ায় আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম, মেয়েটিকে গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে রেখে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার। পরে ওসি সাহেব প্রযুক্তির সহযোগিতায় মেয়েটির পরিবারের সন্ধান বের করেছেন ও তাকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়