ঢাকা, মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

আজ ঐতিহাসিক জগৎপুর গণহত্যা দিবস

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৪  

আজ ঐতিহাসিক জগৎপুর গণহত্যা দিবস

আজ ঐতিহাসিক জগৎপুর গণহত্যা দিবস

আজ শেরপুরের ঐতিহাসিক জগৎপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অন্তত ৪২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। আহত হয় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এতে ২০০ এর বেশি বাড়ি-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। 

জানা যায়, শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে জগৎপুর গ্রামের অবস্থান। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনী আর তাদের দেশীয় দোসররা গ্রামটির তিন দিক ঘিরে ফেললে গ্রামের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের রাঙ্গুনিয়া বিলে। সেদিনের বর্বরোচিত হামলায় ৪২ জনের প্রাণ গেলেও ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকেই।

সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতিচারণ করে বেঁচে থাকা গ্রামবাসী সোবহান মিয়া, হোসেন আলী, লক্ষণ দাশ ও লক্ষ্মী রানী দেব বলেন, সেদিন ছিল বাংলা ১৬ বৈশাখ ৩০ এপ্রিল শুক্রবার। সকাল ৮টার দিকে জগৎপুরের সামনের শংকর ঘোষ গ্রামের স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগিতায় পাকবাহিনী জগৎপুর এলাকা তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এ সময় পাক বাহিনীর তিনটি দল গ্রামের তিন দিকে অবস্থান নিয়ে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। ওইসময় গ্রামবাসী কোন কিছু না বুঝেই জীবন বাঁচাতে গ্রামের পেছনের দিকের রাঙ্গুনিয়া বিলের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। কিন্তু বিলের মাঝখানে পানি থাকায় কেউ সাঁতরে, আবার কেউ বিলের দু’পাড় ঘেঁষে পালিয়ে যায়। ওই সময় শুকনো জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন ৪২ জন গ্রামবাসী।

শুধু গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা জনমানুষ শূন্য গ্রামের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা পর পাক সেনারা চলে গেলে কিছু কিছু গ্রামবাসী ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়ি-ঘরে পোড়া গন্ধ আর ছাঁই ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ওই অবস্থা দেখে অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যায়। আবার অনেকেই নাড়ির টানে পড়ে থাকে গ্রামেই।

তারা আরো বলেন, হিন্দু-মুসলিম অনেকেই তাদের আত্মীয়দের লাশ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। ওই গণকবরের পাশেই বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাট রয়েছে। জগৎপুরের কৃষক আব্দুস সামাদের ছোট ভাই আলফাজ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি ব্রিজ ভাঙার জন্য গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছলে তার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে গ্রামে ছুটে যান। ওইসময় তার সাথে ছিল আরও এক মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের মাসখানেক আগে স্থানীয় রাজাকাররা তার ভাই ও ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে নিয়ে গেলেও আজও তাদের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

 


সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়