ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিপুল সম্ভাবনা পঞ্চগড়ে : সমতলের চায়ের স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২  

বিপুল সম্ভাবনা পঞ্চগড়ে : সমতলের চায়ের স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে

বিপুল সম্ভাবনা পঞ্চগড়ে : সমতলের চায়ের স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে

উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড় থেকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পর্বতমালা হিমালয়ের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারেরও কম। তাই এই জেলাকে বলা হয় হিমালয়কন্যা। হিমালয়ান আবহাওয়া আর অনন্য সুন্দর সবুজ প্রকৃতিঘেরা এ জেলার ভূমি অত্যন্ত উর্বর। এ জেলার ভূগর্ভস্থ পানি সারা দেশের থেকে সবচেয়ে সুপেয় ও বিশুদ্ধ। উর্বর বেলে দোআঁশ মাটিতে উৎপাদিত হচ্ছে দেশি-বিদেশি উচ্চমূল্যের বিভিন্ন অর্থকরী ফসল। কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, পর্যটনসহ নানামুখী কর্মকান্ডে গত কয়েক বছরে বদলে গেছে এ জেলার গ্রামীণ চিত্র। বিলুপ্ত হয়ে গেছে খড়ের ঘর। প্রায় প্রত্যেকেরই এখন ইট-সিমেন্টের সুরম্য বাড়ি। শিক্ষার হার বাড়ছে। সার্বিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন নারীরা। তরুণ সমাজের কেউ বসে নেই। কোনো না কোনো কাজে জড়িয়ে আছেন তারা। এ জেলাকে নিয়ে জাতীয়ভিত্তিক পরিকল্পিত পদক্ষেপ প্রয়োজন, যা পঞ্চগড়ের সব সম্ভাবনাকে অর্থবহ করে তুলতে সহায়ক হবে। প্রয়োজন বৃহৎ আকারের বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন। 

বাংলাবান্ধায় নতুন সম্ভাবনা : চায়নাসহ হতে পারে পঞ্চকরিডোর : বাংলাদেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলো স্থলবন্দর রয়েছে ভৌগলিক কারণে এ স্থলবন্দরের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এ বন্দর দিয়ে বর্তমানে চার দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার, ভুটান ১৩০ কিলোমিটার এবং চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর পেরোলেই আট কিলোমিটার দূরে ভারতের শিলিগুড়ি শহর।

এ শহর থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে ভারতের যে কোনো রাজ্যে যাওয়া যায়। ভারতের সেভেন সিস্টারর্সের রাজ্যগুলোতে প্রবেশের একমাত্র করিডোর এ শিলিগুড়ি। বাংলাবান্ধা থেকে চীনের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার। এ বন্দর দিয়ে চায়নার সঙ্গে স্থল পথে বাণিজ্যের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সরকার উদ্যোগ নিলে পঞ্চদেশীয় বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে পঞ্চগড়ে।

সমতলের চায়ের স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে : পঞ্চগড়ের হিমালয়ান সমতল অঞ্চলে ক্ষুদ্র চাষিরা এখন বাড়ির আনাচে-কানাচে চায়ের বাগান গড়ে তুলেছেন। অন্য আবাদের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় পতিত জমিতে চা চাষ করে জীবনযাপন বদলে গেছে চা চাষিদের। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল এখন পঞ্চগড়। ২২টি চা কারখানা প্রতি বছর কোটি কোটি কেজি তৈরি চা উৎপাদন করছে। আরও প্রায় ৪৫টি চা কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা সারা বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতি বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করছে। ধারণা করা হচ্ছে, চায়ের নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশের রাজস্ব খাতে জমা হবে কোটি কোটি টাকা।

লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত : প্রতি বছর লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পঞ্চগড়। উত্তরের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত এ জেলার গ্রামগঞ্জের যে কোনো এলাকা থেকে দেখা যায় কাঞ্চন জংঘা। প্রায়ই সারা বছরই অপার সৌন্দর্য মেলে ধরে সুপেয় পানির এ পাহার।  কাঞ্চন জংঘার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ছুটে আসেন এ জেলায়। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সুবৃহৎ দুর্গনগরী ভিতরগড়, একমাত্র পাথরের জাদুঘর রকস মিউজিয়াম, মধ্যযুগের শাহী মসজিদ, সমতলের চা বাগান এবং ভারতীয় সীমান্ত দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হন।

পঞ্চগড়ের বালু-পাথরে গড়ে উঠছে সড়ক-ইমারত : পঞ্চগড়ের সবখানেই রয়েছে পাথর। সমতল থেকে ২০ ফুট গভীরে গেলেই থরে থরে সাজানো রয়েছে এ খনিজ সম্পদ। কয়েক বছর আগেও সমতল ভূমি খনন করে এ পাথর উত্তোলন করা হতো। বর্তমানে ভূমি খনন করে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তবে কয়েকটি নদী থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টন পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এ পাথর সারা দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ অঞ্চলের নদীগুলো থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। সারা দেশের সড়ক এবং ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব পাথর-বালু। পাথর-বালুর উত্তোলন এবং ব্যবসার কাজে জড়িয়ে আছে প্রায় এক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা।

নতুন নতুন ফল-ফুল আর কৃষিজ আবাদ : পঞ্চগড়ে প্রায় সব ধরনের ফল-ফুল আর কৃষিজ পণ্য চাষাবাদ হচ্ছে। দেশের সিংহভাগ বাদাম, টমেটো এবং মরিচ উৎপাদন হয় এ জেলায়। দেবীগঞ্জ উপজেলা বাদাম, সদর উপজেলা টমেটো এবং আটোয়ারী উপজেলা মরিচ চাষাবাদে বিখ্যাত। বাণিজ্যিক আকারে চাষ হচ্ছে জলপাই, লটকন, ড্রাগন ফল, মাল্টা, কমলা, কাঠবাদাম, আম এবং লিচু। এ জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় চাষাবাদ হচ্ছে বিদেশি সবজি। পৃথিবীর বিখ্যাত আম সূর্য ডিম, বানানা ম্যাংগো চাষ হচ্ছে এ উপজেলায়। এ উপজেলা শীতপ্রধান এলাকা হওয়ায় চাষ হচ্ছে টিউলিপ। চায়ের পাশাপাশি কফি চাষও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি ফল লুকাট, লংগান, রামবুটান, সিটলেস লিচুরও চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

৪৬ নদীতে অপার সম্ভাবনা : হিমালয়ান সমতল ভূমির এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ৪৬টি নদী। আঁকা-বাঁকা হাঁটু পানির এ নদীগুলো হাজার বছর ধরে এ জেলার কৃষি অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এ নদীগুলোর কয়েকটির উৎপত্তি ঘটেছে হিমালয় পর্বতে। আর কিছু নদীর উৎপত্তি ঘটেছে জেলার মাটিতেই। এত নদী বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়নি। এ নদীগুলোতে রয়েছে সুবিশাল সম্ভাবনা। পঞ্চগড়ের নদীগুলো হলো : আন্তসীমান্ত নদী : (১) মহানন্দা, (২) করতোয়া, (৩) ডাহুক, (৪) তালমা, (৫) টাঙ্গন, (৬) ঘোড়ামারা, (৭) বুড়ি তিস্তা ও (৮) নাগর।

তালিকা বহির্ভূত আন্তসীমান্ত নদী : (১) বেরং, (২) কুড়ুম, (৩) চাওয়াই, (৪) ছোট যমুনা, (৫) পাঙ্গা, (৬) আলাই কুমারী, (৭) ভাতা, (৮) গোবরা ও (৯) সাঁও।

পঞ্চগড়ে উপত্তি : ১. ভেরসা, ২. খরখরিয়া, ৩. ঘাগরা, ৪. বোরকা, ৫. ঝিনাইকুঁড়ি, ৬. ছেতনাই, (৭) শিঙ্গিয়া বা বহু নদী, (৮). হুয়ারী বা হঠাৎ নদী, (৯) কাঠগিরি, (১০) বাঘমারা, (১১) ডারি, (১২) চিলকা, (১৩) বহিতা, (১৪) শালমাড়া, (১৫) তিস্তা, (১৬) ভাঙ্গা, (১৭) পাইকানী, (১৮) পাম নদী, (১৯) পাথরাজ, (২০) আতরাই, (২১) ভূলি, (২২) রসেয়া, (২৩) তীরনই, (২৪) রণচি , (২৫) জোড়াপানি, (২৬) সুই নদী, (২৭) পেটকি ও (২৮) দারা। এত নদী প্রবাহিত হলেও পঞ্চগড় ভয়াবহ বন্যা বা ভাঙনের কবলে পড়েনি। এ নদীগুলো উন্নয়নে ভূমিকা রেখেই চলেছে। বাংলাদেশের মানচিত্রে ছোট্ট এ জেলাটিতে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। 

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়