ঢাকা, রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

বহুমাত্রিক সম্ভাবনাময় উত্তরাঞ্চলের পর্যটন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

বহুমাত্রিক সম্ভাবনাময় উত্তরাঞ্চলের পর্যটন

বহুমাত্রিক সম্ভাবনাময় উত্তরাঞ্চলের পর্যটন

‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে।’- বিখ্যাত এ রবীন্দ্র সংগীতের রাঙা মাটির বিচিত্র সৌন্দর্যের পথ-ঘাটে বিস্তৃত উত্তরাঞ্চল। ইতিহাস-ঐতিহ্যের আকর ও বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানসহ প্রাকৃতির অপার সৌন্দর্যের সম্ভার এ অঞ্চলে। এ অঞ্চলের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জিনিসের খ্যাতি। রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নিজস্ব সংস্কৃতিও। মায়াবী রূপ-রস-স্নিগ্ধতা ও ভালোবাসায় পূর্ণ উত্তরাঞ্চল। দেশের পর্যটন শিল্পে এই অঞ্চল হতে পারে ‘রোল মডেল’। কেননা এ অঞ্চল বহুরূপী সৌন্দর্য ও গুণের আধার।

‘গ্রিন-ক্লিন-হেলসি’ সিটি খ্যাত পরিকল্পিত রাজশাহী নগর এ অঞ্চলেরই প্রমত্তা পদ্মার পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দুও এই মেট্রোপলিটন সিটি। এ শহরের মানুষের আতিথেয়তা, শহরের রূপ, পথের সৌন্দর্য সাবই বেশ উপভোগ্য। আর পাশ ঘেঁষে বেয়ে চলা পদ্মা অশান্ত মনে প্রশান্তির বাড়তি স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়তই। গভীর রাত পর্যন্ত এই স্নিগ্ধতা উপভোগে তাই পদ্মাপাড়ে থাকে দর্শনার্থী ভিড়। পদ্মাপাড়ের রাতের এমন নয়নাভিরাম নগর সৌন্দর্য খুব কম স্থানেই দেখা মেলে।

জানা যায়, রাজশাহী বিভাগে দেড় শতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়তই লাখো দর্শনার্থীর ভিড় থাকছে। এ অঞ্চলের দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষায়িত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা গেলে পর্যটনে নতুন ‘দিগন্তের উন্মোচন’ হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯টি দর্শনীয় স্থান, জয়পুরহাটে ৭টি, নওগাঁয় ২৩টি, নাটোরে ১০টি, পাবনায় ১৫টি, বগুড়ায় ৩৮টি, রাজশাহী জেলায় ৩৫টি, সিরাজগঞ্জে ১২টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর বাইরেও ঋতুভেদে প্রাকৃতিক ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য, পাখিদের মেলা, রাঙা মাটির পথসহ অপার সৌন্দর্যের হাতছানি সর্বত্রই।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এশিয়ার অন্যতম পরিচ্ছন্ন সিটি রাজশাহী। ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট এই মেট্রোপলিটন সিটির বুক চিরে রয়েছে মহামূল্যবান সব প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন। ১৯১০ সালে স্থাপিত দেশের প্রথম সমৃদ্ধ জাদুঘর ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’ টিও রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। পর্যটনবান্ধব উদ্যোগে বদলে এরইমধ্যে বদলে যেতে শুরু করেছে শহর, অচিরেই পর্যটনের নতুন দিগন্তে বদলে যাবে এ শহর, এ অঞ্চল। এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার বাসিন্দাদের।

গ্রিন সিটির সৌন্দর্য

প্রাচীন স্থাপনাসহ পরিকল্পিত এই শহরের সৌন্দর্যে এক দশকে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নগরীর পদ্মাপাড়জুড়ে সৌন্দর্যের হাতছানি। এই সৌন্দর্যের মাত্রাকে আরো বাড়িয়েছে প্রশস্ত সড়ক, দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড ও সড়কবাতি, নগর রক্ষা বাঁধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্ক, শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, নভোথিয়েটারসহ সংরক্ষিত পুকুর ও দিঘী। এরইমধ্যে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে এই সৌন্দর্য।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে আনুমানিক ৮০০ মিটার পশ্চিম দিকে প্রধান সড়কের উত্তরে অবস্থিত। শহিদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জিরো পয়েন্ট থেকে আনুমানিক ১০০ মিটার দূরেই পদ্মাগার্ডেন, বড়কুঠি অবস্থিত। এছাড়া প্রধান রাস্তার উত্তর পাশেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্ক অবস্থিত। পাশাপাশি রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারে খুব সহজেই পাঁচ টাকা থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করা যায়।  

রাজশাহী নগর সৌন্দর্যের রূপকার হিসেবে পরিচিতি নগরপিতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, রাজশাহীকে বহুমাত্রিক সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। নগরীর সড়কগুলো এখন একেকটি দর্শনীয় স্থান। হেরিটেজবান্ধব উন্নয়ন কাজ ও বিলুপ্ত প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার নগরীকে আরও বিচিত্র রূপে তুলে ধরেছে। এখনে ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে। তারাও সেবা দিচ্ছে। নগরীর মোড়গুলোকে সাজানো হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে রাজশাহীকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম চাকচিক্যের নগরী করে গড়ে তুলতে কাজ চলমান।

রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থান ও সৌন্দর্য

শুধু রাজশাহী নগর নয়; রাজশাহী জেলাতেও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। রাজশাহী জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে পুঠিয়ায় অবস্থিত ‘পুঠিয়া রাজবাড়ী’। রাজশাহী শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং উত্তর পশ্চিমে দেওপাড়া, কুমারপুর ও বিজয়নগরে ‘পুঠিয়া মন্দির’। গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়ি গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন। বাড়িটি তাহেরপুর বা ভবানীগঞ্জ থেকে ভ্যান, রিকশা, সিএনজি করে আসা যায়।

পুঠিয়ায় রয়েছে সাধনপুর পঙ্গু শিশু নিকেতন। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে পুঠিয়া উপজেলাধীন তারাপুর মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে এক কিলোমিটার হেঁটে অথবা রিকশাযোগে যাওয়া যায় হাওয়াখানায়। নগরী থেকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মোহনপুর উপজেলা থেকে আড়াই কিলোমিটার উত্তর দিকে সইপাড়া; সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই ‘তুলসি ক্ষেত’। রয়েছে নিশিন্দা রাজের ধ্বংসস্তূপ। এটি তাহেরপুর পৌরসভার পাশেই অবস্থিত। এছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলা সদর ডাইংপাড়ার আট কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত দিগরাম খেঁজুরতলায় সাফিনা পার্ক, উপজেলার ডাইংপাড়ায় সরমংলা ইকোপাকসহ বরেন্দ্রের প্রতিটি সড়কে ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্যের পরশ পাওয়া যায়।

নাটোর

নাটোর জেলাও দর্শনীয় ও স্থাপত্যে সমৃদ্ধ জেলা। এই জেলায় রয়েছে, উত্তরা গণভবন, চলন বিল, চলন বিল জাদুঘর, চাপিলা শাহী মসজিদ, দয়ারামপুর রাজবাড়ি, ফকিরচাঁদ বৈষ্ণব গৈাঁসাইজির আশ্রম, বনপাড়া লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী, রাণী ভবানীর রাজবাড়ী, শহিদ সাগর, হালতি বিল, গ্রিনভ্যালি পার্কসহ নানা দর্শনীয় স্থান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে রয়েছে ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ, এছাড়া শিবগঞ্জে রয়েছে কোতোয়ালি দরওয়াজা, খঞ্জনদীঘির মসজিদ, চামচিকা মসজিদ, সোনা মসজিদ, তোহখানা কমপ্লেক্স, তিন গম্বুজ মসজিদ, দারসবাড়ী মসজিদ, বাবু ডাইং, বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি, ষাঁড়বুরুজসহ নানা স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান।

নওগাঁ

নওগাঁয় রয়েছে আলতাদিঘী, কুসুম্বা মসজিদ, জগদ্দল বিহার, জবাইবিল, দিব্যক জয়স্তম্ভ, পতিসর কাচারি বাড়ি, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বলিহার রাজবাড়ী, ভীমের পান্টি, মাহি সন্তোষসহ নানা দর্শনীয় স্থান।

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে রয়েছে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু, মখদুম শাহের মাজার, রবীন্দ্র কাচারি বাড়ি, চলন বিল, যাদব চক্রবর্তী নিবাস, ইলিয়ট ব্রিজ, শাহজাদপুর মসজিদ, জয়সাগর দিঘী, নবরত্ন মন্দির, ছয়আনি পাড়া দুই গম্বুজ মসজিদসহ নানা স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান।

পাবনা

পাবনায় রয়েছে আটঘরিয়া বংশীপাড়া গ্রামের চন্দ্রাবতীর ঘাট, ঈশ্বরদী রেল জংশন, এডরুক লিমিটেড, কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের স্মৃতি সংগ্রহশালা, ক্ষেতুপাড়া জমিদার বাড়ি, গজনার বিল, চাটমোহর শাহি মসিজদ, জোড় বাংলা মন্দির, তাড়াশ জমিদার ভবন, তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি, পাকশীস্থ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, পাবনার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প, প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক নিবাসসহ নানা দর্শনীয় স্থান।

বগুড়া

বগুড়া জেলায় রয়েছে ঐতিহাসিক যোগীর ভবনের মন্দির, জয়পীরের মাজার, দেওতা খানকাহ্ মাজার শরিফ, পাঁচপীর মাজার কাহালু, বাবুর পুকুর গণকবর, মহাস্থানগড়, সান্তাহার সাইলো, সারিয়াকান্দির পানি বন্দরসহ নানা স্থাপনা।

জয়পুরহাট

জয়পুরহাট জেলায় রয়েছে আছরাঙ্গা দিঘী, ঐতিহাসিক নান্দাইল দিঘী, গোপীনাথপুর মন্দির, নিমাই পিরের মাজার, পাঁচবিবি উপজেলার প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি পাথরঘাটা, বার শিবালয় মন্দির, লাকমা রাজবাড়ি, হিন্দা-কসবা শাহি জামে মসজিদসহ নানা দর্শনীয় স্থান।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়