ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

ফাহাদের টেলিস্কোপে দেখা যাচ্ছে মহাকাশ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ২২ এপ্রিল ২০২৪  

ফাহাদের টেলিস্কোপে দেখা যাচ্ছে মহাকাশ

ফাহাদের টেলিস্কোপে দেখা যাচ্ছে মহাকাশ

কুড়িগ্রামের রাজারহাটের প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের এক কিশোর ফাহাদ আল ফারাবী (১৬)। তার হাতে তৈরি টেলিস্কোপের মাধ্যমে খালি চোখে মহাকাশের চাঁদ-সূর্যের ছবি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ-সূর্য স্পষ্টভাবে দেখতে প্রতিদিন শত শত লোক ভিড় করছেন। সে পোষা বিড়ালের নামে টেলিস্কোপটির নাম দিয়েছে নিকো-কে-১। মেধা ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে টেলিস্কোপ বানানোর এমন প্রতিভা দেখে খুশি স্বজনরা।

ফাহাদ আল ফারাবী রাজারহাট উপজেলার মেকুটারী গ্রামের জয়নুল আবেদীন ও পারভীন খন্দকারের ছোট ছেলে। সে রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

ফারাবী ছোটবেলা থেকেই মহাকাশ সম্পর্কে জানতে খুবই আগ্রহী ছিল। বইয়ের পাতায় গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহের অবস্থান পড়ে দেখার খুব ইচ্ছে হয়। ২০২১ সালের শেষে টেলিস্কোপ বানানোর সরঞ্জাম সংগ্রহে নেমে পড়ে। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, টেলিস্কোপ কিনতে পাওয়া যায়। বাজারে একটি টেলিস্কোপের দাম ৪০-৫০ হাজার টাকা। শিক্ষার্থী হয়ে এত টাকা সংগ্রহ করতে পারবে না বলে ২০২৩ সালে নিজেই টেলিস্কোপ বানাতে শুরু করে।

এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাকে সহযোগিতা করেছিলেন ফারাবীর বড় ভাই ফাহমিদ আল জাবের। তিন মাসের মধ্যে টেলিস্কোপ বানাতে পেরে খুশি ফারাবী।

ফারাবী বলে, ছোটবেলা থেকে আমার ইচ্ছে ছিল মহাকাশ নিয়ে কাজ করার। এস্ট্রোনমি ইনস্ট্রুমেন্ট না থাকায় কাজ করতে পারিনি। ২০২৩ সালে ঢাকার এক এস্ট্রনোমি হাউস থেকে যন্ত্রপাতিগুলো সংগ্রহ করে টেলিস্কোপটি বানাতে সক্ষম হই।

ফারাবী আরও বলে, টেলিস্কোপটি তৈরি করতে মূলত পিভিসি পাইপ, লেন্স, মাউন্ট, ফোকাল, অ্যাপারচার, মিরর, ফোকাসার, মেটাল থ্রিডি স্পাইডার ও কাঠের প্রয়োজন হয়েছে। টেলিস্কোপটির ওজন মাত্র ১২ কেজি। এটির মাধ্যমে ৩ লাখ কিমি দূর থেকে দৃশ্য ধারণ করা যায়। ভবিষ্যতে আরও উন্নত টেলিস্কোপ ও মাইক্রো টেলিস্কোপ বানানোর ইচ্ছে আছে। এ ছাড়া সরকারি সহযোগিতা পেলে মানুষের কাছে স্বল্পদামে টেলিস্কোপ পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করব।

ফারাবীর বাবা জয়নুল আবেদীন বলেন, সে যখন টেলিস্কোপ বানানোর কাজ শুরু করে, তখন কিছুটা বিরক্তি লেগেছিল। অবসর সময়ে বাইরে আড্ডা না দিয়ে ঘরে বসে এটি তৈরি করতে ব্যস্ত থাকায় ভালো লাগতে শুরু করে। ফারাবী দাবা খেলায় খুবই পারদর্শী। জেলাপর্যায়ে ও রাজধানীতে দাবা খেলে নগদ অর্থ পুরস্কার পায়। সেই অর্থ দিয়ে টেলিস্কোপ বানানো শুরু করলে আমি তাকে বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করি। টেলিস্কোপটি বানাতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টাকা। বাজারে এই মানের টেলিস্কোপের দাম ৪০-৫০ হাজার টাকা। ফারাবী আরও ভালো কিছু করুক এ প্রত্যাশা করি সবসময়।

ফারাবীর বন্ধু রাফিউল ইসলাম রাব্বি বলে, টেলিস্কোপ বানানোর কাজে প্রায় সময় তার পাশে ছিলাম। যেদিন টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ-সূর্য খালি চোখে স্পষ্টভাবে দেখলাম, তখন খুবই ভালো লেগেছে।

রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ফারাবী ভালো ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ কাজে তার বেশ আগ্রহ। সে আরও ভালো কিছু করুক এ কামনা করছি।

রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. আয়শা সিদ্দিকা বলেন, এই বয়সে বাইরে আড্ডা না দিয়ে ঘরে বসে মেধার বিকাশ করতে টেলিস্কোপ বানানোর কাজটি খুবই প্রশংসার দাবিদার। সরকারি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ফারাবীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়