ঢাকা, রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

পূর্ণ শহরের আদলে গড়া হচ্ছে একটি গ্রাম

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৩  

পূর্ণ শহরের আদলে গড়া হচ্ছে একটি গ্রাম

পূর্ণ শহরের আদলে গড়া হচ্ছে একটি গ্রাম

রাজশাহীর একটি উপজেলার নাম বাগমারা। রাজশাহী শহর থেকে এ উপজেলা সদরের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। সর্বহারা ও জঙ্গি অধু্যুষিত এলাকা হিসেবে সারাদেশের মানুষ জানত এই বাগমারাকে। রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত সেই বাগমারা এখন বদলে গেছে সবদিক দিয়ে। এ উপজেলার মানুষ এখন শহরের সুবিধা পাচ্ছেন। উন্নয়নের কারণে এখন পাল্টে গেছে এ উপজেলার সার্বিক জীবনযাত্রা।

যে বাগমারা একসময় ছিল দুর্গম। রক্তের হোলি খেলা চলত দিনে-রাতে। রাতের বেলা তো দূরের কথা- দিনের বেলা মানুষ একা চলতে ভয় পেত। প্রতিদিন সকালে শোনা যেত হত্যা, খুন আর রাহাজানির খবর। সেই বাগমারায় এখন এসবের বালাই নেই। সুখে আছেন এখানকার মানুষ। শিক্ষা-দীক্ষা, কৃষি থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও যোগাযোগ অবকাঠামোর কারণে সবদিক থেকে এগিয়ে গেছে। এ উপজেলার একটি গ্রামকে পূর্ণ শহরের সুবিধায় সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বাগমারায় রাজত্ব কায়েম করেছিল সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী। সে সময় বাগমারা ছিল অন্ধকার জনপদ। মানুষ চাইলেও দিনের বেলাতেও রাস্তা-ঘাটে চলাচল করতে পারত না। নারী শিক্ষা ছিল অভিশাপ। ঘরে ঘরে মায়েরা শিশুদের ঘুম পাড়াতেন বাংলাভাইয়ের নির্মমতার গল্প শুনিয়ে। অথচ এখন এখনকার মানুষ উন্নয়নের কাছে ভুলে গেছেন অতীতের ভয়াবহতা।

১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বিশাল উপজেলা বাগমারা। এখানে প্রায় চার লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এ উপজেলা নিয়ে এখন একটি সংসদীয় আসন রাজশাহী-৪। কৃষি এখানকার প্রধান জীবিকা হলেও এখন পাল্টেছে কৃষির ধরনও। ১৯৮৩ সালে বৃহত্তর এই জনপদটি উপজেলার মর্যাদা পেলেও দীর্ঘদিন উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত রয়ে যায়। বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের সময়ে দুঃশাসনের উত্থান ঘটে বাগমারায়। পরিণত হয় রক্তাক্ত জনপদে। বাংলাভাই এই বাগমারাতেই প্রথম আস্তানা গড়ে তোলে। সর্বহারাদেরও উর্বর ঠিকানা ছিল বাগমারা। কারণ এ উপজেলা ছিল বিচ্ছিন্ন। রাস্তা-ঘাট ছিল না। বাগমারাকে একটি রক্তাক্ত ও সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে পরিচিতি করে তোলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর একে একে বাগমারার মানুয়ের আশা-আকাঙ্ক্ষার লালিত স্বপ্নকে সুখী ও সমৃদ্ধ বাসযোগ্য করে গড়ে তোলেন । গত ১৫ বছরে বিচ্ছিন্ন ও অন্ধকার, দুর্গম বাগমারা উপজেলাকে আধুনিক রূপে গড়ে তুলেছেন তিনি। বর্তমান সরকারের সময়ে অবিশ্বাস্য উন্নয়নে বদলে গেছে গ্রামীণ প্রান্তর। এখন রাজশাহী শহরের মতো এখানকার মানুষ সব আধুনিক সুবিধা ভোগ করছেন। একমাত্র কোর্ট-কাচারির কাজ ছাড়া এখানকার মানুষকে আর শহরে আসতে হয় না। এ উপজেলার একটি গ্রামকে পূর্ণ শহর হিসেবে গড়ার কাজ চলছে।

জানা গেছে, বাগমারা উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ও প্রত্যন্ত গ্রাম হিসেবে সোনাডাঙ্গা গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের এই গ্রামটিকে মডেল গ্রাম হিসেবে শহরের আদলে প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর নামকরণ করা হবে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’। এ কাজ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। সম্প্রতি রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হক এ তথ্য জানান।

উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) বিভাগ জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সোনাডাঙ্গা গ্রামকে শহরের আদলে প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য উপজেলা সদরের সঙ্গে এ গ্রামের সরাসরি সংযোগ সৃষ্টির জন্য চার লেনবিশিষ্ট একটি পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া এ গ্রামে একটি দৈনন্দিন মার্কেটসহ একটি হাসপাতাল, একটি আশ্রয় কেন্দ্র, একটি শিশুপার্ক ও একটি মিনি স্টেডিয়াম স্থাপন করা হবে। এটি তো শহর হচ্ছেই পাশাপাশি বাগমারা উপজেলার অনেক গ্রাম এখন শহরের সুবিধা ভোগ করছে। উপজেলা সদরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল বাণিজ্য কেন্দ্র।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে এ উপজেলা বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে। রাস্তাঘাট নির্মাণ, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণসহ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে। উন্নয়নের কারণে বাগমারা আজ তার রক্তাক্ত অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা ও শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে। বাগমারা উপজেলা এখন জাতীয় পর্যায়ে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি, আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শনসহ স্বাধীনতার ইতিহাসকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট সঠিক ভাবে তুলে ধরতে এ উপজেলা গড়ে তোলা হয়েছে ছয়তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স।

স্মৃতি কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। কমপ্লেক্সটি ইতোমধ্যে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলসহ সর্বস্তরের জনগণ কর্তৃক ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদচারণায় মুখরিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানামুখী উন্নয়নে পাল্টে গেছে এ উপজেলা। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও বিস্তারে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। উপজেলায় ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, ১০টি মাদ্রাসা ভবন, ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে ‘ডিজিটালাইজেশন’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় উপজেলায় একটি দ্বিতল বিশিষ্ট আইসিটি ভবন (ডিজিটাল ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার) নির্মাণ করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত শিক্ষায় গতি আনতে ২২ টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব এবং ১টিতে স্কুল অব ফিউচার স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া, শিক্ষা প্রণোদনা কর্মসূচি যেমন বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে দরিদ্র ও অবহেলিত শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাগমারার বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০ ভাগ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯৫% ছাত্র/ছাত্রী বিদ্যালয়গামী হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ৭৩ হাজার ৬২০ জন প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। টাকার অঙ্কে বলতে গেলে সেটার পরিমাণ ৯১ কোটি ৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বাগমারা উপজেলাকে ডিজিটাল মডেল উপজেলায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে একটি অত্যাধুনিক উপজেলা কমপ্লেক্স ও ১৪টি ইউনিয়ন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে এবং আরও ২টি নতুন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। সকল ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার চালুর ফলে গ্রামের কৃষক, মজুর, চাকরিজীবীসহ সবার জন্য দেশে-বিদেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানসহ সার্বিক যোগাযোগ অনেক সহজতর হয়েছে। বাগমারায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড গৃহীত হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রসারিত কমপ্লেক্সের আসন সংখ্যা ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়া, ১১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে উপজেলার পিছিয়ে পড়া ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাগমারা উপজেলায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ২০০৮ সালের আগে তিনটি ইউনিয়নে কোনো পাকা রাস্তা ছিল না। বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাগমারার ভবানীগঞ্জ সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন।

এ আসনের এমপি প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, গত ১৫ বছর ধরে তিনি উপজেলার উন্নয়ন করে গেছেন। এখন এ উপজেলার মানুষ সব ধরনের সুবিধা ভোগ করছেন। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, বাগমারার মানুষ একসময় সবচেয়ে অসহায় ছিল। গত ১৫ বছরের ব্যবধানে তারা এখন সবচেয়ে সুখী। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়