ঢাকা, রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

জিআই পণ্যে এগিয়ে উত্তরাঞ্চল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

জিআই পণ্যে এগিয়ে উত্তরাঞ্চল

জিআই পণ্যে এগিয়ে উত্তরাঞ্চল

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আকর দেশের উত্তরাঞ্চল ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতিতেও এগিয়ে রয়েছে। দেশের মোট ১৭ টি জিআই পণ্যের মধ্যে ৭ টিই উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর। স্থানীয় প্রশাসন, গবেষক, চাষি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় একের এক জিআই স্বীকৃতিতে খুশি এ অঞ্চলের মানুষ।  

জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদফতর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদন, জার্নাল প্রকাশসহ দীর্ঘ পরিক্রমায় জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মেলে। জিআই পণ্যের এই স্বীকৃতি তালিকায় রাজশাহী জেলার দুটি পণ্য রয়েছে। একটি ‘রাজশাহী সিল্ক’ অন্যটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ যৌথভাবে ফজলি আম। এছাড়া রাজশাহীর পানের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে সম্প্রতি আবেদন করা হয়েছে। এটিরও খুব দ্রুতই স্বীকৃতি মিলবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

একক জেলা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সর্বোচ্চ চারটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি জাতের আম নিয়ে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জিআই পণ্যের তালিকায় উপরে রয়েছে। এই জেলার জিআই পণ্যগুলো হলো- খিরসাপাত আম, ল্যাংড়া আম, আশ্বিনা আম। বগুড়ার দই ছাড়াও জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে নাটোরের কাঁচাগোল্লার।

রাজশাহী সিল্ক:

রাজশাহীর সিল্ক ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল রয়েছে। এপার বাংলা ওপার বাংলা-দুই বাংলাতেই এই সিল্কের বেশ কদর রয়েছে। ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী সিল্ককে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী। ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় রাজশাহী সিল্ক। বাঙালির উৎসব-পার্বনে অভিজাত্যের প্রতীক রাজশাহীর সিল্ক।

খিরসাপাত আম:

রাজশাহী অঞ্চলের জিআই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম। খিরসাপাত জাতের আমটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবেদন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এরপরে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় এটি। আমটি গোল ও মাঝারি আকৃতির। রসাল আমটির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশহীন। আর গন্ধ বেশ আকর্ষণীয়। খিরসাপাত আম স্বাদে খুব মিষ্টি। ফলের খোসা সামান্য মোটা, তবে আঁটি পাতলা। সাধারণত জুন মাসের শুরু থেকে আম পাকা শুরু করে। এই আমের ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ব হতে দরকার হয় চার মাস। তবে গবেষকরা এই আমটি বারোমাস চাষ করা যায় কি না তা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

ফজলি আম:

২০১৭ সালের ৯ মার্চ ‘ফজলি আম’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করে রাজশাহী ফল গবেষণা  কেন্দ্র। তবে ফজলি আম নিয়ে নিয়ে আপত্তি তোলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সব বির্তক মাড়িয়ে ফজলি আম রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২০২২ সালের ২৯ মে।

ফজলি আমের আদি নাম ফকিরভোগ। এ ফল দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে পাওয়া যায়। ফজলি আম দীর্ঘ এবং ঈষৎ চ্যাপ্টা। পাকা আমের খোসা কিছুটা হলুদ হয়ে ওঠে। শাঁস হলুদ, আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি। আঁটি লম্বা, চ্যাপ্টা ও পাতলা। এই আমে শর্করার পরিমাণ ১৭.৫ শতাংশ। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বা জুলাই এর মাঝামাঝিতে ফজলি আম পাকতে শুরু করে।

বগুড়ার দই:

২০১৮ সালে ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বগুড়া জেলা শাখা ‘বগুড়ার দই’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন করে। ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বগুড়ার দই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাই। বগুড়া জেলার নাম শুনলে দইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। ঐতিহ্যবাহী এ খাবার দেশব্যাপী কদর রয়েছে। সুনাম আর স্বাদে বগুড়ার দই অনন্য। জেলার বিভিন্ন উপজেলায়, গ্রামেগঞ্জে গিয়ে কারখানায় সেরা দুধ আনা হয়। এরপরই শুরু হয় মূল প্রক্রিয়া। বগুড়ার বেশির ভাগ কারখানাতেই সনাতন পদ্ধতিতে দই প্রস্তুত করা হয়।

ল্যাংড়া আম:

আমের তিন শতাধিক প্রজাতির মধ্যে ব্যতিক্রমী ল্যাংড়া। এই আমের স্বাদ ও গুণ অন্য সব আমের থেকে ব্যতিক্রম। ল্যাংড়াকে ফলের রাজাও বলা হয়। ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আমকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ল্যাংড়া আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় ২০২৩ সালের ৫ জুলাই।

আশ্বিনা আম:

২০১৮ সালে পহেলা জানুয়ারি আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন করে। ২০২৩ সালের ২৫ জুন আশ্বিনা আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়। অন্য সব আম গাছের সঙেগ্ মুকুল আসে আশ্বিনার। তবে এ জাতের আম গাছে থাকে সাধারণত আগস্ট মাস পর্যন্ত। কিছু কিছু এলাকায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আম পাওয়া যায়।

কাঁচাগোল্লা:

কাঁচাগোল্লার আর্বিভাব বেশ নাটকীয়। তবে এই কাঁচাগোল্লার কদর পুরো দেশব্যাপী। মূলত ছানার সঙ্গে পরিমাণমত চিনিযুক্ত করেই এই কাঁচাগোল্লা তৈরি করা হয়। চলতি বছরের ৮ আগস্ট জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা। এর আগে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ নাটোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জিআই পণ্য হিসেবে নাটোরের কাঁচাগোল্লার স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন।এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, এক্সপোর্ট আইটেম যত বেশি হবে অর্থনীতি তত শক্তিশালী হবে। দেশ, অঞ্চল বা শহর জলবায়ু, সংস্কৃতির সঙ্গে অনন্য বৈশিষ্ট্য হলে তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতির পায়। এই স্বীকৃতি রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ অঞ্চলের আরও বেশকিছু পণ্য আছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোও স্বীকৃতি মিলবে বলে আশাবাদী তিনি। 

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়