ঢাকা, রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

উপহারের ঘরে হাসি ৬০০ পরিবারে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১১ আগস্ট ২০২৩  

উপহারের ঘরে হাসি ৬০০ পরিবারে

উপহারের ঘরে হাসি ৬০০ পরিবারে

বাবুল তালুকদার (৫৯) ও ছবি রানী (৫০) দম্পতি। দুজনই সুবর্ণ নাগরিক। শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবুল আগে রেডিও-টেলিভিশনের মেকানিক ছিলেন। কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় ছবি রানীর কর্মক্ষমতা নেই। এক ছেলে বেকার। মেকানিকের আয় আর দুজনের প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে বরিশাল মহানগরের জেলেবাড়ির পোল এলাকায় একটি ঘরে ভাড়া থেকে দিন পার করতেন চরম অনিশ্চয়তায়। সেই বাবুল তালুকদার আর ছবি রানী প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন সদর উপজেলার গিলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এখন তাদের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ।

বাবুল তালুকদার বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারি। তাঁকে ধন্যবাদ।’ তাঁর মতো শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বিভিন্নভাবে অসহায় দুস্থ প্রায় ৬০০ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন সদর উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ঘরের পাশে শাকসবজি, ফলদ গাছ লাগিয়ে এবং হাঁস-মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে অসহায় পরিবারগুলো।

মানুষের কাছে হাত পেতে চলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. রানা। বিধবা মা হোসনে আরা বেগমের পান-সিগারেট বিক্রি আর ভিক্ষার অর্থে নগরীর পুরান বাকলা এলাকায় ৫ হাজার টাকায় ঘর ভাড়ায় থাকতেন তারা। সেই রানাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার। শনিবার সকালে ওই ঘরে দেখা হয় রানা ও তার মায়ের সঙ্গে। রানার মা হোসনে আরা বলেন, ‘আগে থাকার মতো কোনো স্থান ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর উসিলায় এখন থাকার ব্যবস্থা হইছে।’ নগরের কাশীপুরে রাস্তার পাশে টংঘরে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন সত্যরঞ্জন দাস। অ্যাজমা রোগী হওয়ায় কাজে অক্ষম। নির্মাণশ্রমিক স্ত্রীর আয়ে চলে তাদের দিনকাল। গিলাতলীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা তিনি। নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর চরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুর রাজ্জাক। রাজ্জাক বলেন, ‘আগে এহানে ওহানে ভাড়া থাকতাম। এখন প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছেন। ঘরের চারপাশে শাকসবজি লাগিয়ে খেতে পারি। ঘর ভাড়া দেওয়া লাগে না। এর চেয়ে শান্তি কী আছে?’ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা পারভিন বেগম দুই সন্তানের জননী। স্বামী ভাঙারি ফেরি করেন। মাসে ৩ হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন নগরের পলাশপুরে। তারাও পেয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। পারভিন বলেন, এখন ভাড়ার ঝামেলা নেই। তবে আশপাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় সন্তানকে স্কুলে দিতে পারছেন না। পারভিনের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা বলে, ‘বাসায় পড়াশোনা করছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছাকাছি স্কুল হলে ভালো হয়।’ বিধবা বিথি বেগম মেয়ে নিয়ে থাকতেন বাপের বাড়ি। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে সুখেই কাটছে তার দিন। বিথি বলেন, ‘দোয়া করি প্রধানমন্ত্রীরে।’ পক্ষাঘাতগ্রস্ত (পায়ে সমস্যা) মিলন কাজী দুই সন্তানের জনক। অন্যের জমিতে আশ্রিত থেকে একটি দোকানের কর্মচারী হিসেবে চলে তার দিনকাল। সেই মিলনও ঘর পেয়েছেন গিলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাইয়া উপকার হইছে। এমন ঘর আমরা জীবনেও করতে পারতাম না।’ সদর উপজেলার দিনার এলাকায় অন্যের জমিতে খুপরি ঘর তুলে তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন উজ্জ্বল বেগম। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে শান্তিতে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে ভিতরের রাস্তা তলিয়ে যায়। কাঁদা হয়।’ তিন সন্তানের জননী বৃদ্ধা বিধবা রিজিয়া বেগম বলেন, ‘আগে অন্যের বাড়িতে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী একটা ঘর দিছে। ঘরের পাশে জমিতে পুঁই, লাউ, পেয়ারা, আমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি লাগিয়েছি।’ ভলোই কাটছে তার দিনকাল। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের জন্য এলজিইডি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অক্টোরের মধ্যে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর চেষ্টা চলছে।’

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়