ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঈদ উপলক্ষে মৌলভীবাজারে হাজারো পর্যটক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২০, ৬ মে ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারি শেষে একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ও আনন্দ পেতে ঈদের ছুটিতে হাজারো পর্যটক মৌলভীবাজারে এসেছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্যমতে গত তিন দিনে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক এ জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করেছেন। পর্যটকদের আগমনে জেলার অধিকাংশ রিসোর্ট- কটেজ হোটেল-মোটেল শতভাগ পরিপূর্ণ হয়েছে। 

মৌলভীবাজার জেলার প্রতিটি উপজেলায় ছোট বড় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে জেলার প্রত্যেক উপজেলার যেদিকে চোখ পড়বে, দেখা মিলবে সবুজ সারি সারি চা বাগান। প্রায় প্রতিটি চা বাগানের মধ্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেক। এরমধ্যে অনেকগুলো চা বাগানের লেকে রয়েছে নানা ধরনের শাপলা ও পদ্ম, যা চা বাগানের সৌন্দর্যের সাথে সাথে লেক ও লেকের পদ্ম- শাপলা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। 

মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা কমলগঞ্জ। এ উপজেলায় রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, গভীরে অরণ্যের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আধার হামহাম জলপ্রপাত। টিলার মধ্যে  চা বাগান, লেক পদ্ম- শাপলার সমন্বয়ে নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, প্রাণ প্রকৃতিতে সমৃদ্ধ আদমপুর বনবিট। এই স্থানগুলো পর্যটকরা বেশি ভ্রমণ করে থাকেন। 

এছাড়া মণিপুরি, খাসিয়া, গারো সহ শত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস এ জেলাকে করেছে সমৃদ্ধ। তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে, বিশেষ করে মণিপুরি শাড়িসহ তাদের উৎপাদিত পণ্য। জেলার মধ্যে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, মাছ- পাখির অভয়াশ্রম বাইক্কাবিল, জলের গ্রাম অন্তেহরী, স্লুইস গেট, কমলারানীর দীঘি, মাথিউরা চা ও রাবার বাগান, ৭১ বধ্যভূমি, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক এবং ছোট বড় হাজারো পাহাড় টিলায় পর্যটকরা এই ঈদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

মৌলভীবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্যমতে, এ বছর স্থানীয় ও পর্যটকদের ঢল নামে ফলে জেলার ছোট বড় সব বিনোদন কেন্দ্র মুখরিত হয় পর্যটকদের পদচারণায়। এক সঙ্গে এতো পর্যটকের ঢল গত তিন বছরে নামেনি।

ঢাকা থেকে স্বপরিবারে  ঘুরতে আসা পর্যটক নাজিয়া আক্তার জানান, করোনার পর নিঃস্বাস ফেলতে এ সবুজের রাজ্যে এসেছি। মৌলভীবাজার আমার প্রিয় একটি জায়গা। যেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে আর সবুজের সমারোহ। এই সবুজে মনে হয় সারাজীবন থাকতে পারলে ভালো লাগতো।

ঢাকা থেকে আগত আরেক পর্যটক সায়মন হোসাইন বলেন, মৌলভীবাজার এলাকাটি যেমন সুন্দর তেমনি নিরাপদ। এখানে থাকার জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট রয়েছে যা ঘুরানোর আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।

রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা সাবরীনা আক্তার বলেন, মৌলভীবাজার অনেক সুন্দর জায়গা বরাবরই ভালো লাগে। কিন্ত এখানে খরচ বেশি হয়ে যায়। এখানকার রিসোর্টগুলো অনেক সুন্দর কিন্তু ভাড়া বেশি। ভাড়া যদি কম হয় তাহলে দুদিনের জায়গায় তিনদিন থাকা যায়।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট সুপারভাইজার শাহিন আহমেদ জানান, করোনার পর পর্যটকদের স্মরণকালের সর্বোচ্চ উপস্থিতি ছিলো লাউয়াছড়ায় । গত তিন দিনে শুধু টিকেট বিক্রি হয়েছে তিন লক্ষাধিক। তবে এ বছর বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি অনেক কম ছিলো।

রিসোর্ট মালিক শামসুল ইসলাম বলেন, আমরা রিসোর্ট অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছি, করোনায় অনেক ক্ষতি করেছে। আমার দুটি রিসোর্ট রয়েছে। এই ঈদে দুটিই শতভাগ পরিপূর্ণ হয়েছে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে। ১০ মে পর্যন্ত আমার রিসোর্টে কোনো সিট খালি নেই। করোনার পর এ বছর শতভাগ পরিপূর্ণ হয়েছে রিসোর্ট। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ । 

ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার এস এম আহসান হাবিব জানান,  গত তিন দিনে মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ৩০ হাজার ভ্রমণপিপাসু ভ্রমণ করেছেন। আমরা ৫০ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ পুরো জেলায় দায়িত্ব পালন করছি,  কিন্ত এ বছর হঠাৎ দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। তারপরও তাদের আনন্দদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে এবং নিরাপত্তা বিধানে সক্রিয় ভাবে কাজ করছি। 

মৌলভীবাজারে চা বাগানের বুকে নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত, নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়