ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ইফতারের বিধি-বিধান

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ১৫ মার্চ ২০২৪  

ইফতারের বিধি-বিধান

ইফতারের বিধি-বিধান

সূর্যাস্তের পর রোজা ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে কিছু খাওয়াকে ইফতার বলে। ইফতার করা সুন্নত। খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম।

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম একটি স্তম্ভ। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা রোজার প্রতিদান নিজ হাতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মানুষ ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন রাত সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন রোজাদার ইফতার করবে’। (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩০)

ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে পর্যন্ত দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে, যে পর্যন্ত মানুষ শিগগির ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বিলম্বে ইফতার করে’। (মুসনাদে আহমাদ)

এবার আসুন, ইফতারের বিধি-বিধান জেনে নিই

অন্যকে ইফতার করানোর ফজিলত: হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ৩টি পুরস্কারে ভূষিত হবে। (এক) তার সব সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (দুই) জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ মিলবে। (তিন) ওই রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে, এতে রোজাদারের সওয়াবে কোনো কমতি হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেকের তো এই সামর্থ্য নেই যে, রোজাদারদের ইফতার করাবো। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি একটি খেজুর দিয়ে বা এক ঢোক পানি দিয়ে কাউকে ইফতার করাবে সেও এ সওয়াব লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহ তাআলা তাকে হাউজে কাউসার থেকে এমন পানি পান করাবেন, যা পান করার ফলে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে তার কোনো পিপাসাই লাগবে না। (বায়হাকী)।

ইফতার করার মুস্তাহাব সময়: সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর দেরি না করে দ্রুত ইফতার করে নেয়া মুস্তাহাব। (সহিহ বুখারি : হাদিস ১৯৫৭, রদ্দুল মুহতার: ৩/৪০০)

মসজিদে ইফতারির আয়োজন করা: রমজান মাসে মসজিদে ইফতারির আয়োজন করা ও এলাকার লোকজন সম্মিলিতভাবে মসজিদে ইফতার করা জায়েজ আছে। তবে এ কারণে মসজিদে শোরগোল করা, মসজিদ ময়লাযুক্ত করা ও মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হয় এমন সব কাজ করা মসজিদের আদবের পরিপন্থী। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩২১, রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৪০)

রমজান মাসে মাগরিবের জামাত কতক্ষণ পর করবে: রমজান মাসে ইফতার করে এসে জামাতে শরীক হতে কিছুটা বিলম্ব হয় বিধায় মাগরিবের জামাত আজানের কিছুক্ষণ পরে শুরু করা যাবে। স্থান-কাল ভেদে এর পরিমাণ ১০/১৫ মিনিট বা এর চেয়ে সামান্য বেশ-কমও হতে পারে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া: ১/১৫৯)

বিমানে আরোহী ব্যক্তির ইফতারের সময়: ইফতারের আগে বিমানে অনেক উপরে উঠার কারণে যদি সূর্য দেখা যায় তাহলে স্থলের সময় অনুযায়ী ইফতারের সময় হয়ে গেলেও বিমানে আরোহনকারীর জন্য সূর্য দেখা অবস্থায় ইফতার করার অবকাশ নেই। এমতাবস্থায় সূর্যাস্ত নিশ্চিত হওয়ার পরেই সে ইফতার করবে। (রদ্দুল মুহতার: ৩/৪০০, আপকে মাসায়িল: ৩/২৭০)

বিমান চলার কারণে যদি দিন ছোট বা বড় হয়: রোজা রেখে বিমানে পশ্চিম দিকে সফরের কারনে যদি দিন দীর্ঘায়িত হয় তাহলে তার রোজাও দীর্ঘায়িত হবে। হ্যাঁ যদি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্তও সূর্য না ডুবে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার এতটুকু সময় পূর্বে ইফতার করে নিবে যতটুকু সময়ের মধ্যে প্রয়োজন পরিমাণ খানা-পিনা করা যায়। পক্ষান্তরে যদি রোজা রেখে বিমানে পূর্ব দিকে সফরের কারণে দিন ছোট হয়ে যায় তাহলে যখন সুর্য ডুবে যাবে তখনই সে ইফতার করে নিবে। (আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৭০-৭১, জাদীদ ফিকহী মাসায়িল: ১/১৭৮)

ইফতারের দোয়া: হাদিসে বর্ণিত আছে, ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দোয়া কবুল হয়, তাই ইফতারের পূর্বমুহূর্তে বেশি বেশি দোয়া করার প্রতি মনোনিবেশ করা চাই। নিচের দোয়াটিও বিশেষভাবে পড়া যায়।

اَلْحَمْدُ للهِ اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْئَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْئٍ أنْ تَغْفِرَلِيْ

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও’। (সুনানে ইবনে মাজাহ: হাদিস নম্বর: ১৭৫৩)

ইফতারের সময় নিম্নের দোয়া পড়বে

أللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلى رِزْقِكَ أفْطَرْتُ

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্যই রোজা রেখেছি ও তোমার রিজিক দ্বারাই ইফতার করেছি’। (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ২৩৫৮)

ইফতারের পর এই দোয়া পড়বে

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأجْرُ إنْ شَاءَ اللهُ

অর্থ: ‘পিপাসা মিটে গিয়েছে, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ চাহে তো রোজার সওয়াবও লেখা হয়ে গিয়েছে’। (সুনানু আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ২৩৫৭)

অন্যের ঘরে মেহমান হয়ে ইফতার করলে এই দোয়াটি পড়বে

أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ.

অর্থ: ‘নেক বান্দাগণ তোমাদের খাবার খেয়েছেন, ফিরিশতাগণ তোমাদের জন্য দোয়া করেছেন এবং রোজাদাররা তোমাদের ঘরে ইফতার করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নম্বর- ৩৮৫৪)

সর্বশেষ
জনপ্রিয়