ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় উপজেলা আশ্রায়ন প্রকল্পের টাক্সফোর্স কমিটির সভা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫৭, ৫ জুলাই ২০২২  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ অগ্রগতি বিষয়ক উপজেলা আশ্রায়ন প্রকল্পের টাক্সফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত সোমবার (৩ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা বেগম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও নেত্রকোণা- আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল।

অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো.নুরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া, কৃষি অফিসার শাহজাহান কবির, ওসি আলী হোসেন পিপিএম, উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ভূঁইয়া, শহীদুল হক ফকির বাচ্চু, ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বাঙ্গালী,
কেন্দুয়া প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী চৌধুরী কাজল, সিনিয়র সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্ব শর্মা, সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার, বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.কামরুজ্জান ও বলাইশিমুল ইউপির কয়েকজন ইউপির সদস্যগণ।

সভায় তৃতীয় ধাপে উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণাধীন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের ১৯৮ টি ঘরের মধ্যে বলাইশিমুল গ্রামে খেলার মাঠে ২৩ টি ঘর নির্মাণে একটি পক্ষের বাঁধার বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণসহ মাঠের সংস্কার ও উন্নয়নের বিষয়ে সকলেই একমত হন।

বলাইশিমুল ইউপির সদস্যগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত হোক। তারা খেলার মাঠটি সংস্কারসহ খেলা উপযোগী করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি দাবী রাখেন।

বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.কামরুজ্জান বক্তব্যে বলেন, প্রকল্প গ্রহণকালে কেউ বিরোধীতা করেনি। প্রশাসন কাজ শুরুর প্রাক্কালে একটি পক্ষ বিরোধীতা করে। মাঠ রক্ষা নামে যারা আন্দোলন করেছেন তাদের উদ্দেশ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের বিরোধীতা করা। তাঁর ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতে ভিত শক্তিশালী। মূলত: তারাই অদৃশ্য শক্তি হয়ে এই বিরোধীতা করে যাচ্ছে।

আমি বার বার চেষ্টা করেছি তাদের সাথে প্রশাসনে সামনাসামনি করার কিন্তু তারা আসছেন না। তাকে নানাভাবে হুমকী-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার বক্তব্যে বলেন, এই মাঠে প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে দেড়-দুই বছর পূর্ব থেকে। মাঠের মাপজোক হয়েছে বলাইশিমুল বাসী দেখেছেন এবং শুনেছেন তখন কেউ বাঁধা বা প্রতিবাদ করেনি।

প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরুর সময় বাঁধা কেন? বর্তমান ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন। প্রকল্প গ্রহণকালে যদি তারা বাঁধা দিতেন তাহলে আজকে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এখানে মাঠও হচ্ছে আশ্রায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও হচ্ছে এনিয়ে আন্দোলন মানববন্ধন কেন? এটা তাদের একটা ইগো হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এটার বিরোধীতা করতেই হবে। বিরোধীতা না করে আসুন মাঠ সংস্কার করি ও অসহায় মানুষের মাথাগোঁজার ঠাঁইও করে দেই।

উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা শহীদুল হক ফকির বাচ্চু বলেন, আমি ওই ইউনিয়নের সাংগঠনিক দ্বায়িত্বে থাকার কারনে এমপি মহোদয়ের নির্দেশে বলাইশিমুল গ্রামের ৬টি পাড়ার দলমত নির্বিশেষে মুরুব্বী ও নেতৃবৃন্দ সাথে কথা বলেছি। সব মানুষ আন্দোলনের সাথে নেই। যারা আন্দোলন করছেন তাদের সাথেও কথা বলেছি, এমপি সাহেবের সালাম দিয়েছি। তাদের কোন সাড়া পাইনি।

উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা কামরুল হাসান ভূঁইয়া বলেন, আমরা নানাভাবে দেখেছি মাঠ রক্ষা নামে তারা মূলত সরকার বিরোধী আন্দোলনে মেতেছে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। আশ্রায়ন প্রকল্পের কাজের সাথে মাঠের সংস্কার করার দাবী রাখেন তিনি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, মাঠ রক্ষার আন্দোলন নামে তারা ভিন্ন ফায়দা নেয়ার জন্য একটি পক্ষ আন্দোলন করছে। তাদের উদ্দেশ মাঠ রক্ষা নয়। আমরা বার বার তাদের কাছে গিয়ে কথা বলেছি। তাদের কাছে গেলে তারা কথা দেন যে আন্দোলন করবেন না। আমরা চলে আসতেই যেই, সেই। বিচার মানি তাল গাছ আমার। তাদের অবস্থা হলো এই।

এখানে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বব্যাপী সমর্ধিত আশ্রায়ন প্রকল্প সাথে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও পল্লীবিদ্যুৎও প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। খেলার উপযোগী মাঠ রেখেই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। বিরোধীতা না করে প্রকল্পে কাজ ও মাঠ বুঝে নেওয়ার আহবান রাখেন তিনি।

ইউএনও মাহমুদা বেগম তাঁর বক্তব্যে বলেন, এখানে দুই দাগে ১ একর ৮৭ শতাংশ ভূমির মধ্যে ৭৬ শতাংশ ভূমি পাশের ভূমির মালিকগণ দখল করে নিয়েছিল।

প্রথমে ভূমি দখলমুক্ত করা হয়। পরে আশ্রায়ন প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরুর আগের দিন তারা মাঠে মানববন্ধন করে। তারা আমাদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করেনি।

পরেরদিন উপজেলা প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দ আমরা সবাই মাঠে যাই দীর্ঘক্ষণ তাদের সাথে বৈঠক করি এবং তাদের দাবী অনুযায়ী খেলাধুলার জন্য ১ একর ৪১ শতাংশ মাঠে জায়গা রেখে কাজ শুরু করি।

এর পরের দিন তারা আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত দুই দফা সরকারে পক্ষ রায় দেন। এরই মাঝে রাতের আধাঁরে নির্মাণাধীন ঘর ভাংচুর করা হয়। আমরা বার বার তাদের বুঝানো চেষ্টা করেছি। চলে আসলে তারা আর কথা রাখেন না। মাঠের যে দাগটি ওই দাগ থেকে মাত্র ২৫ শতাংশ এবং অন্য দাগ থেকে ২১ শতাংশ মোট ৪৬ শতাংশ জমিতে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আর মাঠের জন্য রাখা হয়েছে ১৪১ শতাংশ জমি।

প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি খেলা উপযোগী মাঠও সংস্কার করা হবে বিষয়টি তাদেরকে আমিসহ এমপি মহোদয় ও জেলা প্রশাসক মহোদয় তাদেরকে কথা দিয়েছেন এরপরেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভার্চুয়ালী বক্তব্যে অসীম কুমার উকিল বলেন, মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে আমি আছি, উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন, ইউএনও আছেন, পৌরসভার মেয়র আছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা আছেন, ইউনিয়নের দলীয় নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা আছেন।

তাদের সাথে খোলামেলা কথা বলতে পারেন। কিন্তু আলোচনায় না বসে আজগোবী অপপ্রচার কোন দায়িত্বশীল নাগরিকের কাজ নয়। বলাইশমুলের খেলার মাঠ নষ্ট হবে না। সেখানে মাঠও রক্ষা হবে একই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য বিশেষ উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজও চলবে।

এরপরেও যদি মাঠ নিয়ে কারো কোন কথা থাকে সে কথা শুনার মানসিকতা আমাদের আছে।

তিনি বলেন, আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। আজকের সভায় যেভাবে সকলে যার যার মতামত তুলে ধরেছেন, তাতে আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজে কোন বাধা আছে বলে আমি মনে করি না। তিনি সকলকে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা জানান । ঈদে কেন্দুয়ার বাড়ীতে থাকবেন সেখানে এ বিষয়ে নিয়েও খোলামেলা কথা বলার আহ্বান রাখেন তিনি।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়