ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

নেত্রকোণা জেলায় হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ, ধান ঘরে তুলে খুশি কৃষক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ৫ মে ২০২৪  

নেত্রকোণা জেলায় হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ, ধান ঘরে তুলে খুশি কৃষক

নেত্রকোণা জেলায় হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ, ধান ঘরে তুলে খুশি কৃষক

নেত্রকোণায় ছোট–বড় ১৩৪টি হাওরে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন নিম্নাঞ্চলের দুই ভাগের মতো খেতে ধান কাটা বাকি আছে। আজ রোববার বা আগামীকাল সোমবারের মধ্যে এসব খেতের শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় কৃষক।

নেত্রকোণার ১০টি উপজেলার মধ্যে মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও কলমাকান্দার আংশিক এলাকা মূলত হাওরাঞ্চল। চারটি উপজেলায় হাওরে এবার ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর খেতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। একমাত্র এই ফসলের ওপর ভিত্তি করে কৃষকদের সারা বছর সংসার খরচ, চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া, আচার-অনুষ্ঠানসহ সবকিছু।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, হাওরের ধান কাটা শেষ। এখন নিম্নাঞ্চলের ১ থেকে ২ শতাংশ খেতে কৃষকদের ধান আছে। এক বা দুই দিনের মধ্যে তা কাটা হয়ে যাবে। হাওরে এবার প্রায় ২ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে বলে জানান তিনি। শ্রমিকের পাশাপাশি সাত শতাধিক কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটা হয়। প্রখর রোদ থাকায় ধান ও খড় শুকানোর কোনো ঝামেলা হয়নি।

স্থানীয় কৃষক ও জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ১২ লাখ ৩৭ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন ধান। এর মধ্যে হাওরে আবাদ করা ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন।

রোজার ঈদের পরদিন থেকে ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। পানি না আসায় বা কোনো রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় কৃষকেরা এবার স্বস্তিতে ধান কাটতে পেরেছেন। প্রচণ্ড রোদ থাকায় এক দিনেই ধান ও খড় শুকাতে পারছেন বলে জানান কৃষকেরা।

খালিয়াজুরির আদমপুর গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ‘আমরার উপজেলায় সব হাওরের ধান কাটা শেষ। এবারের মতো শান্তিতে গিরস্থি কোনো সময় করা হয়নি। কারণ, মেলা দিন ধইরা রইদ থাহনে কোন কষ্ট বা ভোগান্তি হইছে না। বৃষ্টি বা পানিও হইছে না। সব মিলাইয়া আমরা বহুত খুশি।’

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া ও কৃষি কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব জানান, তাঁর উপজেলায় তলার হাওর, গোবিশ্রী হাওর, গণেশের হাওর, চারিয়ার হাওরসহ প্রায় সব হাওরে শতভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলের খেতে ধান কাটা বাকি থাকলেও রোববারের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে বলে জানান ওই দুই কর্মকর্তা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এবার বৃষ্টি বা বন্যার পূর্বাভাস না থাকায় কৃষকেরা নির্বিঘ্নে মাঠের ফসল ঘরে তুলেছেন, এটা আমাদের আনন্দ দিয়েছে। জেলায় পাউবোর অধীনে ১৫৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১৭৮টি পিআইসি গঠন হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। হাওরে ধান না থাকায় এখন নদ-নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করিয়ে মাছের প্রজননের জন্য কয়েক দিনের মধ্যে জলকপাট খুলে দেওয়া হবে। এতে অন্যান্য জেলার হাওরের বোরো ধানের কোনো রকম ক্ষতি হবে না বলেও জানান সারওয়ার।

এদিকে সরকারিভাবে এখনো ধান ক্রয় শুরু না হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকেরা স্থানীয় হাটবাজারে ও মহাজনদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান বেশ কয়েকজন কৃষক। খালিয়াজুরির লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক হরিচরণ সরকার বলেন, ‘এইবার আমরা নিরাপদে ধান ও খেড় শুকাইয়া ঘরে তুলতে পারছি। তবে সরকার ধান কিনা শুরু না করায় আমরার কম দামে ধান বেচতে ইতাছে। প্রতি মণ ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টেহা দরে বেসতাছি।’

এ বিষয় জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিয়ন্ত্রক মো. মোয়েতাছেমুর রহমান জানান, ৭ মে থেকে ধান সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়