ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হিংসা থেকে বাঁচবেন কীভাবে?

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৬ ডিসেম্বর ২০২২  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আখলাকে সায়্যিআর মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের বিষয়টি মারাত্মক ক্ষতিকর। অন্যের সুখ-সম্পদ নষ্ট হয়ে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা করাকে হিংসা (হাসাদ) বলা হয়। অপরের প্রতি হিংসা করা হারাম। কিন্তু এ হিংসা থেকে বাঁচার উপায় কী?

শরীরের যেমন রোগ আছে, তেমনি আত্মারও রোগ আছে। আত্মা যদি সুস্থ হয়ে যায় তাহলে মানুষের বাহ্যিক আচার ব্যবহারও ভালো হয়ে যাবে। মানুষের ভেতর পাপাত্মা থাকলে তার আচার ব্যবহারেও দেখা দেবে বিভিন্ন অসঙ্গতি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘তোমরা হিংসা থেকে দূরে থাকো। হিংসা নেক আমলগুলোকে তেমনি বরবাদ করে দেয়, যেমন আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে ফেলে।’

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মাঝে যত মারাত্মক রোগ ছিলো, সেগুলো তোমাদের মাঝে চলে এসেছে। হিংসা এবং রেষারেষি সবকিছুকে মুণ্ডিয়ে ফেলে। মুণ্ডানো দ্বারা উদ্দেশ্য চুল মুণ্ডানো নয় বরং দ্বীনকে মুণ্ডিয়ে দেয়া। (তিরমিজি)

তিনটি গুণ অর্জন করতে পারলে হিংসা কখনও বাসা বাঁধতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিনটি গুণ আছে, যেগুলো কোনো মুমিন অর্জন করতে পারলে তার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা আসবে না। তাহলো-
১. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সকল কাজ করা।
২. মুসলমানদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত দায়িত্বশীলদের কল্যাণ কামনা করা।
৩. মুসলমানদের সঙ্গে মিলেমিশে সংঘবদ্ধ জীবন যাপন করা।
(মনে রেখো) দ্বীনের দাওয়াত এমন এক ফলপ্রসূ কাজ যে, তা মুসলমানকে অমুসলিমদের থেকে সুরক্ষা দেবে।’ (তিরমিজি)।

কোনো কাজের লক্ষ যদি হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, অন্যকে পেছনে ফেলা বা ঘায়েল করা নয় তাহলে কখনো হিংসা তৈরি হবে না। বরং মনে করা হবে, ওই লোকও আমার সহযোগী। কোরআন এবং হাদিসে এ ব্যাপারে জোর তাকিদ দেওয়া হয়েছে। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, কোরবানি, আমার জীবন-মরণ একমাত্র আল্লাহর জন্য।’ অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইবাদত করতে।’ হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করলে অল্প কাজই আখেরাতে মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে।’

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দ্বীন হচ্ছে কল্যাণকামিতার নাম। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কার জন্য কল্যাণ কামনা করবো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা, তার রাসুল ও কিতাব এবং মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ও জনসাধারনের জন্য কল্যাণ কামনার নাম হচ্ছে দ্বীনদারি।’
কারও ক্ষতি করার ইচ্ছা থেকে সাধারনত হিংসা হয় । কেউ যদি ইচ্ছা করে আমি সকলের কল্যাণ করবো তাহলে হিংসা আসবে কোথায় থেকে? এ জন্য বুযূর্গগণের উপদেশ হলো, কারো ওপর যদি তোমার হিংসা হয় তাহলে তুমি তার কল্যাণ করার জন্য লেগে পড়। তাহলে দেখবে মন থেকে আস্তে আস্তে হিংসা উধাও হয়ে গেছে।

হিংসার আগুন থেকে নিজকে বাঁচানোর জন্য সংঘবদ্ধ জীবন যাপনের কথা বলেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এক সঙ্গে মিলমিশে থাকার বরকতে হিংসা আসতে পারবে না। তাছাড়া মিলেমিশে থাকতে হলে, মনে হিংসা রেখে এক সঙ্গে থাকা কখনো সম্ভব নয়। এক হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ে আদেশ করবো আর পাঁচটি বিষয়ে নিষেধ করবো। নির্দেশিত পাঁচটি বিষয়ের অন্যতম একটি হচ্ছে সংঘবদ্ধ জীবন। নামাজের জামাতে এক কাতারে দাঁড়ালেও মানুষের মনের অবস্থা পরিবর্তন হয়। নিয়মিত যারা জামাতে নামাজ আদায় করে তাদেরও পরস্পর সম্পর্ক গভীর হয়। তাই আমাদের মন থেকে হিংসা রেষারেষি দূর করতে হলে করণীয় হচ্ছে সংঘবদ্ধ জীবন যাপন। যার ছোট্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে মসজিদে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের ফলে পরস্পর সুস্পর্ক তৈরি হওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত তিনগুণ নিজেদের জীবনের বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। হিংসা মুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়