ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস ১৯৭৫ সালের পর বিকৃত করা হয়েছে : শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ২৮ মার্চ ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। তার এ ঘোষণা ইপিআরের ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সেই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়।’

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ সভা আয়োজন করে। 

মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের সেক্টর কমান্ডার হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সেক্টরে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পান। জিয়াউর রহমান সেখানে তো একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া জিয়া একজন সামান্য মেজর ছিলেন। মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতি কিন্তু তাকে আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার জন্ম ছিল কলকাতায়, এরপর পরিবার করাচিতে চলে যায়। তার লেখাপড়া ও সেনাবাহিনীতে যোগদান সবই পাকিস্তানে। কাজেই তার মনে পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে; তার প্রমাণও আছে।’

শেখ  হাসিনা বলেন, ‘২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন এখানে গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আর চট্টগ্রামে সেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বে জিয়াউর রহমান ছিল। যারা ব্যারিকেড দিয়েছে, তাদের ওপর জিয়াউর রহমানও গুলি চালিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেখানে সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও সাধারণ জনগণ তাকে পথে আটকায়, তাকে ধরে নিয়ে আসে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে সময় জহুর আহমেদ সাহেব বলেন, আমাদের একজন মিলিটারি লোক দরকার। তখন মেজর রফিককে বলা হয়। কিন্তু তিনি তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আটকানোর জন্য অ্যাম্বুশ করে বসে আছেন। জহুর আহমেদ বলেন, “‍আমি এখান থেকে নড়লে জায়গাটা ওরা দখল করে নেবে।” ওই সময় জিয়াউর রহমানকে ধরে আনা হয় এবং তাকে দিয়ে ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পর জাতির পিতার পক্ষে ঘোষণাটা পাঠ করানো হয়। কাজেই এটা নিয়ে বড়াই করার তো কিছু নেই! তারা এটা নিয়েই বড়াই করে যাচ্ছে।’

সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমি একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সে সময় পাকিস্তানি সামরিক অফিসার আসলাম বেগ বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন। পরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধানও হয়েছিলেন। এই আসলাম বেগ একটা চিঠি লিখেছিলেন জিয়াউর রহমানের কাছে। সেই চিঠিতে জিয়াউর রহমানের কার্যক্রমে তিনি সন্তুষ্টি জানিয়েছিলেন এবং তাকে ভবিষ্যতে আরো কাজ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চিঠির কপি পার্লামেন্টেও পাঠ করা হয়েছে। এটা ডকুমেন্ট হিসেবেও আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি কথা না বলে পারছি না, দেখলাম বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে আগুন দিচ্ছে। ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করবে না। এরপর আবার দেখা গেল, কিছু চাদর কিনে এনে পোড়ানো হলো। আচ্ছা শীতকাল তো চলে গেছে এখন চাদর পোড়ালে আর কী আসে-যায়। আমার প্রশ্ন, যে নেতারা বলছেন ভারতীয় পণ্য বর্জন করেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে। তাহলে বউদের কাছ থেকে সেই শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছেন না। আপনারা সবাই একটু এ কথাটা বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের বলব, যারা যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন সবার বাড়িতে গিয়ে তাদের বউরা যেন কোনো মতে কোনো ভারতীয় শাড়ি না পরে; আলমারিতে যে কয়টা শাড়ি আছে সব এনে যেদিন ওই অফিসের সামনে পোড়াবেন সেদিন বিশ্বাস করব যে, আপনারা সত্যিকার ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত কাণ্ড আমরা দেখি—অতি ডান (ডানপন্থী) ও অতি বাম (বামপন্থী)। তারা এক জায়গায় হয়ে গেছে। তাদের আদর্শটা কী; নীতিটা কী? তারা কোনো কিছুতেই ভালো খুঁজে পায় না। অতি বামে কিছু দল আছে, তারা একেবারে বিপ্লব করবে, যে বিপ্লব করতে করতে তারা এখন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়