ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

পায়রাবন্দে তৈরি কচুরিপানা থেকে কারুশিল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩  

পায়রাবন্দে তৈরি কচুরিপানা থেকে কারুশিল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায়

পায়রাবন্দে তৈরি কচুরিপানা থেকে কারুশিল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায়

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা পায়রাবন্দে। পায়রাবন্দে তৈরি কচুরিপানা থেকে কারুশিল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ আমেরিকার বাজার দখল করেছে। এই হস্তশিল্প তৈরির সাথে জড়িত প্রায় ৩ শতাধিক নারী হয়েছেন স্বাবলম্বী। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র থেকে আনুমানিক ১০০ ফুট দূরে একটি বড় আকারের ঘরে ২০-২৫ জন নারী কাজ করছেন এই হস্তশিল্পের। এছাড়া আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মহিলারা নিজ বাড়িতে বসে এই হস্তশিল্প তৈরি করছেন। 

খাল-বিল, নদী-নালা পুকুর থেকে সংগৃহীত কচুরিপানা থেকে এখানে তৈরি হচ্ছে গার্ডেনপট, লন্ডি বাস্কেট, কিচেন বাস্কেট, ডক বাস্কেট, ক্রসনেট সামগ্রী। এখানে কাজ করা নারীরা প্রতিদিন দেড়’শ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। মোটামুটি সাশ্রয়ী দাম হওয়ায় এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে দেশ-বিদেশে। পায়রাবন্দে কাঁচা ও শুকনো কচুরিপানা কেন্দ্রিক কয়েক শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন এই শিল্পে। প্রতি কেজি কচুরিপানা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এসব কচুরিপানা আশপাশ এলাকার খাল-বিল, নদী নালা থেকে সংগ্রহ করা হয়। 

পায়রাবন্দে কচুরিপানার হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি।  তিনি ঢাকার গাজিপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৬ সালে আর কে হ্যান্ডি ক্রাফ্ট নামে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। প্রথম দিকে কাচা মাল সংগ্রহ এবং বিপণনে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আর সমস্যা হয় না।  ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি তার উৎপাদিত পণ্য কানাডা, আমেরিকা, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন। এখান উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য প্রকারভেদে ২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। 

ওই প্রতিষ্ঠানের কারিগর আরজুমান বলেন, তিনি ৬ মাস থেকে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই’শ টাকা পান। এই টাকা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটান।

হাসি বেগম নামে আরেকজন বলেন, এখানে কাজ করে বাড়তি আয় হচ্ছে। সংসারে অভাব অনটন দূর হয়েছে। কচুরিপানা বাদেও হোগলাপাতা, জলপাতা ও পাট থেকে হস্ত শিল্প তৈরী হয় এখানে। 

প্রতিষ্ঠানে স্বত্বাধিকারি রেজাউল করিম বলেন, আমি ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। ভালো বেতনও পেতাম। চাকরি ছেড়ে দিয়ে হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে ২০০৬ সালে পায়রাবন্দে এই হস্তশিল্পের কারখানা করি। পায়রাবন্দ ও আশপাশের গ্রামের প্রায় ৩০০ নরী তার এই হস্তশিল্পের সাথে জড়িত। তিনি বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই হস্তশিল্প থেকে প্রচুর বৈদেশি মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। দিনে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ মণ কাঁচা কচুরিপানা ক্রয় করেন তিনি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৭দিনের মধ্যে কচুরি পানা শুকিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরীর উপয়োগী হয়।  তবে বৃষ্টি-বাদল হলে কচুরিপানা পচে যায়।  সে ক্ষেত্রে লোকসানের বোঁঝা বইতে হয়। 

তিনি বলেন, এই কারখানা থেকে রাজধানীর দুটি, রংপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় বাজারে কিংবা খোলাবাজারে এসব পণ্য বিক্রি হয় না। এই তিন প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতো পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়।  প্রতি মাসে তিন প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন তিনি। বছরে পৌনে দুই কোটি টাকার কারুপণ্য বিক্রি হচ্ছে এই পায়রাবন্দ থেকেই।পায়রাবন্দের রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, রেজাউলের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংশিত। এখানে অনেক নারী কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়