ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটার ধুম

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১৮ এপ্রিল ২০২৪  

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটার ধুম

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটার ধুম

নির্ধারিত সময়ের আগেই কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। কৃষি বিভাগও ৮০ শতাংশ পাকলেই কাটার তাগিদ দিয়েছে। ফলে এক সপ্তাহ ধরে ধান কাটছেন চাষিরা।

তাদের ভাষ্য, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বন্যার আশঙ্কায় আগেভাগে তারা ধান কেটে ফেলেন। যদিও আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত কিংবা বন্যা পরিস্থিতির কোনো পূর্বাভাস নেই।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানন, আগামী ১০ দিন পর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে– এমন তথ্য এখন বলা যাচ্ছে না। তবে এ সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। ফলে হাওরের সিংহভাগ ধান নির্বিঘ্নে কাটা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
এক সময় বৈশাখের মধ্যভাগে বোরো ধান কাটা শুরু হতো। কিন্তু বন্যা থেকে সুরক্ষায় আগাম জাতের ধান আবাদের ফলে এখন চৈত্রের শেষ দিকেই ধান কাটা শুরু হয়। গত মঙ্গলবার করিমগঞ্জ-ইটনার সীমান্তবর্তী হাওরে শ্রমিকদের আগাম জাতের ‘ব্রি-২৮’ ও হাইব্রিড ‘হীরা’ ধান কাটতে দেখা যায়। এসব ধান খলায় নিয়ে ‘বোমা মেশিনে’ মাড়াই করা হচ্ছে। করিমগঞ্জের উত্তর গণেশপুর গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন জানান, ৫০ শতাংশ জমির ধান কেটে তিনি নাগচিন্নি নদীর পাড়ে খলায় বোমা মেশিনে মাড়াই করেছেন। উপজেলার সাকুয়া গ্রামের কৃষক আক্কাস মিয়া জানান, এবার ১২ বিঘা জমিতে তিনি ব্রি-২৯ ও হীরা আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।

সরেজমিন জেলার ইটনার ছিলনী হাওরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায়ও শ্রমিকদের ধান কাটতে দেখা যায়। ইটনার বড়িবাড়ি হাওরের জিরাতি কৃষক তাইজুল মিয়া বলেন, জিরাতিরা বাড়িঘর ফেলে খড়কুটো বা টিন দিয়ে কুঁড়েঘর করে হাওরের মাঝখানে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কাটান। তাদের পরিশ্রমেই কৃষকের গোলা ধানে ভরে ওঠে।

উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক শুকুর আলী জানান, হাওরে পানি না আসায় তারা খুশি। আর কিছুদিন পেলে সব ধান কাটা শেষ হবে।

ডিঙ্গাপোতা হাওরে মাঠেই ভিজা ধান প্রতিমণ ৯০০ টাকা করে বিক্রি করছেন কৃষকরা। মিঠামইনের কৃষক সোহরাব উদ্দিন জানান, শ্রমিক সংকটে ধান কাটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে ১৫ দিন পেলে হাওরের সব ধান কাটা হয়ে যাবে। নিকলীর কৃষক মোজাহিদ সরকার বলেন, এ পর্যন্ত জেলার হাওরাঞ্চলের প্রায় ৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।

নৌপথে বড় বড় বাল্কহেড ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নতুন ধান করিমগঞ্জের চামড়া নৌবন্দরের আড়তগুলোতে নিতে দেখা গেছে। আড়ত মালিক আলতাফ হোসেন জানান, এখন হীরা ৭৫০ ও ব্রি-২৮ ধান ৯০০ টাকা মণ দরে কিনছেন তারা। অবশ্য এতে গৃহস্থের লোকসান হচ্ছে জানিয়ে কৃষক জালাল উদ্দিন ও আক্কাস মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঋণের টাকা পরিশোধ ও শ্রমিকের খরচ মেটাতে অনেকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন।

আড়ত মালিকরা এ সুযোগ নিয়ে দাম কম দেন। এক মণ ধান উৎপাদনে খরচই প্রায় হাজার টাকা। অথচ শুরুতে বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে।
জেলার কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এবার কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরেই আবাদ ১ লাখ ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর। ধান কাটতে মিঠামইনে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার নামানো হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত হাওরের মাত্র সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির (৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ) ধান কাটা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই সব ধান কাটা শেষ হবে। আপাতত বন্যার পূর্বাভাস নেই। তবে অনেক সময় শিলাবৃষ্টি হলে ধানের বিশাল ক্ষতি হয়।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়