ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মহান স্বাধীনতা দিবস : অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও স্মার্ট দেশ গড়ার প্রত্যয়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ২৭ মার্চ ২০২৪  

মহান স্বাধীনতা দিবস : অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও স্মার্ট দেশ গড়ার প্রত্যয়

মহান স্বাধীনতা দিবস : অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও স্মার্ট দেশ গড়ার প্রত্যয়

মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। ৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নানা শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষের ঢল নামে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, সাম্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ও প্রত্যাশার কথা পুনরায় উঠে এসেছে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে।

লাখো শহীদের আত্মত্যাগকে ধারণ করে দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলাদেশের স্বপ্নের কথাও জানিয়েছে দেশের মানুষ। সেই সঙ্গে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন অনেকে।

গতকাল ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের রাজা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে ভুটানের রাজা চার দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।

বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের রাজা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এই সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং ভুটানের রাজা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এরপর একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।

পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি।  রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছে।

সর্বস্তরের শ্রদ্ধা

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করা হলে বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের ভিড়। বরাবরের মতো এবারও দেশের লাল-সবুজের দীর্ঘ ৬৪ ফুট পতাকা নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরের ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কলেজের শিক্ষক মো. সামসুদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা জানাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবছরের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে নিয়ে আসি। তারা বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। এতে করে তাদের মনে আরো শক্ত করে গেঁথে যায় মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস।’

রাজধানীর শ্যামলী থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা নুরুল হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু যাঁরা তাঁদের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁদের জন্য স্বাধীনতা পেয়েছি। বিশেষ দিবসে পরিবার ও সন্তানকে নিয়ে আসি, যাতে আগামী প্রজন্ম দেশ, দেশের ইতিহাস ও আত্মত্যাগের কথা জানতে পারে।’

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ এলাকায় জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল পুলিশ। ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সাদা পোশাকেও পুলিশের নজরদারি ছিল।

রাজনৈতিক দলের শ্রদ্ধা

সরকারপ্রধান হিসেবে শ্রদ্ধা জানানোর পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আরো অনেকে।

স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সকালে রাজধানী ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এমপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ বেদিতে ফুল দিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শ্রদ্ধা জানান।

স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত ও মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেছেন। এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবসে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার গজনভী রোডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়