ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

থানা-কারাগারে বায়োমেট্রিক চালুর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ৬ জুলাই ২০২২  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

প্রকৃত অপরাধী শনাক্তে দেশের সব থানার ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) বায়োমেট্রিক চালুর (আসামি বা অভিযুক্তের আঙুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি যুক্ত করা) উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে গ্রেফতারের পর আসামি বা অভিযুক্তের মাগশট ফটোগ্রাফ (মুখচ্ছবি) নিয়ে তা কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের এক রায়ে এ নির্দেশনা এসেছে। আইনের অপপ্রয়োগ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল রাজধানীর খিলগাঁও থানায় নাশকতা মামলায় পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের মোদাচ্ছের আনছারী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভাধীন আজগর আলী মোল্লাবাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেন। এরপর ঐ বছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যান। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন।

এদিকে পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল মো. জহির উদ্দিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

পরোয়ানা জারির পর জহির উদ্দিন আইনি প্রক্রিয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মূল আসামি মোদাচ্ছের আনছারীর ছবি এবং শারীরিক বর্ণনাসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর গ্রেফতারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেওয়ার পাশাপাশি জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করে অন্তর্বর্তী আদেশ দেন।

প্রকৃত আসামি নির্ণয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হয়। আর জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভুত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চান উচ্চ আদালত।

পরে আদালতে জমা দেওয়া পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাধারী আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতারি পরোয়ানাধারী আসামি নন। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর রুল শুনানি করে গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভুত ঘোষণা করা হয়। ৬ পৃষ্ঠার রায়টি মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। এ মামলায় রিটকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

রায় প্রকাশের পর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ না থাকায় রায় কার্যকরে কোনো বাধা থাকছে না। রায়টি কার্যকর করা হলে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা কারাগারে আটকে রাখার মতো ঘটনার অবসান ঘটবে। অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়