ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন করেছে সরকার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৩০ এপ্রিল ২০২৪  

টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন করেছে সরকার

টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন করেছে সরকার

জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি-২০২৪ প্রণয়ন করেছে সরকার। বিশ্বমানের প্রযুক্তিভিত্তিক, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী, সুদক্ষ ও পরিবেশবান্ধব লজিস্টিক্স ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করে টেকসই ও অভীষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রবিবার (২৮ এপ্রিল) এ নীতি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এর আগে গত ৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে লজিস্টিক্স ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বহুবিধ উপখাত সম্পৃক্ত থাকলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ২১টি উপখাত চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো— সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ সেবা, বিমান/এভিয়েশন সেবা, রেল পরিবহন সেবা, সমুদ্র বন্দর সেবা, পণ্যবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল সেবা, আঞ্চলিক ফিডার ভেসেল ও লাইটার/কোস্টাল/উপকূলীয় জাহাজ চলাচল শিল্প সেবা, মেইন লাইন অপারেটর সেবা, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সেবা, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং সেবা, তেল/গ্যাস/এলএনজি ট্যাংক টার্মিনাল সেবা, টেম্পারেচার কন্ট্রোল্ড লজিস্টিক্স/কোল্ড চেইন/ কোল্ড স্টোরেজ সেবা, প্রাইভেট ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো ও কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন সেবা, কুরিয়ার ও পোস্টাল সার্ভিস সেবা (অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক), রাইড শেয়ারিং সেবা, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং সেবা, তথ্য ও প্রযুক্তিগত লজিস্টিক্স সেবা, ফাইন্যান্সিয়াল লজিস্টিক্স সেবা, যন্ত্রচালিত ট্রলারযোগে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ শিল্প সেবা, প্রাইভেট ওয়্যারহাউজ সেবা, ই-কমার্স লজিস্টিক্স সেবা এবং গ্লোবাল লজিস্টিক্স সেবা।

গেজেট অনুযায়ী জাতীয় লজিস্টিক্স নীতির উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে— আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক সময়ের মধ্যে পণ্য উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন, জাহাজিকরণ, ছাড়করণ ও বিতরণসহ সামগ্রিক লজিস্টিক্স সেবায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বিলম্ব ও ব্যয়ের ক্রমহ্রাস নিশ্চিতকরণ; লজিস্টিক্স সেবা প্রদান সংক্রান্ত সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে একটি সমন্বিত কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সাবলীল, নিরবচ্ছিন্ন ও কার্যকর লজিস্টিক্স প্রতিবেশ নিশ্চিতকরণ; বহু মাধ্যমভিত্তিক লজিস্টিক্স অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ; বিশ্বমানের ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং ব্যবস্থাপনাসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটালাইজড লজিস্টিক্স ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ; ৩.২.৫ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কাস্টমসসহ লজিস্টিক্স খাত সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিবিধান, নীতি, পদ্ধতি ইত্যাদি কার্যকর, সহজীকরণ ও সুসমন্বিতকরণ; লজিস্টিক্স খাতের চাহিদাভিত্তিক শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতায়নের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা; বিশ্বমানের বিনিয়োগবান্ধব প্রতিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে লজিস্টিক্স খাতের উপখাতগুলোতে প্রতিযোগিতাপূর্ণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, সংরক্ষণ ও ক্রমবর্ধিতকরণ; লজিস্টিক্স পারফরম্যান্স সংক্রান্ত বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের সক্ষমতার ক্রমোন্নতি নিশ্চিতকরণ; লজিস্টিক্স খাতে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ; বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে অন্তর্ভুক্তিমূলক, জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু সহিষ্ণু লজিস্টিক্স অবকাঠামো ও সেবা প্রতিবেশ উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে লজিস্টিক্স-সংশ্লিষ্ট কার্যকর উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা গ্রহণ এবং ব্যবহারে উৎসাহিতকরণ।

লজিস্টিক্স খাত ও উপখাতগুলোর সব কার্যক্রম ও উদ্যোগে, লজিস্টিক্স সেবার উপখাতগুলোর বিকাশে দিকনির্দেশনা প্রদানে, বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং সাপ্লাই চেইনের সকল ধাপে গুণগতমান বৃদ্ধি ও লজিস্টিক্স খাতে বিশ্বমানের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায়, সমন্বিত ও পরিমাপযোগ্য কর্মসম্পাদন সূচক প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে, উপখাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট নীতি ও কৌশল প্রণয়নে এবং লজিস্টিক্স-সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান ও প্রণীতব্য সব আইন/বিধি/নীতি সাযুজ্যপূর্ণকরণে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪ প্রযোজ্য হবে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি বাংলাদেশের সার্বিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্প ও সেবাখাতের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও প্রত্যাশা করা হয়েছে গেজেটে। এটি উৎপত্তি ও গন্তব্যস্থল এবং সময় ও পণ্য নির্বিশেষে নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুততর সরবরাহ ব্যবস্থার ফলে ব্যবসায়িক ব্যয় কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। অবকাঠামো ও সেবামানের নিশ্চয়তার ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশের উপর ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আরও আস্থাশীল করে তুলবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীসহ সকল অংশীজনের নিরলস উদ্যোগ ও কার্যকর অংশগ্রহণ বাংলাদেশের লজিস্টিক্স খাতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারভুক্ত হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়