ঢাকা, মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের সদস্য হচ্ছে বাংলাদেশ : মাসুদ বিন মোমে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১০ মে ২০২৪  

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন

কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের সদস্য হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি বলেন, ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে– বাংলাদেশ এতে অংশগ্রহণ করবে।’ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুর্যোগ প্রশমন কার্যক্রম একসঙ্গে করার ব্যাপারেও ভারতের প্রস্তাব রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

বৃহত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক সীমানায় প্রতিবেশী দেশগুলোর কৌশলগত সহযোগিতা জোরদারে ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার উদ্যোগে গঠিত হয় ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ’। তবে এটি কার্যকর হয় ২০২০ সালে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মরিশাস ও ভারত এর সদস্য। ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ’কে ওই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে চীনবিরোধী জোট হিসেবে দেখা হয়। বর্তমানে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশের সরকার চীনপন্থি। তাই ঢাকা এতে যোগ দিলে দিল্লির হাত শক্ত হবে বলে মনে করা হয়। তিন-চার বছর ধরে এই কনক্লেভের বৈঠকে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিনয় মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন মাসুদ বিন মোমেন। পরে তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় যেমন তিস্তা ইস্যুর সমাধান, গঙ্গা চুক্তি নবায়ন, সব ধরনের যোগাযোগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়েও কথা হয়েছে।’ 

উপ-আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সহযোগিতা বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে; আগামী মাসে চালু হবে। ভুটানের সঙ্গেও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম গঠন নিয়ে আলোচনা হতে পারে, যেখানে সঞ্চালন লাইন, 

বিদ্যুতের চাহিদা, বিদ্যুতের সম্ভাবনা ও সরবরাহ নিয়ে কথা হবে।’ 

ভারত থেকে নিত্যপণ্য আমদানি বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ভারতের নির্বাচনের কারণে সেটি আটকে আছে। ভারতে নতুন সরকার গঠন হলে দ্রুতই এটি সই হবে বলে আশা করা যায়। এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ভারত।’

গত কয়েক সপ্তাহে সীমান্তে বেশ কিছু বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গতকালের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা। সীমান্তে নন-লিথ্যাল অস্ত্র ব্যবহারের ওপর জোর দেয়। 

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ, নেপাল ও ভুটান যাতে এ বন্দর ব্যবহার করতে পারে, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। বন্দরটি যেহেতু জাপানের বিগ-বি পরিকল্পনার অংশ, তাই জাপানকে এখানে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্য পদ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে সব সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে; ভারতের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে এ ব্যাপারে অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছে।’

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রাখাইনে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে ভারতও সমস্যায় পড়েছে। আগামীতে মিয়ানমার সংকট নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা হবে।’

বাংলাদেশে ভারতের ঋণ চুক্তি (এলওসি) প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ভারত এলওসির একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি করতে যাচ্ছে, যাতে এটি বাস্তবায়নে সব সমস্যা দূর করা যায়। এ নিয়ে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশন ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কাজ করছে।’ এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়ে ভারতের আগ্রহ রয়েছে বলে জানান তিনি। 

বৈঠকে মহাকাশ, সবুজ জ্বালানি রূপান্তর, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দুই দেশের সহযোগিতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।

‘দিল্লি তো কাছে, বেইজিং একটু দূরে’

এর আগে সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সফর দিল্লি না বেইজিং– সেই প্রশ্নের কৌশলী জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দিল্লি তো আমাদের কাছে, বেইজিং একটু দূরে। প্রধানমন্ত্রীর অনেক আগে থেকে ভারত সফরের কথা রয়েছে। দেশটিতে এখন নির্বাচন চলছে। নির্বাচনের পর সরকার গঠন হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সফর কবে তা ঠিক হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফর নিয়েও কথা হচ্ছে বলে এ সময় জানান তিনি।

সরকারের একটি সূত্র জানায়, আগামী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফর করতে পারেন। তবে তার আগে তিনি দিল্লি সফর করবেন।

তিস্তা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তায় আমরা একটি বৃহৎ প্রকল্প নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। তিস্তায় যে প্রকল্পটি হবে সেটি আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। তাই আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়– এটি ভারতকে বলা হয়েছে।’ 

তিস্তায় চীনও অর্থায়ন করতে চায়– এ বিষয়ে ঢাকার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সহায়তা প্রস্তাব নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে।’

ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ভিসা সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশির জন্য ১৬-১৭ লাখ ভিসা ইস্যু করে ভারত। এটি কীভাবে আরও সহজ করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা ভিসা কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়াতে আরও লোকবল নিয়োগ করবেন। এ বিষয়ে তারা অত্যন্ত আন্তরিক।’

ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি অনেকটা চূড়ান্ত। ট্যারিফ নিয়েও আলোচনা হয়ে গেছে। এটি আমাদের ক্রয় কমিটিতে যাবে। সেটি হলে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারব ভারতের ওপর দিয়ে।’

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রাণঘাতী নয়– এমন অস্ত্র ব্যবহারের ওপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, বিএসএফকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা তা অনুসরণ করেন।’

দুই দিনের সফরে গত বুধবার ঢাকা আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এ ছাড়া দুপুরে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। গতকালই তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়