ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

আরসিবিসির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলবে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪০, ৩ মার্চ ২০২৪  

আরসিবিসির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলবে

আরসিবিসির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলবে

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালত সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এতে করে অর্থ উদ্ধার চেষ্টায় বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। আগামী ৬ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত শুনানি হতে পারে বলে তিনি সমকালকে জানিয়েছেন। অর্থ উদ্ধার ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে ২০২০ সালের মে মাসে আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ।

এদিকে ফিলিপাইনের পত্রিকা এনকোয়ারারের এক খবরে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনের স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা তথ্যে আরসিবিসি জানায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তারা আদালতের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেছেন। নিউইয়র্ক কোর্ট বলেছেন, বাংলাদেশের মামলার তিনটি ‘কজ অব অ্যাকশনের’ আইনি ভিত্তি নেই। যে কারণে আরসিবিসি ব্যাংক ও সব বিবাদীর বিরুদ্ধে অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাৎ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা বা প্ররোচনা, জালিয়াতিতে সহায়তা বা প্ররোচনার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। আরসিবিসি পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি গতকাল বলেন, ‘মামলাটি আরসিবিসির বিরুদ্ধে চলবে, যা আমাদের জন্য অনেক বড় খুশির খবর। এর মাধ্যমে অর্থ ফেরত পাওয়ার একটা রাস্তা হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সেখানে কী বলা হয়েছে খতিয়ে দেখা হবে। তবে মূলত যে ফলাফল এসেছে, তা হলো আরসিবিসিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আদালতে মামলাটি চলবে। এটি আমাদের একটা জয়। এর মাধ্যমে অর্থ উদ্ধারে আমরা সক্ষম। অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া শেষ হতে কতদিন লাগতে পারে– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চূড়ান্ত শুনানিতে যেতে আরও অন্তত ৬ মাস লাগবে। তার পর রায় হতে কতদিন লাগবে এখনই বলা যাবে না।

জানা গেছে, নিউইয়র্কের আদালতে চলমান মামলা থেকে ব্লুমবেরি ও ইস্টার্ন হাওয়াই নামের দুটি ক্যাসিনোকে অব্যাহতি দিয়েছেন নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট। এ ছাড়া ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় আরও চার বিবাদীকে মামলা থেকে খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন ইসমায়েল রেয়েস, ব্রিজিত ক্যাপিনা, রোমুয়ালদো আগারাদো ও নেস্তর পিনেদা। তবে মূল অভিযুক্ত আরসিবিসিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। নিউইয়র্কের আদালত জানিয়েছেন, অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগে মামলা চলতে পারে। বিশেষ করে যে অর্থ আরসিবিসিতে গেছে, তা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে মোট ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় নেওয়া দুই কোটি ডলার ওই সময়ই ফেরত পায় বাংলাদেশ। আর ফিলিপাইনে নেওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে ফিলিপাইনের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করে। শুরুর দিকে অর্থ ফেরতে দেশটির বিভিন্ন সরকারি সংস্থার জোর তৎপরতা ছিল। পরবর্তী সময়ে তা থেমে যায়। এ রকম অবস্থায় চুরি হওয়া অর্থ ফেরত ও দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ। এতে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক, ক্যাসিনো মালিক কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ২০২০ সালের মার্চে এই কোর্ট জানিয়ে দেন, মামলাটি তাদের এখতিয়ারাধীন নয়। ওই বছরের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়।

অর্থ উদ্ধার ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার পর বাংলাদেশের আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কনর বিবাদীদের নোটিশ দেয়। এর পর আরসিবিসি, অভিযুক্ত ব্যক্তি লরেঞ্জ ভি. টান, রাউল টান, সোলায়ের ক্যাসিনো, ইস্টার্ন হাওয়ায়ে এবং কিম অং– এই ৬ বিবাদী যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করেন। তাদের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই এবং ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়। ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল আংশিক রায় হয়। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি মামলা না চালানোর আবেদন খারিজ করে দেন নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরসিবিসিসহ অন্যান্য বিবাদীদের মধ্যস্থতার নির্দেশ দেন স্টেট কোর্ট। সমঝোতার জন্য গত বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনে যায় বিএফআইইউপ্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসির নেতৃত্বে একটি দল। তবে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরতে সাড়া দেয়নি আরবিসিবিসি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়