ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিলেটে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক বাস টার্মিনাল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৩ জুন ২০২২  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সিলেটে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের আধুনিক বাস টার্মিনাল। সিলেটের ঐতিহ্য আসাম ধাঁচের বাড়ি এবং চাঁদনীঘাটের ঘড়ির আদলে এ টার্মিনালের নকশা করা হয়েছে। এ মাসেই এটি উদ্বোধন হবে।

দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী আর আধুনিক সুযোগ সুবিধার মিশেলে সিলেটে বানানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ মাসেই এটির কাজ শেষ হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে নির্মিত এ স্থাপনা হবে দেশের ‘সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক বাস টার্মিনাল’।

নগরের কদমতলী এলাকায় পুরনো বাস টার্মিনালের জায়গাতেই আট একর জায়গা জুড়ে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে নতুন বাস টার্মিনাল। ২০২০ সালের মধ্যে এই টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। তবে এই জুনের মধ্যে যে কোনো মূল্যে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘জুনেই এই বাস টার্মিনালের কাজ শেষ করতে হবে। কাজ শেষে এটি উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হবে। আমাদেরও ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এই টার্মিনাল উদ্বোধন করানোর।’

তিনি বলেন, এতে আধুনিক সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এর নানন্দিক স্থাপত্যশৈলীও সবার নজর কাড়বে।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এমজিএসপি (মিউনিসিপাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় সিসিকের উদ্যোগে এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। ছয় তলা ভিত্তির তিন তলা কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডালি কনস্ট্রাকশন।
এটি একটি বাস টার্মিনাল

টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। কারুকার্যময় লাল ইটের দেয়াল, ইট রঙের স্টিলের ছাউনি, গাছপালা আবৃত গ্রিন জোন, বিমানবন্দরের আদলে আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমন পথ, যাত্রীদের জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ আসনের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জ থাকছে এখানে।

নতুন এই টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষক সুব্রত দাশ, রবিন দে এবং মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।

নকশা প্রসঙ্গে সুব্রত দে বলেন, ‘সিলেটের ঐতিহ্য আসাম ধাঁচের বাড়ি এবং চাঁদনীঘাটের ঘড়ির আদলে এ টার্মিনালের নকশা করা হয়েছে। একইসঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।’

আগে এই টার্মিনাল এলাকা ছিল ময়লার ভাগাড়। বৃষ্টির দিনে কাদা আর পানিতে একাকার থাকত পুরো এলাকা। আর এলোমেলো রাখা গাড়ির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হতো যাত্রীদের। নতুন টার্মিনালে সবকিছুকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো টার্মিনালের নির্মাণকাজ তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম অংশের বহির্গমন ভবনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩০০ ফুট। এই অংশে ৪৮টি বাস একসাথে থাকতে পারবে। এ ছাড়া যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল। রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ।

পুরুষ, নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন লোকদের ব্যবহার উপযোগী ছয়টি টয়লেটও থাকবে এখানে। প্রয়োজনে হুইল চেয়ার নিয়েও টয়লেট ব্যবহার করা যাবে। উপরে ওঠার জন্য রয়েছে লিফট এবং খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য আলাদা শয্যা ও ব্রেস্ট ফিডিং জোন থাকবে এখানে।

দ্বিতীয় অংশের আগমনী ভবন প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের। এখানে রয়েছে বাস বে, যাত্রীদের বসার জন্য ৫১০ আসনের বসার স্থান ও ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক টয়লেট সুবিধা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফট, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা।

আগমন ও বহির্গমন অংশ আলাদা করা হলেও করিডোরের মাধ্যমে পুরো স্থাপনাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই বিল্ডিংয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় সড়কের সঙ্গে গোলাকার পাঁচ তলা টাওয়ার বিল্ডিংয়ে রয়েছে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা অফিস, যেখানে থাকবে পুরো টার্মিনালের সিকিউরিটি কন্ট্রোল ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস।

টার্মিনালের পেছনের দিকে তৃতীয় অংশে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ শয্যার বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন এবং মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডালি কনস্ট্রাকশনের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন জানান, প্রকল্পের স্টিলের টিন আনা হয়েছে তাইওয়ান থেকে। স্টিল স্ট্রাকচারের জন্য লোহার বার আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতিটি উপকরণ বুয়েটে টেস্ট করা হয়েছে।

তিনি জানান, এখানে বিমানবন্দরের মতো বিশাল ওয়েটিং স্পেস রাখা হয়েছে। আছে পার্কিং জোন। ভবনের পেছন দিকে থাকবে গাছপালা আচ্ছাদিত গ্রিন জোন। পরিবহন শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপারপাস বিল্ডিংয়ে থাকবে বিশাল হল রুম, অফিস, ওয়াশরুম, রেস্ট রুমসহ বিভিন্ন সুবিধা।

হেলাল উদ্দিন বলেন, এটি হবে দেশের অন্যতম সুন্দর একটি স্থাপনা।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এখানে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা ও যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। ইচ্ছামতো কাউন্টার বসানো যাবে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদেও সাথে বসেই আমরা এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করব।’

তিনি বলেন, ‘এমন দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক বাস টার্মিনাল সারা দেশে প্রথম সিলেটেই নির্মিত হয়েছে।’

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়