ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিশুদের ডেঙ্গু হলে করণীয়

হেলথ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২২ নভেম্বর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এইডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। সাধারণত জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাসের কাছাকাছি সময় ডেঙ্গু হয় যেমন এখন আমরা একটা ডেঙ্গুময় সময়ে আছি। বর্তমানে আমাদের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীতে সয়লাব হয়ে গিয়েছে। আমরা প্রতিদিন অনেক রোগী পাচ্ছি এবং শয্যা সংকটের  কারণে আমরা অনেককেই ভর্তি করতে পারছিনা। 

তবে আশার কথা সব ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তির প্রয়োজনও নেই। আমরা যদি শুরু থেকেই ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করতে পারি তবে রোগী বাসায় বসেই চিকিৎসা নিতে পারবে। এখানে আমাদের সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

ডেঙ্গু রোগে সাধারণত জ্বর হয় । এই জ্বর ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি ফা. হতে পারে এবং এই জ্বরের সাথে শরীর ব্যথা, বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, চোখের নিচে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা এগুলো হতে পারে। তবে সব রোগীর কিন্তু সব সমস্যা নাও থাকতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা জ্বর হলেই ডেঙ্গু ভাইরাসের পরীক্ষা দিচ্ছি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পজিটিভ পাচ্ছি। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও ডেঙ্গুতে খুব বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।  আমাদের হাসপাতালে সাধারণত তিন ভাগের এক ভাগ শিশু ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি।

প্রথমত, যে বাচ্চাদের জ্বর থাকে তোদেরকে আমরা ডেঙ্গু পরীক্ষা করব । খুব সহজে আমরা পরীক্ষা করতে পারি । আমরা প্রথম দিন রক্তের সিবিসি এবং ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে থাকি । অ্যান্টিজেন আমরা তিন দিন পর্যন্ত পরীক্ষা করি তারপর পাঁচ দিন সাধারণত অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে পারি।

সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা হয়েছে যে, প্লাটিলেট কমে গেলেই রোগী খারাপ হয়ে যাবে তাই তারা অনেক সময় প্লাটিলেট ভালো থাকলে রোগীগুলোকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে চাচ্ছেনা এবং অবহেলা করছে । একটি ডেঙ্গু রোগী খারাপ হওয়া আমরা অনেকভাবে বুঝতে পারি, তার মধ্যে প্লাটিলেট একটি মাধ্যম মাত্র । ডেঙ্গু রোগী সন্দেহ হলে আমরা সাধারণত সিবিসি পরীক্ষা করি এবং সম্পূর্ণ শ্বেতকণিকা,  রক্তের তরল অংশ ও কনিকাগুলোর অনুপাত যাকে আমরা হেমাটোক্রিট বলি ইত্যাদি দেখে আমরা বুঝতে পারি যে একটি শিশু স্বাভাবিক অবস্থা থেকে খারাপ দিকে যাচ্ছে কিনা এবং তখনই আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেই । এই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কারণেই বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি সাধারণ মানুষের মতো শুধু প্লাটিলেটের দিকে তাকিয়ে থাকি তবে ভুল হবে ও খুব বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় প্লাটিলেট ভালো থাকা অনেক রোগী খারাপ হয়ে যাচ্ছে আবার প্লাটিলেট খুব কম থাকা রোগী ও ভালো হয়ে যাচ্ছে।

ডেঙ্গু সাধারণত  বিভিন্ন রকম তীব্রতা নিয়ে হয়, যেমন স্বাভাবিক ডেঙ্গু যার বাড়িতে চিকিৎসা সম্ভব শুধু বেশি বেশি তরল খাবার প্রদানের মাধ্যমে। অথবা ডেঙ্গুর সাথে আরও অনেকগুলো বিপদ চিহ্ন থাকতে পারে যেমন- শরীরের কোথাও রক্তপাত হওয়া , তীব্র পেটে ব্যথা, শিশু নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, বার বার বেশি বেশি বমি হওয়া।

তাই প্রথমে একটি রোগী জ্বর নিয়ে আসলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে তার ডেঙ্গু আছে কি নাই এবং ডেঙ্গু থাকলে আমরা কিছু ওষুধ খেতে নিষেধ করি। যেমন- কোন রকম ব্যথার ওষুধ না খাওয়া, অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া, স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ না খাওয়ানো।

প্রথমত বাচ্চাকে বারে বারে তরল খাবার খাওয়ান। যেমন- খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, গ্লুকোজের পানি, চিড়ার পানি অথবা যে কোন রকম তরল বারবার বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে যাতে একটি বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ছয় বার প্রস্রাব করে। এতে বোঝা যাবে আপনার বাচ্চা পানি শূন্যতা রোধ করতে সক্ষম হয়েছে । তারপরেও আমাদের কিছু বাচ্চা আছে যাদের হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন হয়। ভর্তি করে আমরা স্যালাইন ও অন্যান্য চিকিৎসা দেই । সবসময় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ মত সময় মতো ঠিকভাবে ভর্তি করলে এবং স্যালাইন ও অন্যান্য চিকিৎসা নিলে এই বাচ্চাগুলো খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।  যে বাচ্চার ডেঙ্গু হয়েছে তাকে সারাদিন বাসার মধ্যে মশারির ভিতরে পর্যাপ্ত  বিশ্রামে রাখতে হবে, যাতে আরেকটি সুস্থ মানুষকে সেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে দিতে না পারে।

ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে আমাদের কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে তার মধ্যে একটি হলো যে এইডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস করা । এডিস মাসের সাধারণত আমাদের খুব কাছে আমাদের ঘরের চার পাশেই থাকে এবং যেই জিনিসগুলো আমরা সাধারণত ব্যবহার করি সেগুলোতে তারা বংশবৃদ্ধি করে যেমন আমাদের ফুলের টব, ডাবের খোসা, ফ্রিজের জমে থাকা পানি, ফেলে দেওয়া বোতল, টায়ার ছাঁদ বাগানের জায়গা । এ সব জায়গায় তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকলে এইডিস মশার বংশবৃদ্ধি হতে পারে । আমরা পানিগুলোকে নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখতে হবে এবং আমরা যদি দিনের বেলা বিশ্রাম নেই তাহলে অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে কারণ এইডিস মশা দিনের বেলায় কামড় দেয়। 

শেষে বলতে চাই যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর যদি ডেঙ্গু হয়েও যায় তবে সময়মতো চিকিৎসা নিলে একটি মৃত্যুও আর ডেঙ্গু থেকে হবে না। 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়