ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যে সময় ঘুমালে জীবনের বরকত কমে যায়

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঘুম আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত। ঘুম ছাড়া কারও পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আমাদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ও আরামদায়ক ঘুম আমাদেরকে সক্রিয় ও সতেজ করে তোলে। ঘুমের উপযোগী সময় রাত। প্রতি রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমকে স্বাস্থ্যকর ঘুম বলা যায়।

এজন্য মহান আল্লাহ রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং শীতল করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন ঘুম।’ (সুরা ফুরকান: ৪৭)

ঘুম থেকে জেগে ফজরের নামাজের মাধ্যমে দিন শুরু হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সকালকে এই উম্মতের জন্য বরকতময় করার দোয়া করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উন্মাতের ভোরবেলাতে তাদেরকে বরকত ও প্রাচুর্য দান করুন।’-(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২১২)

সুতরাং সকালে কাজ শুরু করলে বরকত পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই ফজরের পরে ঘুমিয়ে থাকেন। কেউ আবার ফজর নামাজই পড়েন না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) একাধিক হাদিসে এশার পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে বলেছেন।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো এবং নামাজের পর অহেতুক গল্প-গুজব করাকে খুব অপছন্দ করতেন। -সহিহ বোখারি: ৫১৪

তবে ভালো ও নেক কাজের জন্য এশার নামাজের পরে জাগ্রত থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়। যেমন, মেহমানের সঙ্গে কথা বলা, ইলমি (জ্ঞানের) আলোচনা করা ও পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি।

তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অনেকগুলো উপরকারিতা রয়েছে। এর অন্যতম হলো, ফজর নামাজের জন্য খুব সহজে পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সঙ্গে জাগ্রত হওয়া যায়। শরীরে আরামবোধ হয়, কেননা দিনের ঘুম রাত্রের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। 

পূর্ববর্তী আলেমরা ফজরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করতেন। হজরত উরওয়া ইবনে যুবাইর (রহ.) বলেন, যুবাইর (রা.) তার সন্তানদের ভোরবেলা ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধ করতেন।

হজরত উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারও সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫/২২২

সকাল বেলা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রিজিক বন্টন করা হয় তাই এই সময় ঘুমিয়ে থাকলে আল্লাহ তায়ালার বন্টন থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে,

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তার এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো! তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ -যাদুল মায়াদ: ৪/২৪১

সকালের ঘুমের ব্যাপারে সতর্ক করে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘তোমরা সকালের ঘুম থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা তা জ্বরের প্রকোপ বাড়ায়, যৌন ক্ষমতা কমায় এবং শরীরের সজীবতা নষ্ট করে। ’ (আন-নিহায়াতু ফি গারিবিল আহাদিস)

অতএব, ইশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়ে ভোরে উঠে যেতে হবে। ফজরের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত এবং ইশরাকের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনের কর্মকাণ্ড শুরু করতে পারলে দিন বরকতময় ও কর্মময় হয়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বরকতময় সকালকে কাজে লাগানোর তাওফিক আমাদের সবাইকে দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়