ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যে কারণে বাদামের ব্যাপক ফলন উপকূলীয় এলাকায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২২ মে ২০২২  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারে পটুয়াখালীতে চিনা বাদাম চাষ করে এবার ব্যাপক ফলন পাওয়া গেছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কীটনাশক ব্যবহার না করে পোকামাকড়ের আক্রমণ ছাড়াই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে।

ফলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং কম ব্যয়ে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব হয়েছে। আগামীতে এই প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলের বেলে মাটিতে বাদামের ভালো ফলন হচ্ছে। তবে বাদাম চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ হওয়ায় কৃষক বিভিন্ন সময় ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের চাষাবাদে আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিতে পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় চিনা বাদামের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে।

ইউএসআইডি মিশনের অর্থায়নে ফিট দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ ইন্ট্রিগেডেট পেস্ট ম্যানেজমেন্ট একটিভিটি নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষককের বাদাম ক্ষেতে আঠাঁলো ফাঁদ, ফেরোমন ফাঁদ, পাচিং এসওপি এবং বায়োপেস্টিসাইড ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফিট দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ ইন্ট্রিগেডেট পেস্ট ম্যানেজমেন্ট একটিভিটি’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা এই প্রকল্পের প্রকল্পের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলায় পাঁচটি প্রদর্শনী দিয়েছি। এ থেকে আমরা কৃষকদের দেখানোর চেষ্টা করেছি চিনা বাদামে যে প্রধান প্রধান পোকামাকড় আক্রমণ করে তা প্রতিরোধে কোনো কেমিকেল পেস্টিসাইড ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

এরই মধ্যে তাদের ফলনের পার্থক্যও দেখানো হয়েছে। যেহেতু পটুয়াখালীতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষ হয় সেক্ষেত্রে সকল কৃষকরা যাতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন সে বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

আধুনিক এবং নিরাপদ এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বিগত সময়ের চেয়ে কিংবা যেসব জমিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি সেসব জমির চেয়েও এবার ভালো ফলন পাওয়া গেছে। পাশপাশি ভালো দাম পাওয়ায় খুশি স্থানীয় কৃষকরা।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া এলাকার কৃষক সোবাহান গাজী জানান, বিগত বছরের চেয়ে এবার ফলন অনেক বেশি ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে তারা বাদাম তোলা শুরু করেছেন। এবার বাদামের দামও ভালো। কাঁচা অবস্থায় ২৪০০ টাকা মণ এবং শুকনো অবস্থায় ৪ হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করতে পারছেন।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া এবং ভালো ফলন পাওয়ায় বিগত বছরের চেয়ে এবার পটুয়াখালী জেলায় বেশি পরিমাণ জমিতে চিনা বাদামের চাষ হয়েছে।

গত বছর ৪৪০০ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষ হলেও এবার হয়েছে ৫৭৮৩ হেক্টর জমিতে। তবে আইপিএম পদ্ধতির এই চাষাবাদ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা যেমন অধিক ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তেমনি বাদাম চাষে তাদের অগ্রহ বাড়বে। এতে করে বাদাম থেকে তেল উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালী সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চিনা বাদাম দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যতম একটি তেল জাতীয় ফসল।

তবে এই অঞ্চলে এখন স্থানীয় জাতের চিনা বাদাম চাষ হয়। এ ক্ষেত্রে কৃষকরা যদি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি চিনা বাদাম-৮ এবং বারি চিনা বাদাম-৯ চাষাবাদ করেন তবে কৃষক অনেক বেশি ফলন পাবেন।’

পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় উন্নত জাতের বীজ, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারলে বাদাম উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়