ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

যথাযথ মর্যাদায় ময়মনসিংহের ভালুকা মুক্ত দিবস পালিত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আজ ৮ ডিসেম্বর ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মেজর আফসার বাহিনী কাছে এই দিনে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার, আলবদর ও পাক সেনাদের আত্মসর্মপনের মধ্য দিয়ে ভালুকা মুক্ত হয়।

মেজর আফসার বাহিনীর অদম্য মুক্তি সেনাদের আক্রমণের মুখে পাকসেনা ও রাজাকাররা সূর্য উঠার আগেই ভালুকা ক্যাম্প ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গফরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে সড়ক পথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালে মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। অনেক রাজাকার অস্ত্র ফেলে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে গেলেও বেশীরভাগ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পরে মুক্তিরা তাদেরকে ভালুকায় ফিরিয়ে আনে। ভোরের সূর্য উঠতেই জয় বাংলা ধ্বনি তুলে গ্রাম থেকে দলে দলে লোক জমা হতে থাকে হানাদার মুক্ত ভালুকা সদরে।

আটককৃত রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানায় স্বাধীন ভালুকার সর্বস্তরের মানুষ। ১৯৭১ সনের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাংলাকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ১৭ই এপ্রিল ব্রিটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অব.) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আফসার উদ্দিন ১টি মাত্র রাইফেল ও ৮জন সদস্য নিয়ে মল্লিকবাড়ী বাজারে গোপনে মুক্তিবাহিনী দল গঠন করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তারা ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬টি রাইফেল ও একটি এল এম জি এবং কিছু গোলাবারুদ সংগ্রহ করে। এর কয়েকদিনের মাথায় কাউরাইদ থেকে ক্ষীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ একটি নৌকা মুক্তিযোদ্ধারা আটক করে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। পরে ভারতের মেঘালয় হতে প্রশিক্ষণসহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার পর এটি একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়। কিছুদিনের মধ্যেই ৮ সদস্যের দলটি সারে চার হাজারে উন্নীত হয়ে এফ জে ১১নং সেক্টরের ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিত লাভ করে।

৭১এর ২৫শে জুন শুক্রবার সকাল হতে পরদিন শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়ালিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পারে পাক বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৩৬ঘন্টা আফসার বাহিনীর একটানা যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের পর ভালুকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয় । অপরদিকে স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতারা এখানে ঘরে তুলে বিশাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প। এসব রাজাকার আল বদররা ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন হত্যা, নারী ধর্ষণ, বাড়ী ঘরে আগুন ও লুটপাট চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। আফসার বাহিনী বিভিন্ন সময়ে ভালুকা ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে দুর্বল করে ফেলে। এই বাহিনীর দীর্ঘ ৯মাসের যুদ্ধে আফসার উদ্দিনের পুত্র নাজিম উদ্দিন সহ ৪৭জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন।

৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্ত দিবস উপলক্ষে আনন্দ-র‍্যালী ও দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী। সভাপতি হিসাবে র‍্যালী ও আনন্দ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু এমপি। উদ্বোধক হিসাবে ছিলেন জনাব এহতেশামুল আলম নব নির্বাচিত সভাপতি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ। প্রধান বক্তা জনাব এডঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল সাধারণ সম্পাদক ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ, বিশেষ অতিথী সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি মনিরা সু্তানা, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, ভালুকা মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক হাজ্বি রফিকুল ইসলাম, যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান রিপন, সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, কৃষক লীগের সভাপতি আহসান হাবিব মোহন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী স্বপন, সাবেক ছাত্রনেতা শাহরিয়ার হক সজিব, বীর মুক্তিযুদ্ধা বৃন্দ সহ সাংবাদিক বৃন্দ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়