ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মামুনের মধু যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২  

মামুনের মধু যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়

মামুনের মধু যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়

সাইকেলে দুইটি বালতি, একটি ছুরি আর পেছনে এক আঁটি ধানের খড় বা হলুদের শুকনো পাতা নিয়ে চলতে দেখা যায় মধু সংগ্রহকারীদের। ধোঁয়া সৃষ্টি করে মৌচাক থেকে প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ করেন তারা। তবে বর্তমানে প্রাকৃতিক মধুর চেয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ অনেক বেশি লাভজনক।

মৌমাছির মাধ্যমে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে সাফল্য পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মৌ চাষি মামুন আর রশিদ ওরফে মধু মামুন। কুষ্টিয়ায় উৎপাদিত মধু এখন অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে। এ ব্যতিক্রম উদ্যোগ কুষ্টিয়ার মিরপুরের মৌ চাষি মামুনের।

মামুন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামের মসলেম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে। তাকে সবাই মধু মামুন বলেই চেনেন। মৌ চাষে আত্মনিয়োগ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার দেখানো পথে অনেকেই মধু খামার গড়ে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ধারণা ও দূরদৃষ্টি, অধ্যবসায় আর পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের তরুণ মধু ব্যবসায়ী মামুন।

তিনি সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মধু উৎপাদন করে আসছেন দীর্ঘদিন। এখন স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি সেই মধু অস্ট্রেলিয়াতে রফতানি শুরু করেছেন তিনি। বিষয়টি বেশ সাড়া ফেলেছে এলাকায়। মামুনের দেখাদেখি অনেকেই এখন মৌ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

কারিগরি কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই ১৯৯৭ সালে মাত্র চারটি মধুর বাক্স নিয়ে শুরু হয় মধু মামুনের পথচলা। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মামুন বলেন, শখের বসেই ১৯৯৭ সালে দুই হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র চারটি মধুর বক্স নিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা শুরু করি।

এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি মাস্টার্স পাস করেন। চাকরির আশা না করে শুরু করেন মধু চাষ। এখন তার তিনটি খামারে প্রায় সাড়ে ৪০০ মধুর বক্স রয়েছে। এখন এগুলোর প্রতিটির মূল্য আট থেকে নয় হাজার টাকা।

মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে বিস্তীর্ণ সরষের ক্ষেত। শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই সরষের ক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বক্স বসিয়েছেন মামুন। বক্স থেকে মৌমাছির দল সরষে ক্ষেতে উড়ে উড়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার বক্সে ফিরে যাচ্ছে। বক্স থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয় মধু।

মধু মামুন বলেন, নিজে কিছু করার চেষ্টা এবং অন্যদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতেই আমার এ পথচলা। আমার খামারে উৎপাদিত মধু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে আমার তিনটি খামারে সাড়ে ৪০০ বক্সে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে তাড়াশের কেন্দুয়িল, চাপাইনবয়াবগঞ্জের সুকনাপাড়া এবং কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ২০ টন মধু। গত বছর একটি খামার থেকে উৎপাদন করি ১০ টন।

তিনি আরো জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুর এবং নাটোরের চলনবিলে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ চলছে। প্রতি সপ্তাহে তিনটি খামারে ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি মধু সংগ্রহ হচ্ছে। সংগৃহীত মধু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। প্রতিটি বক্স থেকে প্রায় সাত থেকে আট কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। গত বছর খামার থেকেসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা এবং কোম্পানির কাছে ৩০০ টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি হয়েছে। এছাড়া আমার খামার থেকে প্রতিমাসে ১০০ কেজি মধু অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়।

ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, একদিকে যেমন মিরপুরে বিপুল পরিমাণ মধু উৎপাদন হচ্ছে, অন্যদিকে সরিষা ক্ষেতে বিপুল পরিমাণ মৌমাছির বিচরণের ফলে সুষম পরাগায়ন হচ্ছে। এতে সরিষার ফলন বৃদ্ধি, কৃষকদের আয় বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থানের জন্য মৌ চাষে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর মাহমদা চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন বলেন, মধু মামুন আমাদের এলাকার ছেলে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মৌ খামার গড়ে তুলেছেন। এরই মধ্যে সারাদেশে তার অনেক নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। তার উৎপাদিত মধু সব স্থানে সমাদৃত।

মিরপুরের ধুবইল ইউনিয়নে স্থাপিত মধু মামুনের মৌ খামার পরিদর্শন শেষে উপজেলা কৃষি অফিসার মামুর অর রশীদ বলেন, সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষের ফলে একদিকে ফলন বাড়ছে এবং মধু সংগ্রহের ফলে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। মামুন এ উপজেলার একজন মডেল মৌ খামারি। মধু চাষ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়