ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ভিলেজ অব ডেড: গোরস্থানের সবগুলো লাশও যেন উধাও!

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১ অক্টোবর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পাহাড়ের কোলে ছোট্ট ও সুন্দর একটি গ্রাম, এখানে ২০০০ লোকের বাস। মূলত পশুচারণ, পশমের জামাকাপড় তৈরি আর টুকটাক চাষ-আবাদ, জীবিকা বলতে এটুকুই। তারপর একদিন বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ করে ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে গেল সেই গ্রামের নারী-পুরুষসহ সব মানুষ। গল্প নয়, সত্যি- বাস্তবে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল ১৯৩০ সালে কানাডার এক গ্রামে।

উত্তর পশ্চিম কানাডার আজকুনি হ্রদের পাশে উপজাতি অধ্যুষিত শান্ত এক গ্রাম। সেই গ্রামই আজ সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ‘ভিলেজ অব ডেড’ নামে পরিচিত। অদ্ভুত এই ঘটনাটি ঘটার আগে এই গ্রামটি সম্পর্কে মানুষ  তেমন কিছুই জানতেন না। ব্যবসার কাজে দুয়েকজন পশম ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছাড়া বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তেমন যোগাযোগও ছিল না গ্রামটির।

১৯৩০ সালের পর সংবাদমাধ্যমে গ্রামশুদ্ধ অন্তর্ধানের এই অদ্ভুত ঘটনা প্রকাশ পেতেই পুরো বিশ্বের নজরে উঠে আসে এঈ গ্রাম। আধুনিক পৃথিবীতে যে কটা রহস্যের আজ পর্যন্ত কুলকিনারা মেলেনি তারই অন্যতম এই ‘ভিলেজ অব ডেড’। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যিনি সেই ‘জো লবেল’ পশম কেনার জন্য প্রায়ই গ্রামটিতে যেতেন। তেমনই একদিন তিনি পশম কেনার জন্য গ্রামে গিয়ে দেখেন খাঁ খাঁ করছে গ্রাম। জনমানুষের চিহ্নটুকুও নেই। এ বাড়ি, ও বাড়ি খুঁজে একজন মানুষও চোখে পড়ল না তার। যেন গ্রামশুদ্ধ সবাই গা ঢাকা দিয়ে মজা করছে তার সঙ্গে। চাদিদিকে ছড়িয়ে আছে অসমাপ্ত গেরস্থালির চিহ্ন, তারা যে জামাকাপড় বুনছিল অসমাপ্ত অবস্থাতেই পড়ে আছে সেসব, ছড়িয়ে আছে পশম। উনুনে রান্নার জন্য তরকারি চাপিয়েছিলেন কেউ, সেই তরকারি উনুনেই পুড়ে ঝামা হয়ে গেছে। সব আছে, শুধু কী এক ভেল্কিতে অদৃশ্য হয়ে গেছে গ্রামশুদ্ধ মানুষ।

তাহলে কি মারা গেছেন বিশেষ কেউ? তারই অন্ত্যেষ্টি করতে দল বেঁধে গেছে সবাই! সাতপাঁচ ভেবে অল্প দূরের কবরস্থানের দিকে হাঁটা দেন জো। কিন্তু সেখানে আরো ভয়ংকর দৃশ্য অপেক্ষা করে ছিল তার জন্য। কবরস্থানের সবগুলো কবর পাওয়া গেল খোঁড়া অবস্থায়! কিন্তু একটা কবরেও লাশের চিহ্নমাত্র নেই। আশেপাশে কোনো মানুষজনের সাড়া পাওয়া তো দূর, গোরস্থানের সবগুলো লাশও যেন উধাও। 

ঘটনার আকস্মিকতায় খেই হারিয়ে ফেলেন ‘জো লবেল’। দ্য রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে খবর দেন তখন। মেজর থিওডোর লিস্টোর্টের নেতৃত্বে গোটা গ্রাম ও আশপাশের এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ। কিন্তু এবারও দেখা মিলল না একজন গ্রামবাসীরও। কবরস্থানে গিয়েও যথারীতি হতবাক হয়ে যান পুলিশকর্তারা। কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে, সবকটা কবর খুঁড়ে তুলে নিয়ে গেছে পচাগলা পুরোনো লাশ আর কঙ্কাল। দীর্ঘক্ষণ কবরস্থানের ভেতরে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো লাশের দেহাবশেষ বা কঙ্কালের খোঁজ পেল না পুলিশ। শুধুমাত্র অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেল ওই গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন গোত্রপ্রধানের কবরটি। তাহলে কি সুপ্রাচীন এই কবরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অজানা কোনও রহস্য?

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেসময় নানারকম প্রশ্ন উঠলেও উত্তর মেলেনি একটারও। দীর্ঘদিন তদন্ত চালিয়ে শেষে হাল ছেড়ে দেয় পুলিশও। হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া সেই গ্রামের দুই হাজার মানুষেকে আর কখনো দেখা যায়নি। কী হয়েছিল তাদের? কবরে শায়িত লাশগুলোই বা গায়েব হল কীভাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।

 

সর্বশেষ
জনপ্রিয়