ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মাশরুম চাষে সফল শফিউল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৩০ মে ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ঔষধি ও পুষ্টি গুণসম্পন্ন মাশরুম বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে। দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে এ চাষও। যুগোপযোগী পরিবেশ আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মো. শফিউল আজম খান খাদেম নামে এক কৃষক সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে। 

তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের খড়মপুর এলাকার মৃত ডা. শাহজাহান খানের ছেলে। শখের বশে স্বল্প পুঁজিতে স্পন  (বীজ) দিয়ে মাশরুম চাষে তিনি চমক সৃষ্টি করেন। 

বর্তমানে তিনি পৌর শহরের রাধানগর পশু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করছেন। মাশরুমের স্পন প্যাকেট (বীজ) আর মাশরুম বিক্রি করে উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন। কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোড়ে তিনি এ সাফল্য পেয়েছেন। তার এই সাফল্য দেখে অনেক বেকার যুবক এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার -পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হিমেল খান বলেন, মাশরুম মানব দেহের স্বাস্থ্যের জন্য জন্য খুবই উপকারী। ঔষধিগুণে ভরপুর, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও সবজি জাতীয় ফসল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমরা যে সব খাবার দৈনিক খেয়ে থাকি সেগুলোর চেয়ে মাশরুমের পুষ্টিগুণ বেশি। 

মাশরুম দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিসের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, টিউমার ,চর্মরোগ প্রতিরোধ করে, দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য দ্রুত হজমে সহায়তা করে। আর সে কারণেই এটি দিন দিন মাশরুম চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

সরেজমিনে পৌর শহরের রাধানগর পশুহাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দুচালা একটি বড় আকারের টিনের ঘর। ওই ঘরে কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, তুস ও চুন দিয়ে মাশরুমের বীজ বা স্পন তৈরি করছেন। ঘরের ভেতরে ১২ থেকে ১৪টি তাক রয়েছে। প্রতিটি তাকে তাকে সুন্দর করে রাখা আছে স্পন বা বীজ। স্পন থেকে মাশরুম কেটে বাজারজাত বা বিক্রি করতে প্রস্তুত করছেন। 

উদ্যোক্তা শফিউল আজম খান খাদেম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে শিক্ষা লাভের জন্য তিনি রাশিয়ায় যান। সেখানে পড়া শুনার পাশাপাশি বেশ কিছু দিন চাকরিও করেন। ভালো কিছু করতে সেখানে তিনি মাশরুমের প্রশিক্ষণ নেন। এক পর্যায়ে তিনি দেশে চলে আসেন। ওই প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে কোনো সুবিধা করতে পারেন নি তিনি। এরপর ২০০৫ সালে তিনি সাভার মাশরুম উন্নয়ন সেন্টার থেকে ঔষধি ও পুষ্টি গুণসম্পন্ন মাশরুম চাষ করতে প্রশিক্ষণ নেন। 

প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় মাত্র ২০টি স্পন প্যাকেট (বীজ) দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই তিনি এ চাষে ভালো সাফল্য পান। এরপর তার মনের জোড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বর্তমানে তিনি ঢাকার পাশাপাশি নিজ এলাকায় পৌর শহরের রাধানগর পশু হাসপাতাল সংলগ্ন একটি জায়গায় দুই বছর ধরে এ চাষ করছেন। 

তিনি বলেন, খড়, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, তুস ও চুন দিয়ে মাশরুমের বীজ বা স্পন তৈরি করা হয়। বীজের সঙ্গে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সেন্টার থেকে আনা টিস্যু কালচার যুক্ত করে সঠিক পরিচর্যা ও দিনে তিন বেলা পরিমিত পরিমাণে পানি ছিটানো ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এ চাষে ব্যবহার করতে হয় না কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। ছায়াযুক্ত ঠান্ডা ভেজা ভেজা স্থান মাসরুম চাষের জন্য ভালো হয়। এ চাষে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জমি না থাকলেও বসতঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। 

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এখানে  ৬ হাজার স্পন প্যাকেট (বীজ) রয়েছে। স্পন বীজ থেকে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। দুই কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে প্রায় দুই কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। তিনি নিজেই মাশরুম উৎপাদন এবং বীজ বা স্পন তৈরি করে বিক্রি করছেন। দৈনিক ১২ থেকে ১৫ কেজি মাশরুম বিক্রি করা যায়। প্রতি কেজি মাশরুম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

তাছাড়া বীজ বা স্পন প্রতি পিস ২৫-৩০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত মাশরুম ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। উৎপাদিত মাশরুম ও স্পন বীজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানায়। 

বর্তমানে তার খামারে ৩ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। মাশরুমের পাশাপাশি বীজেরও চাহিদা দিন দিন বেড়েছে। সরকারি সহায়তা পেলে মাশরুম চাষ করে বেকার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা। এরই মধ্যে তার এ সাফল্য এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক ঝুঁকছেন মাশরুম চাষে। 

রাধানগর এলাকার মো. নুরুল আমিন বলেন, এখানে আগে কখনো এ চাষ কেউ করেনি। এই প্রথম কেউ মাশরুম চাষ করে এলাকার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার। যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এরইমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভোগ্যপণ্যটি। এ চাষ বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাশরুম চাষে উৎসাহ ও ফলন বৃদ্ধি করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়