ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৫ জুলাই ২০২২  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় লঞ্চ মর্নিং বার্ড ডুবে ৩৪ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালত তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২২ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। গত সোমবার সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সাক্ষীরা হলেন- যমুনা ব্যাংকের কেরানীগঞ্জের আগানগর শাখায় পিয়ন ফকির চান, শাহ আলম, ইসমাইল ও রীতা।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- লঞ্চটির কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন, আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন, আব্দুস সালাম, ইঞ্জিনচালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, লঞ্চের মাস্টার জাকির হোসেন, আবুল বাশার মোল্লা, সুকানি নাসির মৃধা ও কর্মচারী মো. হৃদয়।

২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় ঐ লঞ্চটি। দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

এ ঘটনায় তার পরদিন ৩০ জুন সদরঘাট নৌপুলিশের এসআই শামসুল আলম বাদী হয়ে ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়া সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় বেপরোয়া লঞ্চ চালিয়ে মানুষ হত্যা ও ধাক্কা দিয়ে লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধির ২৮০, ৩০৪ (ক), ৪৩৭ ও ৩৪ ধারার অভিযোগ আনা হয়। 

তদন্ত শেষ করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক শহিদুল আলম ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদসহ ১১ জনের অভিযোগপত্র দেন। 

গত ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
 
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, লঞ্চ মালিক কিছু কমোড ও মালামাল নামানোর জন্য ময়ূর কোম্পানির ম্যানেজার, সুপারভাইজার, মালিক এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা মাস্টার, সুকানি, ড্রাইভার ও গ্রিজারদের নির্দেশ দেয়। যার কারণে ঘাতক লঞ্চের মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানি, গ্রিজারগন তাড়াহুড়া করে দ্রুত মালামাল সরবরাহের জন্য বোগদাদিয়া ডকইয়াও ছেড়ে টার্মিনালের দিকে রওয়ানা হয়। তাছাড়া সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও লঞ্চ মালিক বা অন্যান্য কর্মকতারা যথেষ্ট পরিমাণ লোকজন নেন। এছাড়া মাস্টার বা সুকানি হেলপার দিয়ে তাদের লঞ্চ চালানোর দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সার্ভে সনদ অনুযায়ী যাদের লঞ্চ পরিচালনার কথা ছিল তারা লঞ্চে ছিলেন না। আসামি আবুল বাশার, জাকির, নাসির, শিপন, শাকিল, হৃদয়ের দিকনির্দেশনায় এবং লঞ্চ চলমান থাকা অবস্থায় তাদের নির্দেশনা ভুল থাকায় লঞ্চের গতি ছিল অনেক বেশি। যেখানে গতি ধীর হওয়ার কথা সেখানে ফ্রন্ট গিয়ারে রেখে দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে লঞ্চের গতি আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। 

অপরদিকে লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সুপারভাইজার আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন ও সালামরা ময়ূর কোম্পানির সার্বিক পরিচালনাকারী। তাদের ভুল দিকনির্দেশনায় এবং পরিচালনাকারীর জন্যই এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় ৩৪ জন নিরীহ মানুষের জীবন চলে যায়। ভুক্তভোগী লঞ্চ মনিং বার্ডের মাস্টার সুকানীরা বারবার সংকেত দেওয়ার পরও ঘাতক লঞ্চ চালনাকারী এজহারনামীয় আসামিরা দ্রুত ঘাটে যাওয়ার আশায় অতিক্রম করার চেষ্টা করে। যার কারণে মনিং বার্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে এবং চোখের পলকেই লঞ্চটি পানিতে তলিয়ে যায়।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়