ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে গিয়ে যা দেখবেন

ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা সময় পেলেই ছুটে যান কক্সবাজারসহ অনেক পর্যটন এলাকায়। আমরা ১৮ জন মিলে এবার ঠিক করলাম কক্সবাজার ভ্রমণে যাব। জমবে আড্ডা, ঘুরবো আমরা কক্সবাজার।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার গাড়িতে উঠে দু’দিন ঘুরে শনিবার চলে আসবো বলে ঠিক করলাম। বহদ্দারহাট বাস কাউন্টারে যখন আগেভাগে টিকিট কিনতে গেলাম। টিকিট কিনতে গেলো রবিন। তিনিই সব দায়িত্ব সামলাবেন। সবাইকে বলা হলো, রাত ২টায় গাড়ি ছাড়বে তাই সবাই যেন বাস কাউন্টারে ১টার মধ্যে থাকেন।

আমরা বের না হতেই রাশেদ কল দিলো ও বাস কাউন্টারে গিয়ে বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে। আমরাও গিয়ে চাদঁগাও বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম। আমরা পৌঁছাতে না পৌঁছাতে টুটুল এসে পৌঁছালো।

মিজানরা আসার পূর্বেই সিনিয়র জাবেদ ভাইরাও এসে পৌঁছালেন, মিজানরা পৌঁছেছে গাড়ি ছাড়ার একটু আগে। রওনা দিলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। আমাদের গাড়ি ছেড়েছে রাত ২টা ১০ মিনিটে। আমাদের বাস ভাড়া পরলো জনপ্রতি ৩৭০ টাকা।

কক্সবাজারে কলাতলি বীচের সামনে নামলাম ৫টা ২০ মিনিটে। সড়কপথে ঢাকা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার আর চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতের অবস্থান।
রাতের বেলায় জ্যামের ক্লান্তি অতটা সহ্য করতে হয় না।

আরামে গন্তব্যে চলে যাওয়া যায়। আমরা তাই রাতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা নেমেই কলাতলি মোড় থেকে ভেতরে গলিতে হোটেল খুঁজতে শুরু করলাম। ছুটির দিন থাকাই পর্যটক অনেক। একটু দেখে শুনে নিয়ে নিলাম হোটেল।

হোটেল নেওয়ার সময় অনেক দালাল দেখা যায়, তাই সাবধান থাকবেন। হোটেলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়েই বের হয়ে গেলাম। সবাই মিলে নাস্তা করে চলে গেলাম সুগন্ধা বিচে। হেঁটেই চলে যাওয়া যাবে। দেখলাম বালুকাময় সমুদ্রসৈকত।

নোনাজলে ফেনিল ছাপ স্পষ্ট, সমুদ্রের গর্জন কিনারে চলে আসে, আছড়ে পড়ে ঢেউ। তা দেখে সবাই মুগ্ধ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র, সারি সারি ঝাউবন, শীতল বাতাস আশপাশের পাহাড় দীর্ঘ এ সমুদ্রসৈকতের মনোরম দৃশ্য মনের মধ্যে মুহুর্তে প্রশান্তি এনে দিচ্ছে। সেখানে বিকেলের দৃশ্যও দেখার মতো।

সমুদ্রের এ রকম ঢেউ, সমুদ্রের এত সৌন্দর্য দেখে তিনিও না নেমে থাকতে পারলেন না। আপনারা সমুদ্রে নামার আগে মোবাইল ও টাকা সাবধানে রাখবেন। প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস নিয়ে সমুদ্রে নামবেন না। গোসল করে চলে গেলাম লাবণি পয়েন্টের দিকে।

সেখানে আমরা কিছুক্ষণ ফুটবল খেলে আবারো লোনা পানিতে লাবণি পয়েন্টে সবাই মিলে গোসলে নামলাম সমুদ্রে। এরপর চলে গেলাম হোটেলে। মনে রাখবেন সমুদ্রে গোসল করে আবার হোটেল বা সুইমিংপুলে টাকা দিয়ে হলেও গোসল করবেন, না হলে লবণাক্ত পানি ত্বকে বেশিক্ষণ থাকলে সমস্যা হতে পারে।

আমরা গোসল সেরে দুপুরের ভাত খেতে চলে গেলাম। জনপ্রতি ১০০ টাকা করে খাওয়া যাবে এমন একটি রেস্টুরেন্ট পেলাম। ভ্রমণপিপাসুরা সুগন্ধা বিচ থেকে মূল সড়কের পাশেই ভেতরে অনেক রেস্টুরেন্ট পাবেন যেখানে খেতে পারবেন।

আমরা ভাত খেয়ে ২ ঘণ্টার মতো হোটেলে রেস্ট নিলাম। বিকেল ৪টায় চলে গেলাম শৈবাল বিচে। দ্রুত যেতে টমটমে চেপে বসলাম। ভাড়া ৫০ টাকা। আমরা সবাই দুটি টমটমে বসলাম।

শৈবাল বিচে গিয়ে দেখি অসম্ভব সুন্দর। সন্ধ্যাকালীন শৈবাল বিচে গেলে অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। সন্ধ্যার পর আমরা সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে হেঁটে সমুদ্রের মায়াবী রূপ দেখে দেখে সুগন্ধা বিচের সেদিকে গিয়ে বের হয়ে নাস্তা করলাম। তারপর আবার হোটেলে গিয়ে রেস্ট করলাম। রেস্ট করার সময় সবাই একরুমে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম।

১০টা নাগাদ রাতের খাবার শেষ করে চলে গেলাম লাবণি পয়েন্টের দিকে। সবাই বিচে চেয়ার নিয়ে বসে থাকলো। শীতল হাওয়া লাগছে গায়ে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব কতই না অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। তার মধ্যে কানে বাজছে সমুদ্রের গর্জন।

আমরা সমুদ্রের পাড় থেকে রাত ১টায় চলে আসলাম রুমে। সকালে ভোরে উঠেই চলে গেলাম সূর্য উদিত হওয়ার দৃশ্য দেখতে। তাকিয়ে রইলাম বারবার, সমুদ্র থেকে উঠছে সূর্য, এর আলোকিত হয়ে গেল চারপাশ। এরপর নাস্তা করলাম সবাই মিলে। নাস্তা করেই ঝাউবাগানে চলে গেলাম।

ঝাউবাগানের অপরুপ সৌন্দর্য দেখে যে কারো মন প্রশান্তিতে নিমিষেই ভরে যাবে। সমুদ্রের চিরায়ত সৌন্দর্যের চেয়ে বালিময় পরিবেশে সবুজ গাছের সারির ছবি যে কাউকে মুগ্ধ করে। আবার ডলফিন বিচে গিয়ে নেমে গেলাম গোসলে।

কক্সবাজার গেলে পর্যটকরা সাধারণত কলাতলি, ডলফিন ও লাবণি সৈকতে গোসল করে। এরই মধ্যে লাবণি পয়েন্টে ভিড় বেশি হয়। এরপর হোটেলে গিয়ে গোসল করে নিলাম ১১টার মধ্যে। কারণ হোটেল ছেড়ে দিতে হবে।

এরপর সবার জিনিসপত্র হোটেলের রিসিপশনে রেখে সবাই মিলে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে চলে গেলাম লাবনী পয়েন্টের সেখানে ঝিনুক মার্কেটে।

সবাই যে যার মতো কেনাকাটা করলো। আপনারা চাইলে বার্মিজ মার্কেটেও যেতে পারবেন, সেখানে পাইকারি দামে আচার, চকলেটসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করা হয়। সুগন্ধা বিচের পাশেও অনেক দোকান আছে, সেখান থেকেও কেনা যাবে। সুবিধা মতো যে কোনো জায়গা থেকে কেনা যায়। আমরা সবাই কেনাকাটা করার পর ক্লান্ত হয়ে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে চেয়ারে বসলাম।

একটি চেয়ার ভাড়া ঘণ্টাপ্রতি ৩০ টাকা করে ঠিক করলাম। সবাই বসে সেখানে আড্ডা দিলাম। এমন সময় এক শিশু এসে বললো, ‘ম্যাসাজ করবেন নাকি?’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত টাকা?’ তারা জানালো ৩০ টাকা। অবশেষে দামাদামি করে ২০ টাকায় রাজি হলো তারা। ম্যাসাজ করতে করতে তারা গানও ধরলো।

তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেলো, দিনে ১৫০০ টাকারও বেশি উপার্জন করে তারা। এরপর এক ঘণ্টা কাটতেই চেয়ার ছেড়ে দিলাম। দুপুর হয়ে যাওয়াই সবাই খাওয়ার জন্য হোটেলে গেলাম। এর কিছুক্ষণ পর যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে টমটমে উঠলাম। কলাতলি মোড়ে যেতে গাড়িপ্রতি ভাড়া নিল ৫০ টাকা।

কলাতলি মোড়ে গিয়ে টিকিট কাটলাম। ছুটির দিন হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেশি। বিকেল ৪টার টিকেট পেলাম আমরা। ৪টা ১০ মিনিটে গাড়ি ছাড়লো। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও আপনারা চাইলে ইনানি বিচ, হিমছড়িতেও ঘুরে আসতে পারেন। এছাড়া কক্সবাজার শহরে বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির, হিলটপ রেস্টহাউস ইত্যাদি কক্সবাজার ভ্রমণের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান।

এক মজার অনুভূতি নিয়ে যে যার বাসায় চলে আসলাম। মানসিক প্রশান্তি ও বিনোদনের জন্য কক্সবাজার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে মোহনীয় আকর্ষণে কেড়ে নেই এই সমুদ্রসৈকতটি। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত একটি মায়াবি ও রুপময়ী সমুদ্র সৈকত।

কীভাবে যাবেন?

সড়কপথে ও বিমানপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।৷ সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলি, এস আলম গ্রীণ লাইন ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসের ভাড়া ১১০০-১২০০ টাকা। আর গ্রীণ লাইন, সোহাগ, সৌদিয়া ইত্যাদি পরিবহনের এসি বাস ভাড়া ২০০০- ২৫০০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে নন এসি বাসের ভাড়া পড়বে- পূরবীতে ৩৭০ টাকা, আর এসি বাস হলে ৫৫০ টাকা। এস আলম নন এসি এসি বাস নেই ৪০০ টাকা। মারসা ও সৌদিয়া ৪২০ টাকা। চট্টগ্রামের সিমানা প্লেস, দামপাড়া, চাদঁগাও থেকে বাস ছাড়ে। এছাড়া বিমানেও সরাসরি যাওয়া যায় কক্সবাজার।

কোথায় খাবেন?

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সব পয়েন্টের মোড়ে সব ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে আছে পর্যাপ্ত সংখ্যক রেস্টুরেন্ট। দেখে শুনে যে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন। কলাকলি রোডে মোড়ে গলির ভিতরে খেলে কম দাম দিয়ে খাওয়া যায়।

থাকবেন কোথায়?

বর্তমানে কক্সবাজারে ফাইভ স্টার, ফোর স্টার, থ্রি স্টারসহ সমমানের হোটেল ও রিসোর্টের সংখ্যা কম নয়। সমুদ্রের পাশেই সব হোটেল ভালো মানের।

ধরন অনুযায়ী এসব হোটেলের রুম ভাড়া পড়বে- ৩০০-৮ হাজার টাকা। সুগন্ধা বিচের মোড় থেকে গলির ভেতরে অনেক হোটেল পাবেন। যেখানে কম দামে হোটেল নিতে পারবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়