ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বাঘ গুনতে সুন্দরবনে বসছে ৬৬৫ ক্যামেরা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:১৫, ২০ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ২০:২৩, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

বাঘ গুনতে সুন্দরবনে বসছে ৬৬৫ ক্যামেরা

বাঘ গুনতে সুন্দরবনে বসছে ৬৬৫ ক্যামেরা

অবশেষে সুন্দরবনে শুরু হয়েছে বাঘ শুমারি কার্যক্রম। এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর। ১৫ মাস পর জানা যাবে বাঘ গণনার ফলাফল। এছাড়া আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাঘ শুমারি বা গণনার জন্য সুন্দরবনে ৬৬৫টি ক্যামেরা বসানো হবে। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১১৪ টি।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন বলেন, প্রথম পর্যায়ে খাল সার্ভের মাধ্যমে দেখা হচ্ছে বাঘের পাগমার্ক বা পায়ের ছাপ। পুরো সুন্দরবনে এ খাল সার্ভে করা হবে। এরপর আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনে বসানো হবে ৬৬৫টি ক্যামেরা। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি ও খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি। এসব ক্যামেরা দিয়ে বাঘ গণনা করা হবে তিন মাস।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তিন মাস আবারো ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ শুমারি বা গণনা করা হবে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে বাঘ শুমারির ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, অক্টোবর মাস থেকে বাঘ গণনার কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ ছাড় নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। পরে অক্টোবরে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ছাড় দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সম্প্রতি দুই কিস্তিতে বরাদ্দ মিলেছে এক কোটি ২১ লাখ টাকা।

বন বিভাগ জানায়, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ এবং সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মো. মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে বাঘ শুমারি করা হবে। বনের কম লবণাক্ত, মধ্যম লবণাক্ত ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাই আসবে জরিপের আওতায়।

প্রকল্পটির আওতায় আরো প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে বেশ কয়েকটি কার্যক্রম রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বাঘের শিকার প্রাণী হরিণ ও শূকর শুমারি, বনের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘে স্যাটেলাইট কলার স্থাপনের মাধ্যমে বাঘের গতিবিধি মনিটরিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্পটির কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও চারটি রেঞ্জের কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাদের পোশাক সরবরাহ এবং প্রতি মাসে বন কর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করা।

খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, প্রায় প্রতি বছর আগুন লেগে বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি, সে জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যেন তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায় সেজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি, পাইপ ও ড্রোন কেনা হবে।

সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হওয়ায় গ্রামে বাঘ ঢুকে জানমালের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে থাকে। ওই ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের ফেন্সিং নির্মাণ করে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা এবং ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে ঢোকে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কেল্লা বসানো হবে।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়