ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই ইসলামে

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২২ মার্চ ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শান্তির ধর্ম ইসলামে বর্ণবাদ নয়; সাদা-কালোর শান্তিময় সহাবস্থানের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যেখানে সাদা আর কালো, নাগরিক আর সৈনিক, শাসক আর শাসিত তথা রাজা আর প্রজা সবই সমান।

পবিত্র কোররআন ও সুন্নায় গোত্র প্রাধান্য ও বর্ণবাদিতাকে নিষেধ করা হয়েছে। বর্ণের ভিন্নতা, ভাষাগত বিভাজনকে মহান আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন- وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ

অর্থ: ‘তার আরো এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সূরা: রুম, আয়াত: ২২)

কোরআন-সুন্নাহর বর্ণনা এবং ইসলামি খেলাফতের দায়িত্বশীল বণ্টনই এর অন্যতম উদারহরণ। ধর্ম বিশ্বাস, গাত্রবর্ণ, শক্তি ও বংশের অহঙ্কারবশত কোনো ব্যক্তি বা জাতি কর্তৃক নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করাকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করেনি।

কোরআনে এসেছে- يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

‘হে মানব! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।’ (সূরা: হুজরাত, আয়াত: ১৩)

কোরআনে আরো এসেছে - يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

অর্থ: ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।’ (সূরা: আল-মায়িদাহ, আয়াত: ৮)

ইসলামের শুরু থেকে বর্ণবাদী আচরণের কোনো সুযোগই ছিল না। কে সাদা, কে কালো; ধনী কিংবা গরিব আবার উঁচু-নিচু তারতম্য এবং শ্রেষ্ঠ-নিকৃষ্টের পার্থক্য করার কোনো সুযোগও দেয়নি ইসলাম। হাদিসে এসেছে- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের, কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের উচ্চ মর্যাদা নেই। একজন শ্বেতাঙ্গ একজন কৃষ্ণাঙ্গের তুলনায় এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গ একজন শ্বেতাঙ্গের তুলনায় উচ্চতর নয়। পার্থক্য শুধু মানুষের চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে।’

বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মান-মর্যাদা পাওয়া বর্ণবাদকে টানেননি বরং মর্যাদার মাপকাঠী কী হবে তা বলেছেন- ‘হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহ তাআলার কাছে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী; যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে।’

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করে প্রথমেই বংশ দ্বন্দ্বের অবসান করেছিলেন। ‘আউস ও খাজরাজ’ এর গোত্র দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘ দিনের। এ গোত্রদ্বয়ের বিদ্যমান বিবাদ নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন বিশ্বনবী (সা.)।

মক্কা থেকে হিজরতকারী সাহাবি মুহাজির ও মদিনার স্থানীয় সাহাবি আনসারদের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সুসম্পর্কই বলে দেয় ইসলাম কতবেশি উদার ও নৈতিকতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন।  যেমন-

> সুদূর পারস্যের ক্রীতদাস হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আহলে বাইতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘোষণা করেন- ‘সালমান আমাদেরই ঘরের লোক।’

> হাবশি ক্রীতদাস বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। এ কালো বর্ণের সাহাবিকে দেওয়া হয়েছিল নেতার মর্যাদা। তার সম্পর্কে এক ঘটনা-

একবার বিশিষ্ট সাহাবি আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু তর্কের এক পর্যায়ে হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলে বসলেন- ‘কালো মায়ের সন্তান’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা শুনে বিরক্ত হন। তিনি তখন আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, ‘তুমি এমন ব্যক্তি, যার মধ্যে এখনো জাহেলিয়াতের চিহ্ন রয়েছে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট্ট একটি মন্তব্যের কারণে হজরত আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্যকে ‘জাহেলিয়াত’ এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।

শুধু তা-ই নয়, কৃষ্ণাঙ্গ কৃতদাস হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনায় হিজরতের পর মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নামাজের আজান দেওয়ার জন্য মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত করেন।

> হজরত উসামাহ ইবনু জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রধান সেনাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অথচ তখনও হজরত আবু বকর, ওমর ও আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর মতো প্রসিদ্ধ সাহাবিরা জীবিত ছিলেন।

এসব সাহাবিদের দ্বিধাহীন নেতৃত্ব ও আনুগত্য মেনে নিয়েছিলেন উচ্চ বংশ মর্যাদা ও নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছিলেন- ‘কিশমিশ আকারের মস্তিষ্ক বিশিষ্ট কোনো হাবশি গোলামকেও যদি তোমাদের নেতা নিযুক্ত করা হয়, তবুও তোমরা তার কথা শুনবে এবং পূর্ণ আনুগত্য করবে।’ (বুখারি)

সর্বশেষ
জনপ্রিয়