ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পটুয়াখালীতে ২০২৩ সালে উৎপাদন হবে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ২০২৩ সালের প্রথম ভাগেই বাংলাদেশ-চীনের যৌথ বিনিয়োগের এই প্রকল্পটিতে উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মালিকানাধীন দেশীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি-আরপিসিএল এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন যৌথ বিনিয়োগে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। 

যৌথ মালিকানায় কোম্পানি আরএনপিএল এই স্থাপনাটি নির্মাণ করছে যার কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। 

ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সমুদ্রপথে কয়লা আমদানি করে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সে জন্য এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ব্যবহার করা হবে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি। কলাপাড়া উপজেলায় নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই এটি গড়ে তোলা হচ্ছে।

স্থাপনাটি নির্মাণ করতে ধানবাড়ি ইউনিয়নে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৯১৫ একর। ভূমি উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ। পাইলিংসহ মালপত্র হ্যান্ডলিং জেটি, একসেস রোডসহ প্রকল্পের অফিস ও আবাসন সুবিধাদির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

আরপিসিএল সূত্র জানায়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫৮ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ৪২ শতাংশ কয়লা আমদানি করা হবে। উন্নত প্রযুক্তির কারণে কয়লা পোড়ানোর ক্ষতিকর পদার্থের নিঃসরণ তুলনামূলক কম হবে। এতে ২২০ মিটার উঁচু চিমনি থাকবে। এ ছাড়া থাকবে অ্যাশপন্ড, যেখানে ৯৯ শতাংশ ফ্লাই অ্যাশ বয়লার টিউবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং স্থানীয় বাজারে চাহিদা থাকায় ফ্লাই অ্যাশ বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে।

ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১টি পরিবারকে ২৮১টি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ১২শ’ বর্গফুট পাকাবাড়ি নির্মাণে ২৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। একটি বাড়িতে তিনটি বেডরুম, একটি ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম, দুটি বাথরুম এবং একটি রান্নাঘর রয়েছে।

বাস্তুচ্যুত পরিবারদের পুনর্বাসনের জন্য ৩০ একর ভূমিতে দৃষ্টিনন্দন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী মার্চেই ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১টি আধুনিক পাকা বাড়ি হস্তান্তর করা হবে। পুনর্বাসিত এসব মানুষের সব সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৫ একর জমিতে বাড়ি ছাড়াও মসজিদ, স্কুল, ক্লিনিক, দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, সাইক্লোন শেল্টার, খেলার মাঠ, কবরস্থান, বাউন্ডারি দেয়াল, ভূমি সুরক্ষা, পুকুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মো. তৌফিক ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট এবং ৩১ আগস্ট দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

আরএনপিএলের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মি. মিং বলেন, বিদ্যুৎ খাতে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের অভিজ্ঞতা প্রায় ৭০ বছর। পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তির সব শর্ত পূরণ করা হবে। বিদ্যুতের গুণগতমানও ঠিক থাকবে।

পুনর্বাসনের জন্য আবাসিক এলাকায় নির্মিত হয়েছে স্কুল। বহুমুখী ব্যবহারের জন্য ৩৮ হাজার ৭৩৬ বর্গমিটার একটি কমিউনিটি হল কাম আশ্রয়কেন্দ্র। রয়েছে খেলার মাঠ, মিনি পার্ক, মার্কেট। থাকছে চার হাজার ৯০০ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে পুকুর। 

এ ছাড়া বিদ্যুৎ প্লান্ট এরিয়ার অবকাঠামোসহ রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্প থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ থেকে তিন পয়সা করে উন্নয়ন তহবিলে জমা হবে, যা ব্যয় হবে পুনর্বাসিত মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে। এ ছাড়া এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণকৃতরা যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়