ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নীলাচল ভ্রমণে থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ কত?

মোহাম্মদ এনামুল হক

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ৭ মার্চ ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর বিশেষত্ব শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি জেলা হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর জেলা হিসেবেও বান্দরবান জনপ্রিয়।

এখানকার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাঁড়ে এর সবুজে ঢাকা পাহাড়, উন্মত্ত জলপ্রপাত ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষগুলো।

এই অভিজ্ঞতাগুলো পেতে হলে জানতে হবে কীভাবে এই সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করা যায়। তাই আমরা বান্ধরবান নীলাচল প্রকৃতি কন্যার সান্নিধ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি।

আর আমাদের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল সেটা ভ্রমণে যাওয়ার পরই বুঝতে পারলাম। এক অপূর্ব সৌন্দর্যের মায়ায় পড়েছি। ব্যাগ গুছিয়ে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে বের হলাম বাসা থেকে।

চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজ মোড়ে সবার উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে। আমি ও মঈন ৩টা ২০ মিনেটেই বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল মোড়ে পৌঁছালাম। হাবিব আগে থেকে সেখানে উপস্থিত।

আমাকে দেখতেই হাবিব ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তখন আমরা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নিলাম। মানিক পূর্ব থেকে আমাদেরকে বলে রেখেছিলেন কীভাবে যাবো।

যদিও চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজে যাওয়ার পর ঈগল বাসে চাপার কথা ছিল, তবে সেখানে কোনো ঈগল বাস কাউন্টার নেই। তখন আমরা এনা এক্সপ্রেস বাসে ১২০ টাকা টিকেট কেটে পদুয়া উদ্দেশ্যে রওনা হই।

বাসের জানালার দিকে একটু করে মুখ ফেরাতেই দেখি, গ্রামীণ পরিবেশের সৌন্দর্য, এমন একটি নিদর্শন দেখতে পারাটাও বেশ আনন্দের।

আমি যেন এক কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে মঈন বলে উঠলো, আমরা পদুয়া চলে এসেছি। আমরা সন্ধ্যায় ৬টা ৩৭ মিনিট পৌঁছাই। আর আমাদের রিসিভ করার জন্য মানিক আগে থেকেই পদুয়া উপস্থিত ছিল। মানিক আমাদের সবাইকে দেখতেই ঝাঁপিয়ে ধরলো।

তারপর মানিকের সঙ্গে আমরা তার বাড়িতে যাই। ফ্রেশ হওয়ার পর সেখানে সবাই বিশ্রাম নিয়ে নাশতা করে বন্ধুরা বসে লুডু খেলা শুরু করি। তারপর রাতের খাবারের সেরে নিয়ে সব বন্ধুরা এ ঘরে রাত্রিযাপন করি গল্প, আড্ডা আর খুনসুটিতে।

পরেরদিন সকালের নাশতা সেরে গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমরা চিব্বাড়ী গ্রামে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে কলেজে যাই। দেখলাম অসম্ভব সুন্দর একটি দৃশ্য। যা সত্যিই মনমুগ্ধকর!

তারপর জুম্মা’র আযান দিতেই আমরা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লাম। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হলাম বান্দরবানে অন্যতম দর্শনীয় স্থান নীলাচলে।

নীলাচল বান্দরবান প্রধান শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি টাইগারপাড়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উপরে অবস্থিত।

নীলাচলের বাইরের দিকটা ছিন্নভিন্ন পাহাড় দ্বারা সজ্জিত হলেও ভেতরটা খুব প্রশান্ত। কোথাও বিস্তীর্ণ দিগন্তের ঢালে ঘোরাঘুরির রাস্তা, কোথাও পাহাড়ি পাড়া, আর তার সঙ্গে রূপালি নদী যেন শিল্পীর আঁকা ছবি।

মেঘহীন আকাশে নীলাচল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে বাঁ দিকের ছোট্ট রাস্তাটি নীলাচলের পথ। এ পথে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ে উঠতে হবে।

হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের নীলাচল পর্যটন স্পট। জেলা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচল অবস্থিত। স্পটটি স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। গাড়ি ও পায়ে হেঁটেও সহজে নীলাচলে যাওয়া যায়।

তবে শুধু নীলাচলে যাওয়ার জন্য আলাদা কোনো সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। ভাড়াগাড়ি রিজার্ভ করে কিংবা নিজস্ব গাড়িতে করে এই স্পটে যেতে হয়।

পর্যটকের সুবিধার জন্য নীলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় কাচের টাওয়ার, দৃষ্টি নন্দন সিঁড়ি, গোলঘর ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট।

রাত্রিযাপনের জন্য তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় কয়েকটি কটেজও। পর্যটকদের নজর কাড়তে সক্ষম নীলাচল পর্যটন স্পটে গিয়ে যেকোনো মানুষ মুগ্ধ হতে বাধ্য।

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের বিপরীতে এখানে সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ি সমুদ্রের। যেদিকে চোখ যায় পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের এই সমুদ্র প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনকে হার মানাতে বাধ্য।

নীলাচল হতে খোলা চোখে অনায়াসে দেখা যায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী। রাতের বেলা এখান থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে মনে হয় একেকটি গ্রহ-নক্ষত্র।

ভূমি থেকে আকাশের তারাকে যে রূপে দেখা যায় কর্ণফুলীতে অবস্থানরত জাহাজগুলোও রাতের বেলা নীলাচল থেকে তেমনি মনে হয়।

দিন আর রাতের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য নীলাচল পর্যটকদের কাছে আরো বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যায় নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অনায়াসে দেখা যায়।

তবে নীলাচল পর্যটন স্পটে দিনের চেয়েও রাতের চাঁদের আলোয় সময় কাটানো যায় অতি রোমাঞ্চের মধ্য দিয়ে।

চারদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। এরপর সবকিছু গুছিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দেওয়ার পালা। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমরা কেরানীহাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে। কেরানীহাট বায়তুশ শরফ হোটেল হালকা পাতলা নাস্তা খেয়ে নিলাম।

ততক্ষণ আমরা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল আরও কিছুদিন না হয় থেকে যাই। কী সুন্দর সবকিছু!

কিন্তু জীবনের তাগিদে ফিরে আসতে তো হবে। এরই মাঝে সৌদিয়া গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম প্রিয় শহর চট্টগ্রাম উদ্দেশ্য।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সরাসরি এসি-ননএসসি বাসে আসতে পারবেন বান্দরবান। তবে চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান আসতে হলে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে আসতে হবে।

এখান থেকে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে আপনি পাচ্ছেন শ্যামলী, সৌদিয়া, পূরবী-পূর্বাণী নামের অনেক বাস সার্ভিস। বাসের ভাড়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

বাসে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। আর নিজস্ব ও ভাড়ায়চালিত রিজার্ভ গাড়ি নিয়েও বান্দরবান আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে সময় লাগবে আরো কম।

তবে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের গাড়িতে করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানিহাট রাস্তার মোড়ে নেমে গিয়ে পৃথক গাড়িতে করে বান্দরবান আসতে পারবেন। কেরানিহাট থেকে বান্দরবানের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। সময় লাগে ৪০ মিনিট থেকে একঘণ্টা।

কোথায় থাকবেন?

বান্দরবানে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজ আছে। হলিডে ইন রিসোর্টে এসি-ননএসি দুই ধরনের রুম ভাড়া পাওয়া যায়।

এছাড়া তাবুতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও আছে এখানে। এখানে থাকতে প্রতিদিন রুম প্রতি গুনতে হবে দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।

পালকি গেস্ট হাউজ হচ্ছে জেলা শহরের মধ্যেই পাহাড়ের উঁচুতে এসি-ননএসি দুই ধরনের রুমেই থাকার সুব্যবস্থা আছে।

এখানে থাকতে হলে প্রতিদিন গুনতে হবে ১২০০-২৫০০ টাকা। ভেনাস রিসোর্টেও পর্যটকদের থাকার জন্য অনেক আকর্ষণীয় কটেজের ব্যবস্থা রয়েছে। সঙ্গে খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে।

এখানে থাকতে হলে প্রতিদিন গুনতে হবে ২০০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। পর্যটন মোটেলেও পর্যটকদের স্বপরিবারে রাত্রিযাপন ও খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাত্রিযাপনে গুনতে হবে রুমপ্রতি ১৫০০-২৫০০ টাকা।

লেখক শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়