ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তিস্তা সেচের পানিতে হাসছে ধান ক্ষেত, কৃষকরাও ভালো ফলনের আশায়

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০৯, ৩০ আগস্ট ২০২২  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

পানিতে টইটম্বুর তিস্তা সেচ প্রকল্পের খালগুলো। সেচের পানি পেয়ে সবুজ হয়ে উঠেছে রংপুর, নীলফামারী আর দিনাজপুরের ধান ক্ষেতগুলো। এখন মাঠের পর মাঠ শুধু সবুজ আর সবুজ। কৃষকরাও এখন ভালো ফলনের আশায়।  

এবার প্রায় ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেচ খালের মাধ্যমে ভূ-উপরিভাগের পানিতে হচ্ছে ফসলের আবাদ। সেচ সুবিধা ভোগ করছে ১৫ লাখের বেশি কৃষক। চলতি মৌসুমে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার বেশি ধান উৎপাদনের প্রত্যাশা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বড় অংকের জ্বালানি সাশ্রয় হবে। সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারের ফলে বছরে একর প্রতি কৃষকের সার্ভিস চার্জ মাত্র ৪৮০ টাকা। অথচ পাম্পে সেচ দিলে খরচ হতো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। খরাতেও সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পেয়ে খুশি চাষিরা।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা এলাকার কৃষক আজহার আলী বলেন, হামার এত্তি যখন পানির দরকার, তখন পানি থাকে না। চাষাবাদ করতে খুব কষ্ট হয়। ওই তকনে হামরা তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি দিয়্যা আবাদ সুবাদ করি। এবার বৃষ্টি না হওয়াতে চিন্তাতে আছনো। কিন্তু সেচের পানি ঠিকমতো পাওয়াতে তেমন সমস্যা হয় নাই। আশা করা যায় ভালো ফলন হইব।

নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বলছেন, খরা মোকাবিলায় শুকনো মৌসুমে বোরো আর বর্ষায় আমন আবাদে দেওয়া হচ্ছে সম্পূরক সেচ। এতে দুই লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করা যায়।

তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক মাহাবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এবার রংপুরসহ উত্তরের ১৬ জেলার চারটি কৃষি জোনে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রংপুর অঞ্চলে (নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর। মধ্য আগস্ট পর্যন্ত আবাদের আওতায় ছিল ৫ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম কামরুল হাসান জানান, গেল দুদিনে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে রংপুরে। শনিবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার (২৮ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে সর্বোচ্চ ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে ৬৩, সৈয়দপুরে ৪৩, রাজারহাটে ৫৮, ডিমলায় ৩৭, তেঁতুলিয়ায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৫৫০ মিলিমিটার থাকে। কিন্তু এ মৌসুমে আগস্টের ১ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত ২৯১ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জুলাইয়ে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় ৪৫৩ মিলিমিটার। কিন্তু গেল দুই-তিন বছর ধরে এর ব্যতয় ঘটছে।

রংপুর বিভাগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক শূন্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪৪ দশমিক ৯ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তিনি আরও জানান, রংপুরে গত বছর মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১ হাজার ৮৩০ মিলিমিটার। এ বছর বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়নি। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন উত্তরের কৃষির জন্য অশনি সংকেত। স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে আমন চাষে তিন ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা। তাদের সেচে বাড়তি খরচ, আগাছা, রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যায় এবং উৎপাদিত ধানে ভালো মানের চাল পাওয়া যায় না।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়