ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

হেলথ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২৪ নভেম্বর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপকভাবে ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই শতাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগের কোনো ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়নি। সামগ্রিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সবিশেষ মনোযোগী হলেই কেবল ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব।

কালজয়ী জীবনাদর্শ ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আজকে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ইসলামের অনন্য কিছু নিয়ে কথা বলব ইনশাআল্লাহ।
পবিত্র এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে এবং যারা পূতপবিত্র থাকবে, তাদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও সওয়াবের।

মদিনার নিকটবর্তী কুবা এলাকার লোকজন পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করত। তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেখানে এমন লোকেরা রয়েছে, যারা ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন’ (সূরা তাওবা-১০৮)

আরো বর্ণিত আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের’ (সূরা বাকারা-২২২)।

প্রিয়নবী সা: বলেন, ‘তোমরা তোমাদের উঠান ও আঙিনা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখো’ (জামে তিরমিজি-৭৭৬৯)।

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সালাত, এই সালাতের জন্য পূর্বশর্ত আরোপ করা হয়েছে পবিত্রতা (অজু) অর্জনকে। আরেক হাদিসের মধ্যে পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

হজরত আবু মালেক আশআরি রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক’ (মুসলিম ২২৩)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা যখন সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও, কিংবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নেবে’ (সূরা মায়িদাহ-৬)।

নবী সা: বলেন, ‘সালাত বেহেশতের চাবি; অজু (পবিত্রতা) সালাতের চাবি’ (মিশকাত)।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অর্জনের সরাসরি নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন, হে বস্ত্রাচ্ছাদিত, উঠুুন, সতর্ক করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার কাপড় পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন’ (সূরা মুদ্দাছছির : ১-৪)।

পশ্চিমা দেশগুলোতে মানসিক রোগী ও হতাশাগ্রস্ত লোকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাগলাগারদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মানসিক রোগ ও হতাশাগ্রস্ত লোকদের নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে অধিক পরিমাণে।
এক মার্কিন গবেষক তার প্রবন্ধে লিখেছেন, আমি ডিপ্রেশন (মানসিক রোগে) আক্রান্ত কয়েকজন রোগীকে প্রতিদিন পাঁচবার মুখ ধৌত করিয়েছি। কিছু দিন পর তাদের রোগ কমে যায়। অতপর, আরো কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করলাম এবং সেই সাথে দিনে পাঁচবার হাত, মুখ ও পা ধোয়ার ব্যবস্থা করলাম।

এবার তারা অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেলেন। এই গবেষক তার প্রবন্ধের উপসংহারে অকপটে স্বীকার করেছেন, মুসলমানদের মধ্যে মানসিক রোগ কম দেখা যায়। কারণ, তারা দিনে কয়েকবার হাত, মুখ ও পা ধুয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সহজ ওষুধ হলো অজু।

এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে অজু করিয়ে দিন, তারপর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করুন, দেখবেন প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মুসলিম গবেষক বলেন, মানসিক রোগের কার্যকরী চিকিৎসা হলো অজু।

পশ্চিমা দেশের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীদের শরীরে অজুর মতো করে দিনে কয়েকবার পানি ঢেলে দেন। এতে রোগের উপশম হয় দ্রুত।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার আরেকটি উপায় হলো গোসল। এটিও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশিকা ও ইবাদত। সপ্তাহে ন্যূনতম একবার হলেও গোসল করাকে আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে ইসলামে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘জুমার দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব’ (বুখারি-৪৭৯)।

হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় নিজের মাথা ও শরীর ধৌত করা।’ (বুখারি-৮৯৭, মুসলিম-৮৪৯)

মুখের যত্নে নেয়া ও দাঁত পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে প্রিয়নবী সা: বলেন, ‘মিসওয়াক করলে যেমন মুখ (গাছের ছোট ডাল যা দাঁত মাজতে ব্যবহৃত হয়) পরিষ্কার ও পবিত্র হয়, তেমন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনেরও কারণ হয়’ (আন নাসায়ি, ইবনে মাজাহ)।

হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, ‘রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি আমার উম্মতদের ওপরে বেশি কষ্টসাধ্য না হয়ে যেত, তাহলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের আগে মিসয়াক করার নির্দেশ দিতাম’ (বুখারি-৮৭৭ )।

নিয়মিত মিসওয়াক করলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়, মাথা ব্যথা দূর হয় এবং মাথার রগগুলোতে প্রশান্তি আসে। এতে শ্লেষ্মা (কফ, সর্দি) দূর হয়, দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ম হয়, পাকস্থলী ঠিক থাকে এবং খাবার সহজে হজম হয়ে যায়, বিবেক বৃদ্ধি পায়। সন্তান প্রজননে বৃদ্ধি ঘটায়। বার্ধক্য দেরিতে আসে এবং পিঠ মজবুত থাকে (হাঁশিয়াতুত তাহতাভি, আল মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-৬৮)।

রাসূল সা: যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন (সহিহ মুসলিম শরিফ, পৃষ্ঠা-১৫২, হাদিস-২৫৩)।
সপ্তাহে একবার নখ কাটা, শরীরের অতিরিক্ত পশম পরিষ্কার করা মুমিনদের আবশ্যকীয় কাজ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মানুষের স্বভাবজাত বিষয় পাঁচটি- ১. সুন্নতে খতনা; ২. নাভির নিচের পশম কাটা; ৩.বগলের নিচের পশম কাটা; ৪. নখ কাটা এবং ৫. গোঁফ ছোট করা’ (বুখারি, হাদিস-৫৮৮৯)।

তাই আসুন ইসলামের অনন্য নির্দেশনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের যাপিত জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গরূপে গ্রহণ করে ডেঙ্গুসহ অপরিচ্ছন্নতাকেন্দ্রিক সব ধরনের রোগব্যাধি থেকে বেঁচে থেকে আনন্দময় জীবন যাপন করি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়