গিবত বা পরনিন্দা মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়
ইসলাম ডেস্ক
ফাইল ছবি
গিবত বা পরনিন্দা ব্যাভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। গিবত মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণ দূর করে দেয়। ইসলামে কাউকে সামনে থেকে নিন্দা করাও মারাত্মক অপরাধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত: ০১)
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সামনে-পেছনে কারো নিন্দা বা গিবত করা অথবা সামনাসামনি কাউকে দোষারোপ করা ও মন্দ বলা জঘন্য পাপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর শাস্তিও ভয়াবহ।
একই সুরায় শাস্তির কথা বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (জাহান্নামের একটি স্তর)। আর কিসে তোমাকে জানাবে হুতামা কি? আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন। যা হৃদপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয় তা তাদের আবদ্ধ করে রাখবে। প্রলম্বিত স্তম্ভসমূহে। ’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত: ০৪)
ইসলামের দৃষ্টিতে পরনিন্দা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। পবিত্র কোরআনে এ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। ’ (সুরা: হুজুরাত, আয়াত: ১২)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখগুলো তামার তৈরি এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আঁচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল, এরা কারা? তিনি বলেন, এরা সেসব লোক, যারা মানুষের গোশত খেতো (গিবত করত) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানত। ’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৭৮)
রাসুল (সা.) পরনিন্দাকে ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য আখ্যায়িত করেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, এটা কীভাবে? তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে যে গিবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষের মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না। ’ (শুআবুল ঈমান)
আমরা সাধারণত মনে করি, যে দোষ মানুষের মধ্যে সত্যিই আছে তা চর্চা করলে গিবত হয় না, কারো মধ্যে সত্যিই কোনো দোষ থাকলে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে সময় কাটানো দোষের নয়। অথচ হাদিসের ভাষায় এটিকেই গিবত বলা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়। তাকেই গিবত বলে। অর্থাৎ কারো অগোচরে তার এমন দোষ বলা, যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তাই গিবত বা পরনিন্দা। আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা হবে অপবাদ (তুহমত)। যা পরনিন্দা থেকেও মারাত্মক গুনাহ। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৯)
এই পাপের পরকালীন পরিণতি অনেক কঠিন। আমাদের সবার উচিত এ অভ্যাস ত্যাগ করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে গিবত বা পরনিন্দা ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
- শিশুর জিদ দূর করার আমল
- যে দোয়া পড়বেন সকল প্রয়োজন ও আশা পূরণে
- কোরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত
- ফজরে ঘুম থেকে না উঠতে পারার কারণ ও উঠার উপায়
- কোরআন মানব জাতির জন্য রহমত ও হেদায়েত
- কেয়ামত ঘনিয়ে আসছে, বোঝা যাবে এসব আলামতে
- শীতে অজু ও নামাজ নিয়ে যা বলেছেন বিশ্বনবি
- যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তা কবুল করবেন
- দাজ্জালের আবির্ভাব ও তার পরিচয়
- যেসব ফেতনা প্রকাশ পাবে কেয়ামতের পূর্বে