ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্ষমা করো হে বসুন্ধরা

ফারজানা অনন্যা

প্রকাশিত: ১২:২৪, ৫ জুন ২০২৩  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

‘‘...সুন্দরের প্রাণমূর্তিখানি
মৃত্তিকার মর্তপটে দিলে তুমি প্রথম বাখানি
টানিয়া আপন প্রাণে রূপশক্তি সূর্যলোক হতে,
আলোকের গুপ্তধন বর্ণে বর্ণে বর্ণিলে আলোতে।
ইন্দ্রের অপ্সরী আসি মেঘে হানিয়া কঙ্কণ
বাষ্পপাত্র চূর্ণ করি লীলানৃত্যে করেছে বর্ষণ
যৌবন-অমৃতরস, তুমি তাই নিলে ভরি ভরি
আপনার পুত্রপুষ্পপুটে, অনন্তযৌবনা করি
সাজাইলে বসুন্ধরা।’’
(বৃক্ষবন্দনা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
পৃথিবী আর প্রকৃতি আমাদের দুই অভিভাবক: আশ্রয়দাতা এবং লালনকর্তা। আদি প্রকৃতি ও পৃথিবীর রুক্ষ্ম রূপকে প্রথম অলংকৃত করেছে সুন্দরের প্রতিমূর্তি ‘বৃক্ষ’। বৃক্ষ, ফুল-ফুল, জল-স্থল, জীব—সবকিছু মিলে তৈরি হলো বসুধা মাতার পূর্ণ প্রতিমূর্তি। পৃথিবীর সম্পূর্ণা রূপ।

পৃথিবী আমাদের একমাত্র বাসস্থান। মহাবিশ্বের অজস্র কোটি গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে আমাদের একমাত্র বাড়ি হলো পৃথিবী! বিশ্ব প্রকৃতির আপন খেয়ালে পৃথিবীতে এলো প্রকৃতি মাতার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান জীব মানুষ। প্রকৃতি স্থবির নয়, সে সজীব—এ কথা প্রায় সোয়াশ’ বছর আগে আমাদের জানিয়ে গিয়েছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। এমনকি প্রতিটি বৃক্ষ অনুভূতিপ্রবণ, আঘাতে সে ন্যুব্জ হয়, ভালোবাসায় উৎফুল্ল হয়। যাকে আমরা আজ ‘প্ল্যান্ট নিউরোবায়োলজি’ নামে অভিহিত করি। জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই বিজ্ঞানের সে তথ্য আমাদের সামনে হাজির করেছিলেন।

মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির মাঝেই আমাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। তাই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। সজীব প্রকৃতি মানে শুধু বৃক্ষ বা অরণ্য নয়। আমরা মানুষেরাও এই প্রকৃতির অংশ, অথবা এর সম্প্রসারণ। সবাই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বুদ্ধিমান প্রাণী ও সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রকৃতির রক্ষক হওয়ার বদলে আমরা যখন তার ভক্ষক হয়ে দাঁড়াই, তখন সেটার ফলাফল কীরূপ ভয়াবহ হতে পারে, তার উদাহরণ বিগত বছরে ঘটে যাওয়া মহামারি করোনাভাইরাস, প্রতি বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস কিংবা বর্তমান ধরিত্রীর তীব্র উত্তপ্ত রূপ।

মানব সৃষ্ট যন্ত্রসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। নিজেদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য ভোগবাদী বিচার বিবেচনাহীন মানুষ উজাড় করছে বন-বনানী, পাহাড়-অরণ্য, ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র্য আর দূষিত করছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বায়ু।

যান্ত্রিক সভ্যতার নিষ্ঠুরতায় আজ আর পাখির কুহুতানে আমাদের ঘুম ভাঙে না। যানবাহন ও কল-কারখানার দানব চিৎকারে নাগরিক দিবসের সূচনা ঘটে! হারিয়ে গেছে সেসব সোনালি দিন, যে দিনগুলোতে বাড়ির আঙিনায়, গাছের পাতার আড়ালে নেচে বেড়াতো দোয়েল, কোয়েল, ফিঙে, বুলবুলি—নাম না জানা পাখির দল! নেই ঝোঁপ-ঝাড়ে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আর রাতের আঁধারে পুকুর পাড়ে শত-সহস্র জোনাকির আলো। এসব আজ শুধুই অতীতের স্মৃতি। প্রকৃতি, বন, বন্যপ্রাণী ও মানুষকে নিয়ে এতদিন যে ভারসাম্য বজায় ছিল, তা আজ ধ্বংসের মুখে।

বিশ্ব গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে প্রায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিশ্ব পরিবেশ এখন হুমকির মুখে। মানুষের বসবাসের উপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীর অস্তিত্বের প্রয়োজনে গাছপালা-বৃক্ষরাজি অপরিহার্য। বন-বনানী সমৃদ্ধ অরণ্যানীর বৃক্ষসমূহ শুধুই নিঃসর্গ প্রকৃতির শোভাবর্ধকই নয়, বরং তা মানুষের জীবনযাপন ও জীববৈচিত্র্যের অপরিহার্য অংশ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে বৃক্ষরাজির এই অনিবার্য ভূমিকা এমনই যে, বৃক্ষহীন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। অক্সিজেন সরবরাহ করে বৃক্ষ কেবল আমাদের জীবন রক্ষাই করে না, প্রাকৃতিক ও জাগতিক ভারসাম্য রক্ষায় পালন করে অভাবনীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের অর্থনীতিতে যেমন বনাঞ্চলের ভূমিকা আছে; তেমনই আবহাওয়া-জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনজ সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশে মোট আয়তন ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি হিসাবমতে বনভূমির পরিমাণ ১৬ শতাংশ ধরা থাকলেও বাস্তবে আছে ৯ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতি বছর বন উজাড় হচ্ছে ৯:৪ শতাংশ। পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম বনভূমি পরিবেষ্টিত দেশগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে বনভূমির হার মোট ভূমির মাত্র ৬.৭ শতাংশ।

আইন প্রয়োগের ঘাটতির কারণে নির্বিচারে বন-ধ্বংসের ফলে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর বনভূমি উজার হয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শালবন প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে। এমনকি প্রত্যক্ষ তদারকি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাংলাদেশের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে সক্ষম পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বনাঞ্চলে নির্বিচারে চলছে বৃক্ষ নিধন। এছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেও ইতোমধ্যে সক্ষমতা হারাচ্ছে তথা হুমকির সম্মুখীন সুন্দরবন। বিশ্বব্যাপী নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের মাধ্যমে অবাধে কার্বন নিঃসরণের ফলে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই হয়নি, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বন ও বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকূল আজ ধ্বংস ও বিলুপ্তির পথে। শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে একের পর এক প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে দেওয়ায় ক্রমশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের জন্য পানিনির্ভর খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বিশ্বব্যাপী চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কারখানার বয়লার চেম্বারের মতো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশ্বের অনেক দেশে বর্তমানে একই রকম ভয়াবহ তাপপ্রবাহ চলছে। বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন থেকে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। এবছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ বছর আগে ২০১৪ সালে মারাত্মক তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল। সে সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এই মাঝের সময়টা বা গত আট বছরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচেই ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে অনাবৃষ্টি, পানি অপচয় ও ব্যবহারজনিত কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনের পর দিন অতি দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এ বিপর্যয় মূলত পর্যাপ্ত পরিমাণে বনভূমি ও যথেষ্ট পরিমাণে গাছপালা না থাকারই ফল। এ প্রেক্ষাপটে দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত জেলাগুলোর আবহাওয়ায় অনেকদিন ধরেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দিনের বেলায় দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এ লক্ষণ মরুকরণ প্রক্রিয়ার আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস।

এসব কি তাহলে প্রকৃতির প্রতিশোধ? প্রকৃতি যদি সজীব হয়, যদি তার অনুভূতি থাকে, তাহলে তার এমন প্রতিশোধে বিস্মিত হবো না। লাখ লাখ বছর ধরে মানুষ ক্রমেই প্রকৃতির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। বন কেটে বানিয়েছে নগর, ভূগর্ভ থেকে হরণ করেছে গ্যাস, তেল ও কয়লা, নদীপথ পরিবর্তন করে নির্মাণ করেছে অতিকায় বাঁধ। প্রকৃতির ওপর এক কাল্পনিক বিজয় লাভ করে আমরা নিজেদের অজেয় ভেবেছি। কিন্তু এখন সর্বংসহা প্রকৃতি মানবজাতির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘প্রশ্ন’ কবিতায় প্রকৃতির প্রতি প্রশ্ন রেখেছিলেন—
‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো।’
দেখা যাচ্ছে প্রকৃতি ক্ষমা করেনি! বরং পরিবেশ পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার ভেতর দিয়ে নিজের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

প্রকৃতি একসময় প্রতিশোধ নেবে, এমন এক সম্ভাবনার কথা প্রায় দেড়শ’ বছর আগে উল্লেখ করে গেছেন ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস। প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে পারে, এমন কথা সম্ভবত তিনিই প্রথম বলেছিলেন তাঁর অসম্পূর্ণ ‘ডায়ালেক্টিকস অব নেচার’ গ্রন্থে। তাতে তিনি প্রকৃতির বিরুদ্ধে ধাবমান মানুষকে এই বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন, ‘এতটা বাড়াবাড়ি করো না। মনে রাখবে, তোমাদের প্রতিটি বিজয় প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে তোমাদের কাছেই ফিরে আসবে।’ বৈশ্বিক উষ্ণতা হয়তো তাঁর অজ্ঞাত ছিল। কিন্তু তিনিই প্রথম সমাজবিজ্ঞানী, যিনি অবিবেচক মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন প্রকৃতির ওপর লাগামহীন আক্রমণের ফল হবে বনজ সম্পদের ধ্বংস, সুপেয় জলের প্রবল সংকট ও শস্যভূমির অনুর্বরতা। আজকের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পারি, কী কঠোর সত্য উচ্চারণ করেছিলেন তিনি।

একটি আশার কথাও বলেছিলেন তিনি। মানুষকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমরা যদি নির্দয় বিজেতা না হয়ে, বহিরাগত কোনো আক্রমণকারী না হয়ে প্রকৃতির অনুগত প্রজা হই, তাহলে সে আমাদের কেবল আশ্রয় দেবে তাই-ই নয় বরং আমাদের রক্ষাকর্তাও হবে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, খুব বেশি কিছু নয়, এর জন্য প্রয়োজন শুধু প্রকৃতির আইন মেনে চলা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায়ও আমরা সেই একই ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম। যান্ত্রিকতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতি কোলে আশ্রয়ের আকুতি!
‘‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা!’’

পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজন সচেতনতা। ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপলায়েন্সের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা, পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ওপর জোর দেওয়া, ইকোসিস্টেমকে সুস্থ রাখার জন্য সাধারণ জনগণসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে পরিবেশের বিপর্যয় সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, কৃষি জমিতে কীটনাশক ও কেমিক্যালের ব্যবহার কমিয়ে জৈবসার ব্যবহার করা, এয়ার কন্ডিশনের ব্যবহারও কম করা, দেশের প্রতিটি এলাকায়, গৃহাঙ্গণে ফল-মূল-সবজি উৎপাদন ও বৃক্ষ রোপণের কর্মসূচি ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশ সুন্দর রাখতে পারি। ফলে বাঁচবে পৃথিবী, বাঁচবে মানব জাতি। শুধু প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা ও জনগণের পরিবেশবান্ধব চিন্তা-চেতনা।

পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনে মানব সচেতনতার একটি বৃহত্তর পদক্ষেপ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্নতার কারণজনিত বিষয়ে ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ জুন থেকে ১৬ জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের ‘প্রথম পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’র স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত মান উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার লক্ষ্যে পালন করা হয় দিবসটি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বার্তা তখনই সফলতা লাভ করবে; যখন প্রকৃতিকে তার স্বরূপ রেখে উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও মানবতা বিকাশের পথে বিশ্বের মানবজাতি এগিয়ে যেতে পারবে। আর এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা, কঠোর আইন ও মূল্যবোধের বিকাশ।

মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বিপন্ন এই ধরণী মাতার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কথা। পূর্ণিয়া জেলার লবটুলিয়া, নাড়া বইহার, ফুলকিয়া বইহারের বনাঞ্চলের জমি প্রজাবিলি করার কাজে গিয়ে সেই বনের মায়ায় পড়ে যান সত্যচরণ বা লেখক। তবে শেষ পর্যন্ত তাকেই ঘন বন কেটে শস্যপূর্ণ জনপদ বসাতে হয়। লেখক তাই ‘আরণ্যক’র সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে, ‘‘হে অরণ্যাণীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়। বিদায়...’’

ক্ষমা করো...
আমাদের ক্ষমা করো বসুন্ধরা!

সর্বশেষ
জনপ্রিয়