ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

কবিতা পর্ব: কী হয়েছি ও শমন

মনদীপ ঘরাই

প্রকাশিত: ১২:৪২, ৭ নভেম্বর ২০২২  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

কী হয়েছি?

আমি একটা কাঁচের বৈয়াম হলেও হতো;
ভেঙে যেতে পারি—এ ভয়ে হলেও আগলে রাখতে।
আমি তোমার আলমিরার চাবি হলেও হতো;
হারাবার ভয়ে কোমরে কিংবা হ্যান্ডব্যাগে সামলে রাখতে।
যদি তোমার খাবারের থালা হতাম!
প্রতিবেলা শুরুর আগেই ধুয়ে রাখতে।
যদি তোমার নরম নাকের নাকফুল হতাম;
ঘুমে কিংবা জাগরণে ছুঁয়ে থাকতে।
তোমার শোবার ঘরের আয়না হলেও হতো;
তোমাকে দেখানোর ছলে নিজে তোমায় দেখে নিতাম।
ক্যামেরার লেন্স হলেও মন্দ হতো না;
তোমার ছবি তোলার ফাঁকে খানিক তোমায় রেখে নিতাম,
মেখে নিতাম।
চার সংখ্যার গোপন পাসওয়ার্ড হলেও হতো;
নিয়ম করে আমায় মনে রাখতে।
আমি তোমার নাম হলে সবচে’ ভালো হতো;
আজীবন তুমি পরিচয়ের খোলসে আমার থাকতে।
কিছুই পারলাম না—
হয়ে গেছি সামান্য ঢেউ,
যাকে অর্জনে কোনো শ্রম-ঘামের হিসেব করতে হয়নি তোমার।
তাই অর্জনের আনন্দও নেই
আকাঙ্ক্ষাও নেই
আদর কিংবা অনাদরও না!
তীরে এসে আছড়ে পড়েছি অবুঝ খেলায়।
অযতনে রেখো না। দেখে নিও...
একদিন চলে যাবো ভাটার পিছুটানে
তোমাদের অবহেলায়-হেলায়।

****

শমন

খুব দরকার দরজা বন্ধ করে দেয়া।
ঝড় আসছে। পিঠে নিয়ে ধুলো আর জল।
প্রবল শক্তিশালী বাতাসের ঝড়।
আমার দরজার ছিটকিনি নষ্ট হয়ে গেছে বহুদিন আগে।
ইচ্ছে করেই হয়তো নষ্ট থাকতে দিয়েছি।
দরজা ঠেলে একরাশ ধুলো ঢুকে গেছে বাতাসের ইশারায়।
এলোমেলো হয়ে গেছে টেবিলে রাখা পাণ্ডুলিপি।
প্রবল বাতাসে।
তীব্র আগ্রাসে।
এই বাতাস...
দরজাটাকে আঘাত করছে বারবার।
অসহায় হয়ে পুরাতন কাঠের দরজাটা বলছে—
শমন প্রয়োজন। শমন। যাকে তোমরা দমন বলো!
ঝড় ঢুকতে দেয়া ঠিক হয়নি হয়তো।
দরজা ভেঙে যাচ্ছে।
ঘর ভেসে যাচ্ছে জলে।
ঝড়ের ডেকে আনা জলে।
শমন। শমন।
যজ্ঞে পশু বলি দেওয়াকেও নাকি শমন বলে!
বলি হচ্ছে ঘর-দরজা;
বলি হচ্ছি আমিও।
ঝড়ের হাতে। পরের হাতে।
অথচ নিজের জীবন নিজের হাতে থামিয়ে দেয়া ছিল ঢের গৌরবের!

সর্বশেষ
জনপ্রিয়