কবিতা পর্ব: ইউজারসিফ
মেহেরুন্নেছা
ছবি: সংগৃহীত
ইউজারসিফ
ইউজারসিফ, শুভ সকাল।
এইটুকু জেনো শামুকের মাঝেই
বেঁচে আছি, ঝিনুকে নয়।
অথচ কতবার ঝিনুকের
বিবরে আমরা ঢুকতে চেয়েছিলাম।
তুমি বলেছিলে, তোমার সঙ্গে
আমি ঝিনুকে বসবাস করতে চাই
শামুকে নয়।
তা আর হলো কই?
***
তুমিতো জানো ইউজারসিফ
অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ কিংবা
পুন্ড্র আর সুম্ম;
অথবা চলে যাও তুমি
মায়াদের ইতিহাসে,
মিশরীয়দের ইতিহাসে
অথবা চলে যাও তুমি আরো প্রাচীনে।
ফিরে আসো আবার বর্তমানে
সবটুকুই গ্রন্থিত পাবে তুমি
দিবা-রাত্রির আলো-আঁধারি আখ্যানে।
কি অদ্ভুত তাই না?
***
আরো অদ্ভুত কি জানো,
মহাকালের সঙ্গে
অবিরাম সংঘর্ষে লিপ্ত এই ব্রহ্মাণ্ড!
ইউজারসিফ!
সেথায় মহাকালের অস্তিত্ব কি
তুমি টের পাও?
জানো তো এই মহাকাল অরূপ,
এই মহাকাল স্পর্শের ঊর্ধ্বে,
অব্যয় মহাকাল চিরতরে শূন্য!
তবুও মহাকালের চিহ্ন
খুঁজে পাবে তুমি
তোমার শরীরের মাঝে
আমার শরীরে
আমার ভেতর থেকে ভেতরের
অতল গহীনে।
***
ইউজারসিফ! তাকিয়ে দেখো
আরো মোলায়েম এক সংঘর্ষ
বৃষ্টির সঙ্গে মাটির
জলের সঙ্গে পবনের
ঠিক যেন তোমার সঙ্গে আমার!
অথচ বরাবর তুমি বলতে
হেথা সংঘর্ষ কোথা প্রিয়া?
আমি তখন
পায়রা হয়ে
তুলতুলে কণ্ঠে
মৃদুলয়ে
বলতাম, ওহ প্রিয়তম!
এই সংঘর্ষ মানে প্রেম
এই সংঘর্ষ মানে মিলন
এই সংঘর্ষ মানে হাহাকার!
***
তুমি বলতে তবে হাহাকার কেনো?
আমি বলতাম, এ তো হাহাকার নয়
এ যে গভীরে নেওয়ার আকুলতা!
ইউজারসিফ, সুখময় সেই হাহাকার;
নাকি বেদনার ঝড়
অনুভব করতে কখনো?
আজ আমাদের মাঝে বহমান ভাগীরথী
তুমি বামে আমি ডানে
তুমি রাঢ়ে আমি বঙ্গে
আজ আমাদের মাঝে প্রতিদিন রচিত হচ্ছে
দ্বিভাজিত সনাক্তীনামা
শম্বুকগতিতে।
***
হায়! শত নৈবেদ্যের সমাহার ঘটিয়েও
বেলাশেষে আমাদের সকল প্রেম
হয়ে গেলো অপ্রেম
আমরা একে অপরকে ছেড়ে গেলাম।
ইউজারসিফ, আমার ইউজারসিফ!
আঁধার ঘিরে ধরেছে আমাকে
তোমার ওখানেও কি আঁধার?
বলো ইউজারসিফ, তোমাকেও কি
বিষন্ন সময় রক্তাক্ত করে চলেছে?
ওহ প্রিয়তম! যদি এমন না হয়
তবে ভেবে নিও
তুমি আমাকে কখনো
একটি গোলাপও দাওনি।
দিয়েছো কেবল গোলাপের নামে
আসমুদ্র কাঁটা।