ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

এখানে কয়েকটি জীবন: গল্পজুড়ে জীবনের বিস্তার

মেহেদী হাসান সজীব

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ৭ মার্চ ২০২৩  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গল্প ভালো লাগে কেন জানেন? কেননা গল্প আপনার-আমার আত্মকেন্দ্রিক বলে। যে গল্প আপনার হৃদয়কে নাড়া দিতে জানে না, তাকে আমি গল্প ভাবতেই পারি না। ধরুন, আপনি গল্প পড়ছেন। কিন্তু সেখানে নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরেছেন খুব সহজেই। মানে, গল্পের সঙ্গে আপনার বাস্তব চরিত্রের কোনো তফাৎ নেই। হ্যাঁ, সেটিই একটি গল্পের সার্থকতা।

তেমনই এগারোটি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘এখানে কয়েকটি জীবন’ বইটি। কী নেই তার গল্পে? হাসি-কান্না, দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া, আশা-নিরাশা সবই আছে এখানে কয়েকটি জীবন বইতে। লেখক ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন গল্পজুড়ে জীবনের বিস্তার কতটা প্রকট। জীবনের বেদনা, সুখ সবই যেন লেখকের ভাষায় দৃষ্টিপাত হয়েছে।

বইয়ের প্রথম গল্প ‘জীবন’। একই শহরে বসবাস রিজিয়া-আনিস এবং ছুমাইয়া-বারেক দম্পতির। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! কেউ শত চেষ্টা করেও সন্তান পাচ্ছেন না। আবার কেউ টাকার অভাবে সন্তান বিক্রি করার পোস্টার লাগান ঢাকার অলিতে-গলিতে। তবে এই গল্পের শেষ পরিণতি পড়ে চোখের ভাঁজে চিলতে পানি উঁকি দিলেও ঠোঁটের কোণে ছিল তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা হাসি।

অন্যদিকে ‘সোনাবউ’কে না পাওয়ার বেদনায় ধূসর জীবনযাপন করছেন অনন্ত। মাঝে-মধ্যে পরিবারের মানুষ হিরো হলেও, এই গল্পে তারা কাল অভিশাপ মাত্র।

‘শাড়ি’ গল্পটি হৃদয় কেড়েছে। মায়ের জন্য ছেলের দেওয়া শাড়ি কতটা আবেগের তা কেবল সেই বোঝেন। যিনি এই ঘটনার সম্মুখীন হতে পেরেছেন। এই গল্পে খানিকটা আমাকে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার মা শাড়ি জড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। আর বাবার প্রফুল্ল ভাবটা স্বপ্নের সমান।

এদিকে ‘বিবস্ত্র’ গল্পে খুঁজে পাই সমাজের ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের কথা। তাদের নিয়ে আসলেই ভাবার যেন কেউ নেই। রুবি-সুজনরা জানে না তাদের জীবনের মানে। তবে প্রেম যে তাদের মাঝেও বিরাজমান। এই শহর সত্যিই কি তবে শকুনের শহর?

আমি সাধারণত একটি বই একটানা কখনো পড়ে শেষ করিনি। তবে লেখক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘এখানে কয়েকটি জীবন’ বইয়ের ‘জীবন’ গল্প থেকে শুরু করে ‘সোনাবউ’, ‘শাড়ি’, ‘বিবস্ত্র’, ‘দায়ী’, ‘জয়শ্রী’, ‘কুমারী’, ‘নাকফুল’, ‘কুকুর’, ‘গোলেয়া’ এবং ‘মিঠু’ সব কয়টিই পড়ে ফেলেছি।

লেখক তার লেখায় সাধারণ গল্পগুলো কতটা অসাধারণ করে তুলে ধরেছেন। গল্প যদি জীবনের কথা না বলে, মানুষের কথা না বলে তাহলে সেটিকে আমি কখনোই গল্প বলি না। এই লেখকের প্রতিটি লেখায় জীবনের ভাষা খুঁজে পেয়েছি।
লেখক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ নিজেকে মুক্ত রাখুক প্রতিটি পদে পদে। মুক্ত রাখুক তার লেখার প্রতিটি ভাষাকে। বাংলা বর্ণমালার প্রতিটি বর্ণ ফুটে উঠুক তার মুক্ত চিন্তা চেতনার লেখনিতে।

এমন লেখা আমরা সত্যিকার অর্থেই চাই। এমন গল্প ভিড় জমাক বাংলা একাডেমির অজস্র বইয়ের মলাটে মলাটে। তবেই না আমরাও হয়ে উঠতে পারবো অদম্য পাঠক। আমি বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়